জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: মরশুমের শুরুতেই বড়সড় ধাক্কা খেল এটিকে মোহনবাগান। শনিবার ডুরান্ড কাপের (Durand Cup 2022) প্রথম ম্যাচে তারা রাজস্থান ইউনাইটেডের কাছে ২-৩-এ হারল। দু-দু’বার এগিয়ে গিয়েও এ দিন ঘরের মাঠ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ম্যাচ জিততে পারেনি। অসংখ্য গোলের সুযোগ নষ্ট করার খেসারত দিতে হয় সবুজ-মেরুন বাহিনীকে। যে ম্যাচ অন্তত ৬-৭ গোলে জেতা উচিত ছিল তাদের, সেই ম্যাচ ২-৩-এ হারতে হল তাদের।
এ দিন প্রথমার্ধে একাধিক গোলের সুযোগ নষ্টের পর কিয়ান নাসিরি ৪৩ মিনিটে দলকে এগিয়ে দিলেও তার তিন মিনিটের মধ্যে সমতা আনেন রাজস্থানের কিরগিজ মিডফিল্ডার বেকতুর আমানগেলদিয়েভ। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেই ফের দলকে এগিয়ে দেন আশিক কুরুনিয়ান। কিন্তু ৬১ মিনিটে ফের লালরেমসাঙ্গা সমতা আনেন। ম্যাচের শেষ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকে করা গোলে গিয়ামার নিকুম দলকে জেতান। এ দিন রাজস্থানের গোলকিপার নিরজ কুমার অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখান। কিন্তু এটিকে মোহনবাগানের রক্ষণের পুরনো রোগ যে এখনও নিরাময় হয়নি, তা এই ম্যাচেই বোঝা গেল।
এ দিন শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে দেখা যায় সবুজ-মেরুন বাহিনীকে। বল দখলের লড়াইয়েও এগিয়ে ছিল তিন ব্যাকে খেলা কলকাতার দলই। দ্বিতীয় মিনিটেই আশিক কুরুনিয়ান বল নিয়ে বিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েন এবং গোলকিপার নিরজ কুমারের গায়ে মারেন। তার দু’মিনিট পরেই আশিকের পাস থেকে কিয়ান নাসিরি বক্সের মাথা থেকে প্রায় ফাঁকা গোল পেয়ে শট নিলেও তা এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে গোলের বাইরে চলে যায়।
ফ্লোরেন্তিন পোগবা বল জালে জড়িয়েই দিয়েছিলেন, কিন্তু অফসাইডে ছিলেন। ১১ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে জনি কাউকোর বাড়ানো পাস নিয়ে লিস্টন কোলাসো বক্সে ঢুকে গোলকিপারের পাশ দিয়ে গোলে শট নেওয়ার চেষ্টা করলেও তা গোলের বাইরে চলে যায়।
এভাবেই ঘনঘন গতিময় আক্রমণে উঠে রাজস্থান ইউনাইটেডের রক্ষণকে হিমশিম খাইয়ে দেয় এটিকে মোহনবাগান। কিন্তু নিজেদেরই ভুলে শুরুতেই একাধিক গোলে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ নষ্ট করে তারা। তিন সপ্তাহ প্রস্তুতির পরও যে জড়তা কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারা, তা বোঝাই গেল এ দিন।
আসল কাজটিই ঠিকমতো করতে পারছিল না তারা। ৩০ মিনিটের মাথায় বিপক্ষের বক্সের সামনে থেকে নেওয়া কোলাসোর মাপা ফ্রিকিক গোলে ঢোকার মুখে আটকে দেন নিরজ। এই ফ্রিকিকের পাঁচ মিনিটের মধ্যেই কিয়ান ও কোলাসো পরপর দু’টি গোলের সুবর্ণ সুযোগ পান। কিন্তু কিয়ান বক্সের মধ্যে পিছন থেকে বাধা পান এবং কোলাসোর কোনাকুনি শট দ্বিতীয় পোস্টের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। ঘন ঘন ওঠা সবুজ-মেরুন ঝড় প্রায় ছ-সাতজন মিলে প্রতিহত করে রাজস্থান।
কিন্তু এ ভাবে কতক্ষণই বা বিপক্ষকে আটকে রাখা যায়? ৪৩ মিনিটের মাথায় বাঁধ ভেঙে ফেলেন তরুণ তারকা কিয়ান নাসিরি। বুমৌসের পাস পেয়ে বাঁদিক থেকে বক্সে ঢুকে পড়া আশিক তাঁর ডানদিকে ক্রস দেন গোলের সামনে থাকা কিয়ানকে। এক ডিফেন্ডার তাঁকে বাধা দিলেও এ বার আর ট্যাপ করে বল গোলে রাখতে ভুল করেননি জামশিদ-পুত্র (১-০)।
কিন্তু সবুজ-মেরুন রক্ষণের ভুলে এই ব্যবধান ধরে রাখা যায়নি। গত দুই মরশুম ধরে যে রক্ষণের সমস্যা ছিল, তা মরশুমের প্রথম ম্যাচেও প্রকট হয়ে ওঠে, যখন তিন মিনিট পরেই রাজস্থান ইউনাইটেড সমতা আনে। বাঁ দিক থেকে উইলিয়াম লেইসিয়ালের ক্রস পেয়ে যখন গোলের সামনে থাকা বেকতুর আমানগেলদিয়েভ কোনাকুনি শটে বল গোলে রাখেন, তখন তিনি প্রায় অরক্ষিতই ছিলেন (১-১)। গোল লাইনেও কোনও পাহাড়া ছিল না।
যদিও ফের ব্যবধান তৈরি করতে বেশি সময় নেয়নি এটিকে মোহনবাগান। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেই বিপক্ষের বক্সের সামনে থেকে নেওয়া হুগো বুমৌসের ফ্রিকিক পেয়ে বক্সের মধ্যে কোনাকুনি শটে দ্বিতীয় পোস্ট দিয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন আশিক কুরুনিয়ান (২-১)।
এই গোলের পরেই, ওয়ান টু ওয়ান অবস্থায় গোলের সুযোগ পান কিয়ান। কিন্তু তাঁর শট ফের বাঁচিয়ে দেন নিরজ কুমার। কিন্তু ৬১ মিনিটের মাথায় যে ঘটনাটা ঘটে, তার জন্য বোধহয় তৈরিই ছিলেন না সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা। উইলিয়ামের কর্নার দূরের পোস্টে থাকা বেকতুরের কাছে উড়ে আসায় তিনি গোলে শট নেন এবং তা অর্শের গায়ে লেগে ছিটকে আসে। ছিটকে আসা বল এ বার গোলে ট্যাপ করতে ভুল করেননি লালরেমসাঙ্গা (২-২)। এ ক্ষেত্রেও গোলদাতা ছিলেন আনমার্কড।
দ্বিতীয় গোল খাওয়ার আগেই একাধিক পরিবর্ত খেলোয়াড় নামান কোচ ফেরান্দো। ব্রেন্ডান হ্যামিল, আশিস রাই, শুভাশিস বোসকে নামান তিনি। গোল খাওয়ার পরে আসেন রবি রাণা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মনবীর সিং নামেন।
ফের ব্যবধান তৈরির জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে এটিকে মোহনবাগান। তবে ফিনিশিংয়ের সমস্যা তাদের সারা ম্যাচেই ভোগায় এ দিন। ৭৫ ও ৮৭ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে কাউকোর পাস পেয়ে বক্সের মাথা থেকে ফাঁকা গোলের ওপর দিয়ে শট নেন মনবীর। ৮১ মিনিটের মাথায় কাউকোর পাস থেকে কিয়ানের গোলমুখী শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ৮৭ মিনিটের মাথায় ফের গোলের সামনে থেকে বারের ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে দেন মনবীর।
স্টপেজ টাইমে আশিস রাই বক্সে ঢুকে বারের ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে দেন। এত সুযোগ নষ্টের খেসারত তাদের দিতে হয় স্টপেজ টাইমের শেষ মিনিটে গোল খেয়ে। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে গিয়ামার নিকুমের অনবদ্য গোল রাজস্থানকে ডুরান্ড কাপের প্রথম ম্যাচে অপ্রত্যাশিত জয় এনে দেয়।
এটিকে মোহনবাগান দল: অর্শ আনোয়ার (গোল), সুমিত রাঠি (রবি রাণা), প্রীতম কোটাল, ফ্লোরেন্তিন পোগবা (ব্রেন্ডান হ্যামিল), লালরিনলিয়ানা হ্নামতে (আশিস রাই), কার্ল ম্যাকহিউ, জনি কাউকো, হুগো বুমৌস (শুভাশিস বোস), আশিক কুরুনিয়ান, লিস্টন কোলাসো (মনবীর সিং), কিয়ান নাসিরি।
(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট)
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google