আজ থেকে ঠিক ৮৮ বছর আগের ঘটনা, ফিরে দেখা যাক সেই সময়কে

আজ থেকে ঠিক ৮৮ বছর আগের ঘটনাখেলার একটি মুহূর্ত।

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক:  আজ থেকে ঠিক ৮৮ বছর আগের ঘটনা। ১৯৩০ সালের ১৩ জুলাই দিনটি বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে লেখা রয়েছে স্বর্ণাক্ষরে। এই মুহূর্তে আমরা দাঁড়িয়ে আছি ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ ফাইনালের ঠিক আগে। নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে দুই ফাইনালিস্ট। চ্যাম্পিয়ন নির্ধারিত হতে বাকি আর মাত্র এক ম্যাচ। আর তার ঠিক আগেই ফিরে দেখা প্রথম বিশ্বকাপ শুরুর দিনটি।

১৯৩০ সালে উরুগুয়ে শুরু হয় ফিফা বিশ্বকাপ। শুরুর দিনটি ছিল ১৩ জুলাই।  আজকের দিনে কিক অফ হয়েছিল ফিফা বিশ্বকাপের। সেই বিশ্বকাপের ফাইনাল হয়েছিল ৩০ জুলাই। বিশ্ব ফুটবলের গভর্নিং বডি উরুগুয়েকে বেছে নিয়েছিল প্রথম বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে। সেই বছর উরুগুয়ে তাদের প্রথম সংবিধানের শতবর্ষপূর্তির উৎসবে মেতেছিল। বিশ্বকাপ শেষে উরুগুয়ের প্রাপ্তি ছিল বিশ্বকাপ ট্রফি। হ্যাঁ, প্রথম বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন তারাই। ১৯২৮ সামার অলিম্পিক টাইটেলের পর প্রথম বিশ্বকাপ। বিশ্ব ফুটবলে উরুগুয়ে তখনও একটা নাম ছিল এখনও। যদিও এ বার আগেই ছিটকে গিয়েছেন সুয়ারেজ-কাভানিরা।

২০১৮ বিশ্বকাপের সব খবর পেতে ক্লিক করুন

১৩ জুলাই উরুগুয়ের রাজধানী মন্তেভিদিওতেএ শুরু হয়ে যায় ১৮ দিনের ফুটবলের বিশ্ব যুদ্ধ। সব ম্যাচ খেলা হয়েছিল এখানেই। বিশ্বকাপের জন্যই তৈরি হয়েছল এস্তাদিও সেন্তেনারিও। ১৩টি দল অংশ নিয়েছিল প্রথম বিশ্বকাপে। তার মধ্যে সাতটি দেশই ছিল দক্ষিণ আমেরিকার। চারটি দেশ ইউরোপের ও দুটো উত্তর আমেরিকার। সেই সময় যাতায়াত ব্যবস্থা আজকের মত সহজ ছিল না। ইউরোপিয়ান দল বেশি নেওয়ার হয়নি সেই কথা ভেবেই। সেই সময় ইউরোপ থেকে দক্ষিণ আমেরিকা পৌঁছনোটা বেশ কঠিন ছিল। জাহাজের ভাড়া ছিল সেই সময়ের জন্য আকাশ ছোঁয়া। এই নিয়ে সেই সময় দেশের  অ্যাসোসিয়েশনগুলো ক্ষোভে ফিফা থেকে পদত্যাগ করেছিল। টুর্নামেন্টের দু’মাস আগে পর্যন্তও কোনও ইউরোপিয়ান দেশ সরকারিভাবে নাম না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত মধ্যস্ততায় নামেন ফিফা প্রেসিডেন্ট জুলে রিমে। এর পরই বেছে নেওয়া হয় বেলজিয়াম, ফ্রান্স, রোমানিয়া ও যুগস্লাভিয়াকে।

১৩ জুলাই প্রথম বিশ্বকাপের উদ্বোধন।

চারটি গ্রুপে দলগুলিকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। গ্রুপ পর্ব থেকে সরাসরি ছিল সেমিফাইনাল। প্রত্যেক গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন খেলবে সেমিফাইনালে। প্রথম দুটো বিশ্বকাপ ম্যাচ এক সঙ্গে খেলা হয়েছিল। যেখানে জিতেছিল ফ্রান্স ও ইউএসএ। ফ্রান্স মেক্সিকোকে হারিয়েছিল ৪-১ গোলে। ইউএসএ বেলজিয়ামকে হারিয়েছিল ৩-০ গোলে। প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম গোলদাতা ছিলেন ফ্রান্সের লুসিয়েন লরেন্ট। পুরো টুর্নামেন্টে ক্লিনশিটের রেকর্ড করেছিলেন  ইউএস গোলকিপার জিমি ডগলাস। একই জায়গায় তিনটি স্টেডিয়ামে চলে ১৮ দিনের বিশ্বকাপ।

দুই অর্ধে দুই বলে খেলা হয়েছিল বিশ্বকাপ ফাইনাল।

গ্রুপ পর্ব শেষে চার গ্রুপ থেকে আর্জেন্তিনা, উরুগুয়ে, ইউএসএ ও যুগস্লাভিয়া সেমিফাইনালেএ পৌঁছে গিয়েছিল। সেমিফাইনালে উরুগুয়ের কাছে ৬-১ গোলে হেরে বিদায় নেয় যুগস্লাভিয়া ও আর্জেন্তিনার কাছে একই ব্যবধানে হেরে শেষ হয় ইউএসএ-র বিশ্বকাপ। তৎকালিন হিসেব বলছে প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল দেখেছিল ৬৮ হাজার ৩৪৬ জন সমর্থক। সে বার ব্রাজিল গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে গিয়েছিল। এ ভাবেই ঘনিয়ে আসে ফাইনালের দিন। আগামী ১৫ জুলাই যে ফাইনালটা খেলা হবে মস্কোয় তার শুরু সেই দিনটি এসে গিয়েছিল সামনে। সেজে উঠেছিল এস্তাদিও সেন্তেনারিও। ফাইনালে উরুগুয়ের মুখোমুখি আর্জেন্তিনা।

চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্যরা।

ফাইনালের দিন বুয়েনস এয়ারেস থেকে আর্জেন্তাইন ফ্যানদের নিয়ে ১০টিই নৌকো এসে ভিরেছিল উরুগুয়ের রাজধানী বন্দরে। হিসেব বহির্ভূতভাবে সেই ম্যাচে ১০ থেকে ১৫ হাজার আর্জেন্তাইন সমর্থক নদী পেড়িয়ে উরুগুয়েতে পৌঁছেছিল। ম্যাচ শুরুর ছ’ঘণ্টা আগে খুলে দেওয়া হয়েছিল স্টেডিয়ামের গেট। দুপুরের মধ্যে ভরে গিয়েছিল ৯০ হাজারের স্টেডিয়াম। অফিসিয়াল অ্যাটেনডেন্স ছিল ৯৩ হাজার। ম্যাচ শুরু ঠিক আগে গোল বাধে বল নিয়ে। কার বলে হবে বিশ্বকাপ ফাইনাল, আর্জেন্তিনা না উরুগুয়ে। শেষ পর্যন্ত ফিফা সিদ্ধান্ত নেয় দুই অর্ধে দুই দেশের বলে খেলা হবে।

প্রথম ট্রফি যা তুলে দেওয়া হয়েছিল উরুগুয়ে প্রেসিডেন্টের হাতে।

উরুগুয়ের হয়ে পাবলো দোরাদো প্রথম গোল করেন। আট মিনিটের মধ্যে সেই গোল শোধ করে দেন কালোর্স পিউসেলে। এর পর এগিয়ে যায় আর্জেন্তিনা। গুইলেরমো স্তাবাইল ২-১ করেন। এর পর খেলাটা ঘুরে যায় উরুগুয়ের দিকে। সি, ইরিয়েত ও ক্যাস্ত্রোর গোলে প্রথম বিশ্বকাপ জিতে নেয় উরুগুয়ে। মোট ১৮টি ম্যাচে গোল হয়েছে ৭০টি। সর্বোচ্চ গোলদাতা আর্জেন্তিনা গুইলেরমো স্তাবাইল। সেরা ফুটবলার হন উরুগুয়ের হোসে নাসাজ।