জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: কার্যত দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে ভারতীয় নৌসেনাকে ২-০-য় হারাল এটিকে মোহনবাগান। ডুরান্ড কাপের (Durand Cup 2022) গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় জয়ের ফলে নক-আউট পর্বের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেলেও তাদের অপেক্ষা করতে হবে রাজস্থান ইউনাইটেডের শেষ ম্যাচের ফলের জন্য। আগামী সোমবার ওই ম্যাচে রাজস্থান এই নৌসেনাকেই হারালে আর তাদের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা হবে না।
বুধবার কলকাতার কিশোরভারতী ক্রীড়াঙ্গনে কিয়ান নাসিরি ও লেনি রড্রিগেজের গোলে জেতে সবুজ-মেরুন বাহিনী। দু’টি গোলই হয় প্রথমার্ধে। তবে গোলের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত। তরুণ ফরোয়ার্ড ফারদিন আলি মোল্লা এ দিন প্রথম এগারোয় সুযোগ পেয়ে নিজেকে দারুন ভাবে মেলে ধরেন। দু’টি গোলেই ‘অ্যাসিস্ট’ করেন তিনি। এ ছাড়াও নিজে জোড়া গোল পেতে পারতেন। তবে দু’টি সুযোগই হাতছাড়া করেন তিনি। দলের রিজার্ভ বেঞ্চের দক্ষতা এ দিন ভাল ভাবেই পরখ করে নিলেন দলের স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো এবং কোচকে খুশি করার মতো ফুটবলই খেলেছেন তাঁরা।
জিততেই হবে, এমন পরিস্থিতিতে মাঠে নামলেও ডার্বির প্রথম এগারোয় থাকা আটজন ফুটবলারকে বাইরে রেখে এ দিন দল নামান এটিকে মোহনবাগান কোচ হুয়ান ফেরান্দো। রক্ষণে সুমিত রাঠি, রবি রাণা, মাঝমাঠে লালরিনলিয়ানা হ্নামতে, অভিষেক সূর্যবংশী ও আক্রমণে ফারদিন, কিয়ানের মতো তরুণদের ওপর আস্থা রাখেন তিনি। প্রথম এগারোয় কোনও বিদেশি না রাখার ঝুঁকিও নেন ফেরান্দো। সারা ম্যাচে কোনও বিদেশিকে নামাননি তিনি। এই আস্থার দামও তাঁরা দিয়েছেন।
প্রথম ১৫ মিনিটে দু’পক্ষই একে অপরকে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করে। কোনও দলকেই বেশি আক্রমণাত্মক হতে দেখা যায়নি। এর মধ্যেই অবশ্য দু-একবার আক্রমণে ওঠেন তরুণ ফরোয়ার্ড জুটি ফারদিন-কিয়ান। ফারদিন দু-দু’বার গোলের সামনে পৌঁছেও অফ সাইডের ফাঁদে পড়ে যান।
মাঝমাঠ থেকে এ দিন কিছুটা উঠে খেলার প্রবণতা দেখা যায় অভিজ্ঞ লেনি রড্রিগেজের মধ্যে। ১৮ মিনিটের মাথায় তাঁরই অসাধারণ গোলেই এগিয়ে যায় এটিকে মোহনবাগান। বক্সের মধ্যে ফারদিনের পাস থেকে যখন বাঁ পায়ে গোলে শট নেন, তখন তাঁকে জনা পাঁচেক ডিফেন্ডার ঘিরে ধরেন। কিন্তু তাঁরা লেনিকে আটকাতে পারেননি (১-০)।
গোলের চার মিনিট পরেই বক্সের বাইরে থেকে ফের সোজা গোলে শট নেন লেনি। কিন্তু নৌসেনা দলের গোলকিপার বিষ্ণু বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে প্রায় অবধারিত গোল বাঁচান। দ্বিতীয় গোলের জন্য অবশ্য বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি সবুজ-মেরুন শিবিরকে। ২৮ মিনিটের মাথায় কিয়ান দলকে দ্বিতীয় গোল এনে দেন।
এ বারেও ফারদিনের পাস থেকেই গোল হয়। বক্সের বাইরে থেকে তিনি ফরোয়ার্ড পাস দেন বক্সে থাকা কিয়ানকে। তাঁকে একাধিক ডিফেন্ডার পিছন থেকে বাধা দিলেও সামনে ছিলেন শুধু গোলকিপার বিষ্ণু, যাঁর বাঁদিক দিক দিয়ে বল গোলে ঠেলে দেন তরুণ ফরেয়ার্ড (২-০)।
