জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: বাহরিনে জোড়া ফ্রেন্ডলিতে নতুনদের সুযোগ দেবেন, জানিয়ে দিলেন ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্টিমাচ (India vs Bahrain Preview)। যে ২৫জনকে নিয়ে তিনি দু’টি ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে বাহরিনে পৌঁছেছেন, তার মধ্যে মধ্যে সাতজন ফুটবলার এই প্রথম সিনিয়র ভারতীয় দলে ডাক পেয়েছেন। এঁরা হলেন গোলকিপার প্রভসুখন গিল, হরমিপাম রুইভা, আনোয়ার আলি, রোশন সিং, ভিপি সুহের, দানিশ ফারুক এবং অনিকেত যাদব।
বুধবার বাহরিনের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে এঁদের অনেককেই দেখা যাবে বলে জানিয়ে দিলেন স্টিমাচ। বাহরিনে পৌঁছে তিনি সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “এই ছেলেগুলোকে ভাল দলের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ দিতে চাই আমি। আশা করি, সম্প্রতি মাঠে ওদের যে সাহসী আচরণ আমরা দেখেছি, তা এই সফরেও দেখা যাবে”।
এই সফরে বাহরিন ও বেলারুশের বিরুদ্ধে দু’টি ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে চলেছে ভারতীয় দল। বাহরিনের মানামায় এই ম্যাচগুলি হবে। এ বছর জুনে ভারতীয় দল ২০২৩ এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন বা এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে খেলবে। তারই প্রস্তুতি হিসেবে এই দু’টি ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলছে ভারত।
বাহরিনের বিরুদ্ধে ২৩ মার্চ ও বেলারুশের বিরুদ্ধে ২৬ মার্চ এই দু’টি ম্যাচ খেলবে ভারতীয় দল। দু’টি ম্যাচই শুরু হওয়ার কথা ভারতীয় সময়ে রাত সাড়ে ন’টায়। দশ বছর পরে কোনও উয়েফা সদস্য দেশের বিরুদ্ধে মাঠে নামার সুযোগ পাচ্ছে ভারত। ২০১২-র ফেব্রুয়ারিতে শেষবার ভারতীয় দল উয়েফা সদস্য দেশ আজারবাইজানের বিরুদ্ধে খেলেছিল। সেই ম্যাচে আজারবাইজান ৩-০-য় জিতেছিল।
বুধবারের ম্যাচ নিয়ে স্টিমাচ বলেছেন, “আমি সেরা এগারো নামানোরই চেষ্টা করব। কয়েকজন নতুন মুখ তাতে থাকবে। ক্রমতালিকায় ওপরে থাকা দলের বিরুদ্ধে ওরা কেমন খেলে সেটাই দেখতে চাই। এই পারফরম্যান্সে বোঝা যাবে জুনে (এশিয়ান কাপ) বাছাই পর্বে আমরা কতটা কী করতে পারি”।
সদ্যসমাপ্ত হিরো আইএসএল সেমিফাইনাল ও ফাইনালে যাঁরা ভাল পারফরম্যান্স দেখালেন, তাঁদের মধ্যে থেকেই ২৫ জনের দল বেছে নিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ান কোচ। এ বার এঁদের পরখ করে দেখার পালা। বাংলার চার ফুটবলার প্রীতম কোটাল, শুভাশিস বসু, প্রণয় হালদার ও রহিম আলি এই দলে রয়েছেন। এটিকে মোহনবাগানের ছয় সদস্য অমরিন্দর সিং, প্রীতম, শুভাশিস, সন্দেশ ঝিঙ্গন, মনবীর সিং ও লিস্টন কোলাসো এই দলে আছেন। চোটের জন্য বাহরিনগামী এই দলে নেই সুনীল ছেত্রী ও সাহাল আব্দুল সামাদ।
দল বাছাই নিয়ে স্টিমাচ বলেন, “চেষ্টা করেছি হিরো আইএসএলে খেলা অন্তত অর্ধেক ভারতীয়কে আমার দলে রাখতে। অনেকেই ভাল খেলা সত্ত্বেও চোট-আঘাতের জন্য এই দলে নেই। ওদের এখানে নিয়ে এলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যেত”।
