জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: কলকাতা লিগে বেটিং চক্র । ঠিক কত বছর আগের ঘটনা মনে পড়ছে না। কিন্তু এমনই এক গড়াপেটায় নাম জড়িয়ে গিয়েছিল কলকাতা ফুটবল লিগের। সারা জীবনের জন্য নির্বাসিত হয়ে কেরিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল কুমারেশ ভাওয়ালের। সে বার কলকাতা লিগের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ইস্টার্ণ রেল ও পোর্ট ট্রাস্ট। পোর্ট ট্রাস্টের কোচ ছিলেন ময়দানের ভদ্রলোক বলে খ্যাত অলোক মুখোপাধ্যায়। শেষ ম্যাচটি ছিল মহমেডান গ্রাউন্ডে। তখনও কলকাতা ময়দানের মাঠে ফ্লাড লাইট বসেনি। খেলা শেষ হতে হতে অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। শেষের দিকে দেখাই যাচ্ছিল না মাঠে কী হচ্ছে। তার মধ্যেই চলছিল খেলা।
সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার লক্ষ্যে দু’গো পিছনে ছিলেন সুজিত দে। অলোক মুখোপাধ্যায় জানতেন না তাঁর অজান্তে তাঁরই দলের স্ট্রাইকার সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার লক্ষ্যে অন্য এক খেলা সাজিয়ে রেখেছিল। সেই ম্যাচ পোর্ট ট্রাস্ট জিতেছিল ২-০ গোলে। গোল করেছিলেন সুজিত। সেই ঘটনায় নাম জড়িয়ে গিয়েছিল মোহনবাগানের কুমারেশ ভাওয়ালের। কেরিয়ারের শেষ পর্যায় এসে আজীবন নির্বাসিত হয়েছিলেন সেই ফুটবলার।
এই দুই ফুটবলারের খবর আর কেউ রাখেনি। কিন্তু হঠাৎই কলকাতা ময়দানে ফিরে এল সেই স্মৃতি। এ বার এই বেটিং নাটকের মুখ্য চরিত্রে ফুটবলার সুরজ মণ্ডল। নাটের গুরু হিসেবে উঠে আসছে তাঁরই নাম। অভিযোগের সব তীর এই ফুটবলারের দিকেই। বৃহস্পতিবার আইএফএ-র শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সামনে হাজির হয়েছিলেন সূরজ মণ্ডল। সেখানেই প্রমাণ ও প্রশ্নের চাপে তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন যে পুরো ঘটনাটাই ঘটিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি নাকি সেটা মজা করেই বলেছিলেন।
ঘটনাটা বেশ কয়েক দিন আগের। টালিগঞ্জ অগ্রগামীর গোলকিপার শুভম রায় অভিযোগ করেন, তাঁকে ফোন করে সুরজ মণ্ডল বলেছেন পাঠচক্রের বিরুদ্ধে ম্যাচের ৭৫ মিনিটে তাঁকে একটা গোল খেতে হবে। আর তা হলেই তাঁর হাতে চলে আসবে এক লাখ টাকা। কিন্তু এত টাকার লোভ শুভমকে টলাতে পারেনি। তিনি ফুটবল ভালবেসে সেই টাকা ফিরিয়ে দেন। এবং পুরো কথোপকথনটা রেকর্ড করে রাখেন। তা জমা পড়ে আইএফএ-এর কাছে। বৃহস্পতিবার সেই অডিও সুরজ মণ্ডলকে শোনানো হলে তিনি তা অস্বীকার করেন। দ্বিতীয়বার আবার তাঁকে শোনানো হলে তিনি বলেন, এটা তাঁরই গলা কিন্তু তিনি শুভমের সঙ্গে মজা করেছিলেন।
সেই অডিওতে শোনা যাচ্ছে, শুভমকে মানাতে সুরজ বলছেন, ‘‘তোর কোনও ভয় নেই। তোর নাম কেউ জানতে পারবে না। রাকেশ মাসি চার বছর ধরে করছে। দীপক মণ্ডলও আছে এর মধ্যে।’’ কিন্তু মানেনি শুভম। বৃহস্পতিবার আইএফএ-র তরফে এই তদন্তের ভার তুলে দেওয়া হয় সুইৎজারল্যান্ডের সংস্থা ‘স্পোর্টস র্যাডার’এর হাতে। বিশ্ব খ্যাত এই সংস্থা তদন্ত শেষ করা পর্যন্ত সুরজ মণ্ডলকে ফুটবল থেকে নির্বাসিত করেছে আইএফএ-র শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি।
দীপক মণ্ডলকে ফোনে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘‘সুরজ কী ভাবে আমার নাম জড়িয়ে দিল আমি ভাবতেই পারছি না। ওকে তার পর থেকে অনেকবার ফোন করেছি কিন্তু পাইনি। আমাকে এখনও কেউ ডাকেনি। ডাকলে আমার কথা নিশ্চই জানাব।’’ এ দিন সুরজ মণ্ডলের সঙ্গে রাকেশ মাসি ও শুভম রায়কেও ডাকা হয়েছিল। দীপক মণ্ডলকেও ডাকা হবে বলে জানা গিয়েছে আইএফএ-র তরফে।