ম্যাচের বয়স যত বাড়ছিল, তত ধারালো হয়ে ওঠে কিয়ানের গতিবিধি। সবুজ-মেরুন বাহিনীও ক্রমশ আধিপত্য বিস্তার করা শুরু করে। কিন্তু অল আউট যেতে গিয়ে প্রায়ই রক্ষণ পুরো ফাঁকা হয়ে যাচ্ছিল এটিকে মোহনবাগানের।
এমনই এক সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৩৬ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসা বল নিয়ে শ্রেয়স একাই বক্সের মাথা থেকে শট নেন, যা বারের সামান্য ওপর দিয়ে উড়ে যায়। পরের মিনিটেই ফের বক্সের মধ্যে চমৎকার থ্রু পেয়ে যান সেই শ্রেয়স। এ বার ঝাঁপিয়ে পড়ে বলের দখল নেন বিশাল। প্রথম ৪৫ মিনিটে কোনও শটই গোলে রাখতে পারেনি নৌসেনা। দ্বিতীয়ার্ধে তাঁরা দু’টি শট গোলে রাখে। অন্য দিকে, এটিকে মোহনবাগান সারা ম্যাচে ছ’টি গোলমুখী শট নেয়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোলকিপার বদলে অর্শ আনোয়ারকে নামানোর পাশাপাশি আর এক তরুণ মিডফিল্ডার রিকি সাবংকে নামান ফেরান্দো। বিশাল ও প্রীতমকে বিশ্রাম দেওয়া হয়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই নৌসেনা চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করলেও প্রতি আক্রমণে গোলের সুযোগ তৈরি করে নেন ফারদিন, রিকিরা। ফারদিনের পাস পেয়ে রিকি দূরপাল্লার শট নিলে তা বারে লেগে ফিরে আসে।
এর দু’মিনিট পরে ফের বক্সের বাইরে থেকে গোলে জোরালো শট নেন ফারদিন, যা গোলকিপার বিষ্ণুর হাত ছুঁয়ে বারে লাগে। এ দিন তরুণ ফারদিন সুযোগ পেয়ে তা ভরপুর কাজে লাগান ও নিজেকে প্রমাণ করেন। ৫৫ মিনিটের মাথায় ডান দিক থেকে ওঠা মনবীরের ক্রস দ্বিতীয় পোস্টে ঠিকমতো পা লাগাতে পারলে তিনি গোল পেতেন। কিন্তু সে বল পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়। ৬৩ মিনিটের মাথায় ফারদিনকে তুলে নিয়ে আর এক তরুণ মিডফিল্ডার ইঙ্গসন সিংকে নামানো হয়।
নৌসেনা অসাধারণ একটি গোলের সুযোগ পেয়ে যায় ৬৫ মিনিটের মাথায়, যখন বক্সের মধ্যে প্রায় ওয়ান টু ওয়ান অবস্থায় সুযোগ পেয়ে যান ফরোয়ার্ড বিবেক থাপা। কিন্তু তাঁর শট কোনও রকমে বাঁচিয়ে দেন অর্শ আনোয়ার।
প্রতিপক্ষ ক্রমশ গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে দেখে ফেরান্দো নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার কুড়ি মিনিট আগে শুভাশিস বোসকে নামান দীপক টাঙরির জায়গায়। অবশ্যই রক্ষণকে আরও আঁটোসাঁটো করার জন্য। অধিনায়কের আর্মব্যান্ডও তিনিই পরে নেন। সবুজ-মেরুন রক্ষণ আরও সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে যাওয়ায় আর গোল শোধের সুযোগ পায়নি নৌসেনা। বরং এটিকে মোহনবাগান আরও একবার ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েও তা হাতছাড়া করে।
এটিকে মোহনবাগান দল: বিশাল কয়েথ (গোল) (অর্শ আনোয়ার), সুমিত রাঠি, প্রীতম কোটাল (অধি) (রিকি সাবং), রবি রাণা, দীপক টাঙরি (শুভাশিস বোস), লালরিনলিয়ানা হ্নামতে, লেনি রড্রিগেজ, অভিষেক সূর্যবংশী, ফারদিন আলি মোল্লা (ইঙ্গসন সিং), মনবীর সিং, কিয়ান নাসিরি।
(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট)
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google