সুনীল ছেত্রীর অনুপস্থিতি এখনকার উঠতি খেলোয়াড়দের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন স্টিমাচ। তিনি বলেন, “সুনীল না থাকলেও আমাদের দলে তিন স্ট্রাইকার আছে, লিস্টন, মনবীর ও রহিম। সুনীল যখন নেই, তখন এই খেলোয়াড়দেরই অনেক বেশি দায়িত্ব নিতে হবে এবং অনেক গোলের সুযোগ তৈরি করতে হবে। তবে পুরো দলকেই ওর অভাব পূরণ করার চেষ্টা করতে হবে”।
সুনীলের অনুপস্থিতিতে সম্ভবত দলকে নেতৃত্ব দেবেন সিনিয়র ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্গন। তাঁর বক্তব্য, “যে কোনও খেলোয়াড়ের কাছেই সবচেয়ে বড় সন্মান হল দেশের প্রতিনিধিত্ব করা। তাই জাতীয় দলে ডাক পেলে আমি উজ্জীবিত হয়ে উঠি, যেমন প্রথমবার ডাক পেয়ে হয়েছিলাম। এই ম্যাচগুলো খেলার সুযোগ পেয়ে আমাদের ভালই হয়েছে। আমরা প্রত্যেকেই এই ম্যাচগুলো থেকে কিছু না কিছু শিখতে পারব। কারণ, বাহরিন ও বেলারুশ দুটোই খুব ভাল দল। এই ম্যাচগুলো আমাদের দলকে এগোতে সাহায্য করবে। গত মরসুমে কোভিডের জন্য বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাইনি আমরা। এমন কঠিন সময়ে এই ম্যাচগুলো আয়োজনের জন্য বাহরিন ফুটবল ফেডারেশনকে ধন্যবাদ”।
গত বছর ক্রোয়েশিয়ায় ক্লাব ফুটবলে খেলতে যান সন্দেশ। কিন্তু চোট পেয়ে ফিরে এসে এটিকে মোহনবাগানে যোগ দেন ও চোট সারিয়ে হিরো আইএসএলে খেলেন। ২০১৯-এ শেষবার যখন বাহরিনের বিরুদ্ধে খেলেছিল ভারত, সে বারও দলে ছিলেন সন্দেশ। সেই স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, “সে বার প্রত্যেক ভারতীয়ই খুব কষ্ট পেয়েছিল। তবে এটাই ফুটবল। সেই ম্যাচে আমারও ভাল খেলা উচিত ছিল। তবে আবার যখন ওদের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, এ বার আশা করি আরও ভাল খেলব”।
এই দলের সম্ভাবনা নিয়ে অদিনায়ক সন্দেশের বক্তব্য, “তরুণরা প্রত্যেকেই খুব ভাল দিকে এগোচ্ছে। সে জন্যই আমার কাজটা আরও সোজা হয়ে গিয়েছে। আমি আমার ফুটবল জীবনে যা শিখেছি, তা সবই ওদের শেখাই। ওরা সঠিক জায়গাতেই রয়েছে। আমি ওদের কাছে সবসময়ই একজন ভাল বন্ধু ও ভাল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকতে চাই। ওদের সঙ্গে কথা বলে ওদের সাহায্য করার চেষ্টা করি”।
সন্দেশের প্রশংসা করে কোচ স্টিমাচ বলেন, “ও খুব ভাল মানের খেলোয়াড় এবং ক্রমশ আরও উন্নতি করছে। মাঠে ওর নেতৃত্ব সব সময়ই দেখা যায়। সন্দেশ এখন পাসিংয়ে আগের চেয়ে অনেক উন্নতি করেছে। ও এখন আগের চেয়ে উন্নত ফুটবলার”।
যার জন্য এই প্রস্তুতি সফর, সেই এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে গ্রুপ ডি-র খেলাগুলি হবে কলকাতায়। এই গ্রুপে ভারত ছাড়াও রয়েছে হংকং, আফগানিস্তান ও কম্বোডিয়া। এরা প্রত্যেকেই ফিফা ক্রমতালিকায় ভারতের নীচে রয়েছে। জুনের ৮, ১১ ও ১৪ তারিখে এই ম্যাচগুলি হওয়ার কথা কলকাতায়। তার এক বছর পরে ২০২৩-এর ১৬ জুন থেকে চিনে আগামী এএফসি এশিয়ান কাপ হওয়ার কথা।
এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বে ছ’টি গ্রুপের জয়ীরা যেমন মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে, তেমনই দ্বিতীয় স্থানাধিকারী দলগুলির মধ্যে থেকে সেরা পাঁচটি দলকে মূলপর্বে খেলার ছাড়পত্র দেওয়া হবে। ভারত টানা দ্বিতীয়বারের জন্য এই টুর্নামেন্টের মূলপর্বে যোগ্যতা অর্জন করার লক্ষ্য নিয়ে নামবে।
তথ্য ও লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট)
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)