জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: উত্তেজনায় ঠাসা লড়াইয়ের শেষে পেনাল্টি শুট আউটে নিষ্পত্তি হল হিরো আইএসএলের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের। শেষ পর্যন্ত মেহতাব সিংয়ের শট আটকে দিয়ে জয় ছিনিয়ে নেন বেঙ্গালুরু এফসি-র গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু এবং তাঁর এই অসাধারণ সেভের সঙ্গে বেঙ্গালুরু এফসি পৌঁছে যায় চলতি হিরো আইএসএলের ফাইনালে।
আগামী শনিবার ফতোরদার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে সুনীল ছেত্রীর দল খেলবে অপর সেমিফাইনালের দুই দল এটিকে মোহনবাগান অথবা হায়দরাবাদ এফসি-র মধ্যে কোনও এক দলের বিরুদ্ধে। এই নিয়ে তৃতীয়বার হির আইএসএলের ফাইনালে উঠল বেঙ্গালুরু এফসি। আগের দুবারের মধ্যে একবার চ্যাম্পিয়ন ও একবার রানার্স আপ হয় তারা। চলতি মরসুমের শুরুতে ডুরান্ড কাপেও চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। ফাইনালে এই মুম্বই সিটি এফসি-কেই হারায় তারা। এ বার হিরো আইএসএলেরও খেতাবের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তারা।
রবিবার বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনায় ভরপুর দ্বিতীয় সেমিপাইনালের দ্বিতীয় লেগের নির্ধারিত নব্বই মিনিটে মুম্বই সিটি এফসি ২-১-এ এগিয়ে থাকলেও প্রথম লেগে বেঙ্গালুরু ১-০-য় জিতে থাকায় মোট গোলের ব্যবধান দাঁড়ায় ২-২।
অতিরিক্ত সময়ের দুই অর্ধে কোনও গোল না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শুট আউট পর্যন্ত। সেখানেও নির্ধারিত পাঁচটি করে শটের সবক’টিতেই গোল করে দুই দল। এর পরে সাডেন ডেথ শুরু হলে নবম রাউন্ডে মুম্বই সিটি এফসি-র ডিফেন্ডার মেহতাব সিং-এর শট বাঁচান গুরপ্রীত। বেঙ্গালুরুর ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্গন তাদের নবম রাউন্ডের শট জালে জড়াতেই উল্লাসে ফেটে পড়েন বেঙ্গালুরুর সমর্থকেরা। পেনাল্টি শুট আউটে ফল হয় ৯-৮।
চলতি হিরো আইএসএল ২০২২-২৩-এর অন্যতম সেরা ম্যাচটি এ দিন দেখলেন ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা। এদিন প্রথম মিনিট থেকে ১২০তম মিনিট পর্যন্ত দুই দলই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে। ২২ মিনিটের মাথায় শিবশক্তি নারায়ণের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে বেঙ্গালুরু এফসি-কে এগিয়ে দেন হাভিয়ে হার্নান্ডেজ। ৩০ মিনিটের মাথায় রাওলিন বোর্জেসের গোলমুখী শট গুরপ্রীতের গায়ে লেগে ফিরে এলে সেই বল জালে জড়িয়ে দিয়ে মুম্বই এফসি-র পক্ষে সমতা আনেন বিপিন সিং। প্রথমার্ধ ১-১ থাকার পরে দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের ৬৬ মিনিটের মাথায় গ্রেগ স্টুয়ার্টের কর্নারে উড়ে আসা বলে হেড করে দলকে এগিয়ে দেন মেহতাব সিং।
কিন্তু ফাইনালে ওঠার জন্য তখন দুই দলেরই প্রয়োজন ছিল আরও এক গোল, যা অতিরিক্ত সময়েও করতে পারেনি কেউই। টাইব্রেকারে প্রথম পাঁচটি শটে মুম্বইয়ের হয়ে পরপর হয়ে গোল করেন গ্রেগ স্টুয়ার্ট, জর্জ পেরেইরা দিয়াজ, ছাঙতে, আহমেদ জাহু ও রাহুল ভেকে। বেঙ্গালুরুর হয়ে গোল করেন হাভিয়ে হার্নান্ডেজ, রয় কৃষ্ণা, অ্যালান কোস্টা, সুনীল ছেত্রী ও পাবলো পেরেস।
টাই ব্রেকার ৫-৫-এ শেষ হওয়ায় শুরু হয় সাডেন ডেথ এবং মুম্বইয়ের বিক্রম প্রতাপ সিং, মুর্তাদা ফল ও বিনীত রাইয়ের গোলের উপযুক্ত জবাব দেন প্রবীর দাস, রোহিত কুমার ও সুরেশ সিং (৮-৮)। কিন্তু এর পরই মুম্বইয়ের ছন্দপতন ঘটে মেহতাব সিংয়ের শট গুরপ্রীত বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আটকে দেওয়ায়। সব শেষে বেঙ্গালুরুর শেষ শটে গোল করতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি সন্দেশ ঝিঙ্গন। এ দিন প্রথমার্ধে মুম্বই সিটি এফসি পেনাল্টি পেলেও গ্রেগ স্টুয়ার্টের শট আটকে দেন গুরপ্রীত। স্বাভাবিক ভাবেই তিনিই এ দিন ম্যাচের নায়কের সন্মান জিতে নেন।
দুই দলের মধ্যেই এ দিন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। সমানে সমানে এ রকম লড়াই এ বারের হিরো আইএসএলে আর দেখা গিয়েছে বলে মনে হয় না। দুই দলই আটটি করে শট গোলে রাখে এদিন। বল দখলে (৩৯-৬১) ও পাসিংয়ে বেঙ্গালুরু অবশ্য পিছিয়েই ছিল। মুম্বই সিটি এফসি যেখানে ৬৭০টি পাস খেলে, সেখানে ৩৩২টি পাস খেলেন সুনীল ছেত্রীরা। দুই গোলকিপারকেও এ দিন কড়া পরীক্ষার সামনে পড়তে হয়। ১২০ মিনিটের লড়াইয়ে গুরপ্রীত যেখানে ছ’টি সেভ করেন, সেখানে মুম্বইয়ের গোলকিপার ফুর্বা লাচেনপা সাতটি প্রায় অবধারিত গোল বাঁচান।
আক্রমণেও মুম্বইয়ের ফুটবলাররা ছিলেন কিছুটা এগিয়ে। ১১টি গোলের সুযোগ তৈরি করেন তাঁরা। গ্রেগ স্টুয়ার্ট একাই পাঁচটি সুযোগ তৈরি করেন। বেঙ্গালুরুর রয় কৃষ্ণা, শিবশক্তিরা ছ’টি গোলের সুযোগ তৈরি করেন। ম্যাচের শেষ শটের আগে পর্যন্ত কেউ বুঝতে পারেনি কারা ফাইনালে খেলতে চলেছে। কিন্তু ঘরের মাঠে শেষ হাসি হাসেন রয় কৃষ্ণারাই।
(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google