জীবনের ওঠাপড়া নিয়ে স্পষ্ট প্রশ্ন-উত্তরে মুখোমুখি Mary Ann Gomes

Mary Ann Gomes

১৯৯৯-এ যখন অনূর্ধ্ব-১০ এশিয়ান ইয়ুথ দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন তখনও কেউ ভাবেনি এই মেয়ে একদিন বংলা তথা ভারতের নাম উজ্জ্বল করবে শুধু দাবা খেলেই। তবে সেই ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল তাঁর পরিবার। তার পর কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। হাতে উঠেছে মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টার, মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টারের শিরোপা। অল্পের জন্য বা বলা ভালো নিজের গাফিলতির জন্যই হাতছাড়া হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল মাস্টারের তকমা। তবে এখন আর তা নিয়ে আফসোস করেন না মেরি আন গোমস। বরং চালিয়ে যেতে চান খেলা। তাঁর প্রজন্মের অনেকেই খেলার সঙ্গে সঙ্গে কোচিংয়ের দুনিয়াতেও পা রেখেছেন, তবে তিনি এখনই তা নিয়ে ভাবতে চান না। বরং এভাবেই খেলে যেতে চান যতদিন পারবেন। আর সেই লক্ষ্যেই হাজির হয়েছেন দুর্গাপুরে মহিলা জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে। খেলতে নামার আগের দিন মন খুলে কথা বললেন দাবাড়ু মেরি (Mary Ann Gomes)।

মহিলা ন্যাশনালস খেলতে নামার আগে মেরি জানিয়ে দিলেন একজন দাবাড়ুর জন্য এই টুর্নামেন্ট কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বলছিলেন, “এটা এমন একটা প্ল্যাটফর্ম যেখানে খেলে দাবাড়ুরাা বড় প্ল্যাটফর্মের স্বপ্ন দেখে।এবার যদি এই ন্যাশনালস জেতা যায় তাহলে খুলে যাবে বিশ্বকাপের দরজা, এর থেকে বড় প্ল্যাটফর্ম আর কী হতে পারে। যেখানে খেলে বিশ্বের সেরাদের মুখোমুখি হতে পারবে একজন, বিশ্ব দাবায় নিজের পরিচিত করাতে পারবে, এর থেকে বড় লক্ষ্য আর কী বা থাকতে পারে।”


এর পাশাপাশি তিনি এও বলেন, “শুধু বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করা নয়, ন্যাশনালস নিজেও একটা বড় টুর্নামেন্ট। যেখানে ভারতের অনেক বড় দাবাড়ুরা খেলেন যাঁরা বিশ্ব দাবায় ভালো করছেন। সেখানে যদি একজন বড় প্লেয়ারের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পাওয়া যায় বা সেখানে ভালো পারফর্ম করা বা জেতা যায় তাহলে নিজেকেও মেপে নেওয়া যায় যে তুমি সঠিক রাস্তায় হাঁটছো কিনা।”

তবে তাঁর কেরিয়ারর সব থেকে মজার বিষয় হল তাঁর আইএম মানে ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার হয়েও না হওয়ার কাহিনি। আসলে মজা নয়, বরং এটা অনেকটাই যন্ত্রণার। এত বছর পড়ে এসে হেসে সেই ঘটনার কথা বললেও, মনের কোণায় যে কোথাও যন্ত্রণা নেই সেটা মনে হয় জোর গলায় অস্বীকার করতে পারবেন না বাাংলার এই দাবাড়ু। সব আইএম নর্ম রেটিং নিয়েও কেন তিনি আন্তর্জাতিক মাস্টার নন, সেটা বলতে গিয়ে নিজেই হেসে ফেললেন মেরি। বলছিলেন, “২০১১-তে আমি আমার সব নর্ম পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি অপেক্ষা করছিলাম রেটিংয়ের জন্য। ২০১৩-এর এপ্রিলে সেটাও পেয়ে যাই। তার পর সেটা নিচ্ছি, নেব করে আর নেওয়া হয়নি কারণ তখন আমি আমার টুর্নামেন্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। সেই সময় কিছু একটা হয়েছিল।”

এবার আবার ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে খেলবেন মেরি। যদিও এই টুর্নামেন্ট জেতার হ্যাটট্রিক রয়েছে তাঁর দখলে। সেটা নিজেই মনে করিয়ে দিলেন। ২০১১, ২০১২ ও ২০১৩-র ন্যাশনাল গেমস চ্যাাম্পিয়ন তিনিই। তার আগেই জুনিয়র পর্যায়েও তাঁর হ্যাটট্রিক রয়েছে। তিনি এশিয়ান জুনিয়র অনূর্ধ্ব-২০ জিতেছিলেন পর পর তিন বছর ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮-এ। ২০০৮-এই মহিলা গ্র্যান্ডমাস্টারের শিরোপাও জিতে নেন তিনি। ২০১৩-র জুলাইয়ে কেরিয়ারের সেরা রেটিং ২৪২৩-এ পৌঁছেছিলেন মেরি। তাঁর কেরিয়ারের গোল্ডেন সময় বলা যেতে পারে ২০১৩ পর্যন্ত।

তবে এখনও জয়ের খিদেটা একই রয়েছে। ২০১৩-তে শেষ মহিলা ন্যাশনালস জিতেছিলেন মেরি। ১২ বছর পরেও সেই একই ইভেন্ট জিততে চান তিনি, উজার করে দিতে চান নিজেকে। আসল লক্ষ্য ভালো পারফর্ম করা। কারণ তিনি জানেন বেশ কিছু ভালো দাবাড়ু এবার খেলবেন এই ইভেন্টে। সব থেকে কঠিন প্রতিপক্ষ বেছে নিতে বললে অবশ্য কিছুটা অস্বস্তিতেই পড়লেন তিনি। তবুও তাঁর তালিকায় রয়েছেন নন্ধিধা, শৃজার মতো প্রতিভারা। তিনি এও বিশ্বাস করেন, সব টুর্নামেন্ট থেকেই নতুন নতুন প্রতিভা উঠে আসে। তবে বাংলায় যেভাবে শুরু হয় সেভাবে শেষ পর্যন্ত অনেকেই টেনে নিয়ে যেতে পারেন না। মেরি মনে করেন, তার পিছনে অবশ্যই কারণ রয়েছে।

বলছিলেন, “এখানে এমনটা হয় তার পিছনে সব থেকে বড় কারণ একজন বাচ্চার উপর এক সঙ্গে সব কিছুতে ভালো করার চাপ থাকে। খেলতে হবে, পড়াশোনা করতে হবে। পরীক্ষার সময় খেলা ছেড়ে পড়ায় মন দিতে হবে। সারাক্ষণ দেশে, বিদেশে খেলে বেড়ানো সম্ভব হয় না। এখন দেখা যাচ্ছে খুব অল্প বয়সে গ্র্যান্ডমাস্টার হচ্ছে, কারণ তারা সারাক্ষণ খেলছে। তার সঙ্গে সব থেকে বড় বিষয় হল টাকা, যেটা কলকাতায় নেই। আরও স্পনসর চাই এখানে। যেমন আমি পেয়েছি। তুমি যদি ইউরোপে থেকে সেখানে কয়েক বছর খেলা চালিয়ে যেতে পার তাহলে পার্থক্যটা বোঝা যাবে। অনেকে সেটা করে সফল। আসলে দরকার সঠিক পরিকাঠামো।”

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবর

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle