আবেগে, ইতিহাসে থেকে যাবে ভারতের মেয়েদের বিশ্বকাপ জয়

কাজটা এতটাও সহজ ছিল না। জয়, তার পর হার। টানা তিন ম্যাচে পর পর হেরে রক্তচক্ষুর সামনে তখন অমল মজুমদারের ভারতীয় দল। চাপা টেনশন, আতঙ্ক, ভয়— সবটা নিয়েই একটাই কথা মাথায় ঘুরছিল একদল মেয়ের, এই সুযোগ সহজে হাতছাড়া করা যাবে না। তাই আবার জয়ে ফেরা। হার দলের ড্রেসিংরুমের আত্মবিশ্বাসকে বদলে দিতে পারেনি। বদলে দিতে পারেনি স্মৃতি, রিচা, দীপ্তিদের। শেষ মুহূর্তে বিশ্বকাপ দলে ঢুকে যে মেয়েটি বাজিমাত করলেন, সেই শেফালি ভার্মাও কি ভেবেছিল বিশ্বকাপ ফাইনালে তাঁর নাম লেখা হবে ম্যাচের সেরার তালিকায়? প্রতিকা রাওয়াল চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ার পর যখন ডাক এসেছিল বিশ্বকাপ দলে, তখনই ভেবে নিয়েছিলেন নিজের খেলাটা খেলতে হবে। কোচ, ক্যাপ্টেনের থেকে সবুজ সঙ্কেত পেতেই বাজিমাত মেয়ের। ফাইনালে তাই নামের পাশে ৮৭ রান আর ২ উইকেট। রেকর্ডের কথা নাই বা বললাম। সবার নামের পাশেই কিছু না কিছু রেকর্ড লেখা হয়েছে যা ক্রমশ সামনে আসবে। তার আগে দু’বার ফাইনালে পৌঁছে হারের যন্ত্রণা মুক্তির রাতে শুধুই বিশ্বকাপ জয় দেখছে পুরো দেশ।

রবিবার নবি মুম্বইয়ের ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে লেখা হল আরও একটা ইতিহাস। ১৪ বছর আগে এমনই একটা দিন ছিল ওয়াংখেড়ের মাঠে। সেদিনটাও ছিল ২ তারিখ। তবে এপ্রিলের। এদিনও ২ তারিখ তবে নভেম্বরের। সেদিন মহেন্দ্র সিং ধোনির দল শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল আর এদিন হরমনপ্রীত কৌরের দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নিল ঘরের মাঠে। শেষ ক্যাচটাও জমা পড়ল ক্যাপ্টেনেরই হাতে। তার পরের মুহূর্তগুলোতে জমা থাকবে স্মৃতির অ্যালবামে। প্রতিবছর ঘুরে ফিরে আসবে আর ক্রিকেটের ভারত তা দেখে গর্বিত হবে। ঠিক যেমনটা আজও ১৯৮৩-র বিশ্বকাপ হাতে কপিল দেবের সেই ছবি সব প্রজন্মের কাছে চেনা। এই জয়ও সেই জয়েরই সমতূল্য। প্রথম তো একবারই হয়।


এদিন টস জিতে প্রথমে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ওপেন করতে নেমে শেফালি ভার্মা ও স্মৃতি মন্ধনার জুটি ভারতের রানকে ১০০ পার করে দিয়ে ভিতটা তৈরি করে দিয়েছিলেন। স্মৃতি ৪৫ রানে আউট হলেও শেফালির ব্যাট থেকে আসে ৮৭ রান। এর পর জেমিমা রডরিগেড ২৪ ও হরমনপ্রীত কৌর ২০ রানে আউট হয়ে যাওয়ার পর শেফালির সঙ্গে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন দীপ্তি শর্মা। শেফালির মতোই যে দীপ্তি ব্যাট হাতে ৫৮ রানের ইনিংস খেলার পর বল হাতে ৫ উইকেট নিয়ে ইতিহাস রচনা তো করলেনই সঙ্গে টুর্নামেন্টের সেরার পুরস্কারও নিয়ে গেলেন সঙ্গে করে।  শেষ বেলায় অমনজ্যোতের ১২ ও রিচার ৩৪ ভারতের রানকে ২৯৮-এ পৌঁছে দেয় ৭ উইকেটের বিনিময়ে।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে শেষ পর্যন্ত প্রায় লড়াই দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। আর সেই লড়াইয়ে সেঞ্চুরি হাঁকান দলের ক্যাপ্টেন লরা উলভার্ট। যদিও তিনি ছাড়া আর কেউই হাফসেঞ্চুরি পর্যন্ত যেতে পারেননি। বরং ভারতীয় বোলাররা নিয়মিত ব্যবধানে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটারদের প্যাভেলিয়নে ফেরান। দীপ্রিত ৫, শেফালির ২ ও শ্রীচরণির ১ উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৫.৩ ওভারে ২৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায়। প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছানো দক্ষিণ আফ্রিকাকে রানার্স হয়েই থাকতে হল। আর এর যন্ত্রণা জানে ভারতের মেয়েরা। এদিন গ্যালারিতে হাজির ছিলেন রোহিত শর্মা। বেশিদিন আগের কথা নয়, এমনই এক বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে রানার্স হয়ে শেষ করতে হয়েছিল ভারতের ছেলেদেরও। তবে আজ শুধু জয়ের কথাই হবে। আজ একদল ভারতীয় মেয়ের ক্রিকেট মাঠে অদম্য লড়াইয়ের কথা হবে। যা লেখা থাকবে ইতিহাসে।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle