সন্ত্রাসী হানা ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে, অল্পের জন্য রক্ষা তামিমদের

জঙ্গি হানা ক্রাইস্টচার্চের মসজিদেবাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্লেয়াররা।

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: সন্ত্রাসী হানা ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে, পরিস্থিতি যা ছিল, তাতে গোটা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলটাই শেষ হয়ে যেতে পারত। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে জঙ্গি হানায় অল্পেরে জন্য বেঁচে যান সফররত বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা।

তখন নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় সময় দুপুর ১টা। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল হেগলে ওভালে এসেছে অনুশীলনের জন্য। আকাশ মেঘলা, বৃষ্টি নামা সময়ের অপেক্ষা। বাংলাদেশ দল ঠিক করে, কাছেই ডিনসঅ্যাভিনিউয়ের নুর মসজিদে গিয়ে আগে নমাজ পড়ে আসবে। তারপর অনুশীলন করবে। আগের রাতে অবশ্য ঠিক হয়, লিঙ্কন ইউনিভার্সিটিতে ইন্ডোর ট্রেনিং করবে বাংলাদেশ দল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ঠিকহয়, অত দূরে না গিয়ে হেগলে ওভালেই অনুশীলন করবে তারা।

ততক্ষণে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লা ৯ মিনিটের সাংবাদিক সম্মেলন করে তড়িঘড়ি যোগ দিয়েছেন বাকি দলের সঙ্গে। ম্যানেজার খালেদ মাসুদ, টিম অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরন এবং ম্যাসিওরমহম্মদ সোহেলকে নিয়ে ১৭ জনের বাংলাদেশ ক্রিকেট দল টিম বাসে রওনা হয়েছে মসজিদের দিকে। ঘড়িতে তখন ১টা ৩৫।

এর ঠিক মিনিট কুড়ি পর নিউজিল্যান্ড সিরিজ কভার করতে আসা বাংলাদেশি সাংবাদিক মহম্মদ ইসলামের ফোন বেজে ওঠে। ওপারে তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের এই দলের সবথেকে সিনিয়র ক্রিকেটারহাঁপাতে হাঁপাতে বলছেন, ‘‌এখানে গুলি চলছে। প্লিজ আমাদের বাঁচান।’‌

হ্যাঁ, বেঁচে গেছেন তামিম, মাহমুদুল্লারা নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে জোড়া জঙ্গি হানায় যেখানে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, সেখানে অল্পের জন্য প্রাণ হাতে করে ফিরেছে গোটা বাংলাদেশ দল।

ওই সাংবাদিক প্রথমে ভেবেছিলেন তামিম হয়ত মজা করছেন, ভয় দেখাচ্ছেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আবার ফোন করেন তামিম। কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন, ‘‌পুলিসে খবর দিন। মসজিদের ভেতরে গুলিচলছে। একটু আগে পৌঁছলেই আমরা ভেতরে ঢুকে যেতাম।’‌ জানা যায়, মধ্যাহ্নভোজ সারতে দেরি হওয়ায় তাঁদের গোটা সূচিটাই একটু পিছিয়ে যায়। সেই দেরিটাই শেষ পর্যন্ত বাঁচিয়ে দেয় বাংলাদেশক্রিকেট দলকে।

বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাসুদ গোটা ঘটনার বর্ণনা দেন। টিম হোটেলে সাংবাদিকদের তিনি সবার আগে জানিয়ে দেন, এই পরিস্থিতিতে তৃতীয় তথা শেষ টেস্ট ম্যাচ হচ্ছে না। এরপর বলেন, ‘‌আমরা ১৭ জন টিম বাসে ছিলাম। শুধু দুজন প্লেয়ার লিটন দাস, নইম হাসান এবং স্পিন বোলিং কোচ সুনীল যোশি হোটেলে থেকে যায়। আমরা তখন মসজিদ থেকে ৫০ গজ দূরে। আমরা তিন–‌চার মিনিটআগে পৌঁছলে হয়ত মসজিদের ভেতরে থাকতাম। আর সেটা হলে হয়ত আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারত। কিন্তু যা দেখলাম, তা শুধু সিনেমায় দেখা যায়।’‌

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

কী দেখলেন, সেটা জানিয়ে মাসুদ বলেন, ‘‌আমরা প্রথমে দেখি রক্তে মাখামাখি অবস্থায় মানুষ মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসছেন। এরপর প্রায় মিনিট দশেক আমরা বাসের সিটের তলায় ঢুকে গিয়েছিলাম।ভেবেছিলাম যদি আমাদের বাস লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। কিন্তু এরপর মনে হল, যদি ওরা একবার বুঝতে পারে, এটা কাদের বাস, তাহলে আরও বেশি ক্ষতি করার জন্য সব ছেড়ে আমাদের বাসের ওপরহামলা করবে। তাই ঠিক করলাম পেছনের গেট দিয়ে সবাই বেরিয়ে যাব। প্রথমে আমাদের বাস থেকে নামতে বারণ করা হয়। কিছুক্ষণ পরে আমরা দৌড়ে হেগলে পার্কের ভেতর দিয়ে মাঠে চলে আসি।সেখান থেকে হোটেলে।’‌

মুম্বইয়ের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরন এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টিম অ্যানালিস্ট। তিনিও টিম বাসে ছিলেন। বলেন, ‘‌তখন আমরা মসজিদ থেকে কয়েক মিটার দূরে। হঠাৎ গুলিরশব্দ শুনতে পাই। আমরা কেউই বুঝতে পারিনি, কী হচ্ছে। হঠাৎ দেখি, একজন মহিলা রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। ভেবেছিলাম উনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ক্রিকেটারদের কয়েকজন বাস থেকেনেমে তাঁকে সাহায্য করতে যাচ্ছিল। কিন্তু তার পরই দেখি, লোকজন উদ্ভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করছে। চারদিকে রক্ত। আমাদের বলা হল, চিৎকার না করে বাসের মেঝেতে শুয়ে পড়তে। তারপর জানলাম, ঠিক কী ঘটেছে।’‌

বাসের পেছনের দরজা দিয়ে গোটা দলকে নামিয়ে পার্কের ভিতর দিয়ে হেগলে ওভালে নিয়ে যাওয়া হয় প্রথমে ড্রেসিংরুমে নিয়ে গিয়ে প্লেয়ারদের বসানো হয়। তার পর সবাইকে হেডলি প্যাভিলিয়নে নিয়ে যাওয়া হয়।সেখানে নিউজিল্যান্ড বোর্ডের কর্তারাও ছিলেন।তাঁরা বাংলাদেশ বোর্ডের কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আশ্বস্ত করেন, দলের সবাই সুরক্ষিত আছেন।এরপর সবাইকে ক্যাথিড্রাল স্ট্রিটেরহোটেলে পৌঁছে দেওয়া হয়।