সুস্থ হয়ে উঠুক অনির্বাণ, সুস্থ হোক মানসিকতাও

সুস্থ হয়ে উঠুক অনির্বাণঅনির্বাণ কংসবনিক। ছবি: ইবিআরপি-র ফেসবুক।

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: সুস্থ হয়ে উঠুক অনির্বাণ । বুধবার রাতে খবর এল, অনির্বাণের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তার আগেই হাসপাতালে গিয়ে এই সমর্থকের যাবতীয় চিকিৎসার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার। জানিয়ে দিয়েছেন পাশে আছে ক্লাব। তার আগেই মাঠে নেমে পড়েছিল ইস্টবেঙ্গল দ্য রিয়েল পাওয়ার। তাদের আবেদনে সাড়া দিয়েছে প্রচুর মানুষ। এখানেই জয় অনির্বাণের, এখানেই জয় ইবিআরপি-র।

এভাবেই সমর্থকদের পাশে থেকে এসেছে ক্লাব, সমর্থকরা। তা বলে মাঠের হার-জিতের প্রভাব এ ভাবে এসে পড়বে মাঠের বাইরে! অতীতে বার বার কলকাতা ময়দান এ বার বার রক্তাক্ত হয়েছে। কবে মিটবে ফুটবল মাঠের এই হানাহানি। প্রশ্নটা আরও একবার উঠে গেল অনির্বাণের এই অবস্থা দেখে।

ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান তো বেঁচে ওদের জন্যই। এই ফ্যানরাই তো বাঁচিয়ে রেখেছে এই দুই ক্লাবকে। তাঁরাই যদি একে অপরকে না দেখেন তা হলে কোথায় আপনারা ফুটবলপ্রেমী? ফুটবলপ্রেম এমন হয় নাকি? প্রতিপক্ষের সমর্থকের রক্ত ঝরিয়ে এ কেমন ফুটবলপ্রেম?

ইস্টবেঙ্গল কি আইএসএল খেলতে পারবে?

সেদিন বারাসত স্টেডিয়ামে ছিল আইএফএ শিল্ডের ফাইনাল। আগের মতো সেই ক্রেজ কোথায় এখন শিল্ডের!ছোটরা খেলে। কোনও তারকা নেই। তবুও এ বার ফাইনাল ছিল ছোটদের ডার্বি। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের সেই ছোটদেরই সমর্থন করতে মাঠ ভরিয়েছিলেন সমর্থকরা।তারিখটা ১৯ জুলাই, ২০১৮। আরও পাঁচটা ডার্বির সকালের মতোই ছিল সেই সকাল। সকাল থেকেই দু’পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সাজ সাজ রব।

সেই তালিকায় ছিলেন হিন্দমোটরের বাসিন্দা অনির্বাণ কংসবণিকও। বাঙালির চির আবেগের ম্যাচে যে সেদিন মোহনবাগানের বিরুদ্ধে আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে মাঠে নেমেছিল ইস্টবেঙ্গল। হোক না ছোটদের ডার্বি, তাতে কি! ম্যাচটা যখন লাল-হলুদ বনাম সবুজ-মেরুনের, তখন কি আর প্রস্তুতির কোনও অভাব থাকলে চলে!

এই ফুটবলকে ঘিরেই বাঁচে ওরা। সেই ফুটবলই যদি জীবন সংশয়ের কারণ হয়ে যায় তা হলে কোথায় যাবে ওরা? আবেগ, ভালবাসা, ক্লাব-প্রেম কোনও কিছুই তো আর ফুটবলের ঊর্ধে নয়। এরকমও তো দেখা যায় ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান সমর্থকরা ম্যাচ শেষে গলা জড়িয়ে বেরোচ্ছে। তা হলে এই অবস্থা কেন হল অনির্বাণের? এর পর তো বাবা-মায়েরা ছেলেদের মাঠে যেতে দিতে ভয় পাবে। যে ভয় অতীতেও অনেকের ঘুম কেড়ে নিত। অনেকের জীবনও কেড়ে নিয়েছে। এই ছবি কবে বদলাবে?

ছবি সৌজন্য ইবিআরপি-র ফেসবুক।

সেদিন সকালে অনির্বাণ বাড়িতে বলে গিয়েছিলেন, ‘‘আজ শিল্ড জিতেই বাড়ি ফিরব।’’ ইস্টবেঙ্গল জিতেছে। সুস্থ শরীরে হাসতে হাসতে বাড়ি থেকে বেরনো অনির্বান বাড়ি ফিরেছিলেন মাথায় পাঁচটা সেলাই নিয়ে। কিন্তু তা যে এতটা গুরুতর আকাড় নেবে কেউই বুঝতে পারেননি। কত তো এমন হয়। কিন্তু সোমবার রাত থেকে অবস্থার অবনতি ঘটে অনির্বাণের। বড় নার্সিংহোমে রাখার ক্ষমতা ছিল না পরিবারের। মাথায় হাত পড়ে অনির্বাণের বাবার।

অত টাকা কোথায়? তখন এগিয়ে আসে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরাই। ফ্যানস ক্লাব ইস্টবেঙ্গল দ্য রিয়েল পাওয়ারের উদ্যোগে কয়েক ঘণ্টায় উঠল লাখের উপর টাকা। শুধু ইস্টবেঙ্গল নয় মোহনবাগান সমর্থকরাও পাশে দাড়ালেন। এটাই আসলে ফুটবলপ্রেম। মঙ্গলবার দুপুর থেকেই বিভিন্ন হোয়াটস্যাপ এবং ফেসবুকের গ্রুপে অনির্বাণের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে শুরু করেন তাঁরা। অনেকেই সাড়া দেয় তাতে। বুধবার ক্লাব পাশে দাঁড়ানোয় অনেকটাই স্বস্তি এসেছে। এখন শুধু প্রার্থনা, দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক অনির্বাণ।

কিন্তু মাঠ? ডার্বি? পারবেন তো অনির্বাণের মা ছেলেকে ছেড়ে দিতে?