জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: গত হিরো আইএসএল মরশুমে তাঁর দল ভাল না খেললেও সারা দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছিলেন হীরা মন্ডল (Hira Mondal)। হুগলীর বৈদ্যবাটিতে পাড়ার মাঠ থেকে দেশের এক নম্বর লিগের উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে ওঠা এই ডিফেন্ডার এ বার দল বদল করে পাড়ি দিচ্ছেন ভিনরাজ্যের ক্লাব বেঙ্গালুরু এফসি-তে, যেখানে পাশে পাবেন কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রী ও আর এক বঙ্গসন্তান প্রবীর দাসকে। নিজেকে উন্নত করে তোলার জন্যই তাঁর এই বেঙ্গালুরু যাত্রা. www.indiansuperleague.com কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সে রকমই জানালেন হীরা। বললেন, এই মরশুমে তাঁর লক্ষ্যের কথাও।
আসন্ন মরশুমে বেঙ্গালুরু এফসি-র হয়ে খেলার সিদ্ধান্তের পিছনে মূল কারণ কী?
কারণ, বেঙ্গালুরু এফসি বড় দল। গত দশ বছরে দেশে ওদের মতো সফল ক্লাব আর কেউ নেই। জাতীয় দলের অনেকেই এই ক্লাবের হয়ে খেলে। আমাকেও আমার লক্ষ্যের দিকে এগোতে হবে। সে জন্য প্রতিদিন নিজেকে উন্নত করে তুলতে হবে। এখানকার সুযোগ-সুবিধা ও পরিকাঠামো খুবই উন্নত। সেজন্যই এই ক্লাবকেই বেছে নিলাম। তবে এই ক্লাবে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা মোটেই সোজা ছিল না। গত বছর যাদের হয়ে খেলেছি, তারাও বড় ক্লাব। প্রচুর সমর্থক রয়েছে এই ক্লাবে। বাংলা ছেড়ে বাইরের কোনও ক্লাবে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে অনেক ভাবতে হয়েছে আমাকে।
গত মরশুমে তোমার দল ভাল খেলতে না পারলেও তুমি যথেষ্ট ভাল খেলেছ। এই উন্নতিটা কী ভাবে করলে? কাদের সাহায্য সবচেয়ে বেশি পেয়েছ?
গত মরশুমে দলের সিনিয়ররা খুব সাহায্য করেছিলেন। যেমন অরিন্দমদা (ভট্টাচার্য), রাজুভাই (গায়কোয়াড়), বলওয়ন্তভাই (সিং), বিকাশদা (জায়রু), এরা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। যা যা ভুল করছিলাম, সেগুলো ওরা আমাকে ধরিয়ে দেয়। কোচও ভাল খেলার সঠিক রাস্তা দেখিয়েছিলেন আমাকে। কোচ, সিনিয়রদের সাহায্য নিয়েই উন্নতি করেছি।
নিজের রাজ্য ছেড়ে এ বার ভিনরাজ্যের একটি দলে যোগ দিলে। সম্পুর্ণ নতুন দল, নতুন পরিবেশের সঙ্গে কী করে মানিয়ে নেবে?
কোচ আমাকে যে রকম নির্দেশ দেবেন, সেই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করব। দ্রুত তা করে দেখাতে হবে। একসঙ্গে অনুশীলন শুরুর পর দ্রুত নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। ফুটবল যেহেতু দলগত খেলা, তাই বোঝাপড়াটা তৈরি করা খুব দরকার। এতে একটা ভাল কম্বিনেশন গড়ে উঠবে আমাদের দলে। যথাসম্ভব দ্রুত সবার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব। এতে দলেরও ভাল হবে, আমার নিজেরও ভাল হবে।
নতুন দলে সুনীল ছেত্রীর মতো একজন কিংবদন্তিকে সতীর্থ হিসেবে পেতে চলেছ। এই অনুভূতিটা কেমন? ওঁর কাছ থেকে কী কী শিখতে চাও?
যে কোনও ভারতীয় ফুটবলারেরই স্বপ্ন সুনীল ছেত্রীর সঙ্গে মাঠে নামা। আমারও ছিল। ওঁর সঙ্গে একই ড্রেসিং রুমে থাকতে পারাটা আমার কাছে পরম সৌভাগ্যের। উনি এতদিন ধরে খেলছেন, এত অভিজ্ঞতা ওঁর, এত গোল করেছেন। অনেক কিছু শেখার আছে ছেত্রীভাইয়ের কাছ থেকে। ওঁর সঙ্গে কবে অনুশীলন শুরু করব, সেই অপেক্ষায় রয়েছি। খুবই খুশি আমি এবং উত্তেজিতও। নিজেকে উন্নত করে তোলার জন্য ওঁর সাহায্য আমার দরকার। মাঠের বাইরেও উনি যথেষ্ট শৃঙ্খলাপরায়ণ। খাওয়া থেকে শুরু করে মাঠের বাইরের সব কাজেই নিখুঁত নিয়ম মেনে চলেন। এগুলো আমাকে শিখতে হবে। আমি সৌভাগ্যবান যে সেই সুযোগ এখানে আমি পেতে চলেছি।
বাংলার আর এক তারকা ফুটবলার প্রবীর দাসও তোমার সতীর্থ হতে চলেছে। তার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কেমন? প্রবীরের সঙ্গে একটা ভাল বোঝাপড়া গড়ে তুলতে পারবে বলে মনে হচ্ছে?
আমরা যেহেতু দুজনেই বাংলার ফুটবলার, তাই আমরা একে অপরকে খুব ভাল চিনি ও জানি। অনেক দিন ধরে যথেষ্ট উঁচু স্তরের ফুটবল খেলছে প্রবীরদা। তাই ওরও অনেক অভিজ্ঞতা আছে। একে অপরকে ভাল ভাবে জানি বলেই আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া, আশা করি, ভাল হবে।
এ বছর থেকে ফুটবল ক্যালেন্ডার আরও দীর্ঘ হচ্ছে। এ বার আরও পরিশ্রম বাড়বে, আরও ওয়ার্কলোড বেশি পড়বে। এ সব কি সহজেই সামলে নেওয়া যাবে বলে মনে কর? দেশের ফুটবলারদের উন্নতিতে এই পরিবর্তন কী ভাবে সাহায্য করবে বলে মনে হয়?
ফুটবলারদের পক্ষে লম্বা মরশুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আরও বেশি ম্যাচ খেলতে পারব আমরা। কোচেরা যে পরিকল্পনাগুলি তৈরি করে, তা কার্যকর করার জন্যও বেশি সময় পাবেন তাঁরা। দুই ম্যাচের মধ্যে শরীরকে চাঙ্গা বা সুস্থ করে তোলার জন্য আরও বেশি সময় পাব আমরা। সবার পক্ষেই এই সিদ্ধান্তটা খুবই ভাল।
পরপর তিনটি ম্যাচ জিতে এশিয়ান কাপ ২০২৩-এ খেলার যোগ্যতা অর্জন করল ভারতীয় দল। দলের পারফরম্যান্স দেখার পরে কী বলবে? মূলপর্বে আমাদের দল কেমন করবে বলে মনে হয়?
ভারত এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে দুর্দান্ত খেলেছে। দলের ফুটবলাররা একশো শতাংশ দিয়েছে বলেই মূলপর্বে যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে। ক্রমশ উন্নতি করছে আমাদের জাতীয় দল। আরও উন্নতি করবে। ২০২৩-তে মূলপর্ব অবশ্যই আমাদের দলের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। ওখানে আরও কঠিন দলগুলির বিরুদ্ধে খেলতে হবে। তাই কাজটাও অনেক কঠিন হবে। আশা করি, আমাদের দলও ভাল খেলবে ও সফলও হবে। ভাল অভিজ্ঞতাও অর্জন করবে দলের খেলোয়াড়রা। সবার প্রতি শুভেচ্ছা রইল।
নেক্স জেন কাপে বেঙ্গালুরু এফসি-র যুব দল অংশ নিতে যাচ্ছে। তাদের প্রতি সিনিয়র হীরা মন্ডলের কী বার্তা থাকবে?
ইউকে-তে যে ভারতীয় ফুটবলাররা যাচ্ছে নেক্স জেন কাপে অংশ নিতে, তাদের কাছে নিজেদের প্রমাণ করার এটা একটা দারুন সুযোগ। ওখানে অনেক ভাল ভাল দল খেলবে। ওদের বিরুদ্ধে খেলে আমাদের ছেলেদের অভিজ্ঞতা অনেক বাড়বে। আমাদের ভাইয়েদের একটাই কথা বলব, তোমরা কারও থেকে পিছিয়ে নেই। কোচেরা যে রকম বলবে, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। নিজেদের সেরাটা দিও। নিশ্চয়ই সাফল্য আসবে। না এলেও অসুবিধা নেই। ওখান থেকে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফিরবে তোমরা, তার মূল্যও কম নয়। যুব ফুটবলারদের জন্য অনেক শুভেচ্ছা।
গত মরশুমে লাল-হলুদ সমর্থকদের মন জয় করে নিয়েছিলে। এ বার আর তাঁদের প্রিয় ডিফেন্ডার লাল-হলুদ জার্সি পরে মাঠে নামবে না। নতুন ক্লাবে যোগ দিতে যাওয়ার আগে তাঁদের উদ্দেশ্যে কী বলতে চাও?
ওঁদের একটাই কথা বলব, তোমাদের জায়গা আমার হৃদয়েই থাকবে। গত মরশুমে গ্যালারিতে থাকতে না পেরেও যে ভাবে আমাকে সবাই সমর্থন করেছে, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যে ভাবে আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছে, তা অনবদ্য। যে কোনও ফুটবলারের পক্ষে সমর্থকদের ভালবাসা ও সমর্থন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ভালবাসা কখনও ভুলতে পারব না।
আবার একটা নতুন মরশুম আসন্ন এবং তোমাকে সম্পুর্ণ নতুন ভাবে শুরু করতে হবে এই মরশুম। নতুন মরশুমে লক্ষ্য কী? নিজের প্রতি কী প্রত্যাশা তোমার?
গতবার আমার পারফরম্যান্সের স্তর যে জায়গায় ছিল, সেই স্তরকে আরও ওপরে নিয়ে যাওয়াই এই মরশুমে আমার লক্ষ্য। সে জন্য আমাকে প্রতি দিন উন্নতি করতে হবে। গতবারের চেয়ে এ বার আরও ভাল খেলতে হবে। গতবার যদি পাঁচ নম্বর পেয়ে থাকি, তা হলে এ বার সাত নম্বর পেতেই হবে। জানি কঠিন হবে কাজটা। কিন্তু আমাকে সবকিছু ঠিক করতেই হবে। নিজের মধ্যে যতটুকু প্রতিভা, দক্ষতা রয়েছে, সবই উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করব, যাতে মরশুমের শেষে কোচ, সতীর্থ, কর্তা, সমর্থকেরা সবাই আমাকে নিয়ে গর্বিত হতে পারে।
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google