আইএসএল ২০২০-২১, চেন্নাইন এফসি বানাম এসসি ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ

শো-কজ রবি ফাউলারকে

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আইএসএল ২০২০-২১, চেন্নাইন এফসি বানাম এসসি ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ লড়াই করেও ড্র। এক ঘণ্টা ধরে দশ জনে খেলেও গতবারের রানার্স চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করল এসসি ইস্টবেঙ্গল। সোমবার বাম্বোলিমের জিএমসি স্টেডিয়ামে হিরো আইএসএলের এই ম্যাচে চরম লড়াকু মানসিকতার পরিচয় দিল রবি ফাউলারের দল। ৩১ মিনিটের মাথায় তরুণ মিডফিল্ডার অজয় ছেত্রী লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যাওয়ার পর যে ভাবে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল লাল-হলুদ বাহিনী, তা প্রশংসনীয়। এই নিয়ে টানা সাতটি ম্যাচে অপরাজিত তারা। চলতি লিগে মুম্বই সিটি এফসি (১০) ছাড়া আর কোনও দল টানা এতগুলো ম্যাচে অপরাজিত থাকতে পারেনি।

তবে এসসি ইস্টবেঙ্গলের এই লড়াইয়ের অর্ধেক কৃতিত্ব অবশ্যই দিতে হবে তাদের গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদারকে। সারা ম্যাচে ছ-ছ’টি অবধারিত গোল বাঁচিয়ে তিনি এ দিন দলকে হারের মুখ থেকে ফিরিয়ে আনেন। চলতি হিরো আইএসএলে এ পর্যন্ত ৪১টি সেভ করে তিনি এখন গোল্ডেন গ্লাভসের দৌড়ে সবার ওপরে রয়েছেন। সোমবারের এই ড্রয়ের ফলে এসসি ইস্টবেঙ্গল লিগ টেবলে যে জায়গায় ছিল, সেই সাত নম্বরেই রয়ে গেল।

ব্রাইট ইনোবাখারে, জাক মাঘোমা ও অ্যান্থনি পিলকিংটন এ দিন একসঙ্গে শুরু করায় মনে হয়েছিল শুরু থেকেই হয়তো আক্রমণের ঝড় তুলবে এসসি ইস্টবেঙ্গল। শুরুতে লাল-হলুদ বাহিনী সেই চেষ্টায় থাকলেও ক্রমশ ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে তুলে নেয় চেন্নাইন এফসি। বলের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ আক্রমণও বাড়াতে থাকে তারা। ১৮ ও ২৩ মিনিটে যে ভাবে লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতের শট ও এনেস সিপোভিচের হেড ক্রসবারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়, তাতে বিপদের সঙ্কেত ছিল স্পষ্ট। এ দিন ছোট ছোট পাসে খেলার প্রবণতা দেখা যায় এসসি ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়দের মধ্যে। কিন্তু ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া বলতে যা বোঝায়, প্রথমার্ধে সে কাজে ব্যর্থ হয় তারা।

তার ওপর ঠিকমতো ম্যাচের হাল ধরার আগেই লাল-হলুদ বাহিনী থেকে একজন কমে যায়। আট মিনিটের মধ্যে পরপর দু’বার হলুদ কার্ড দেখায় ৩১ মিনিটের মাথায় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়ে চলে যেতে হয় নবাগত তরুণ মণিপুরী মিডফিল্ডার অজয় ছেত্রীকে। যিনি এ দিন এ বারের হিরো আইএসএলের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন। ২১ বছর বয়সি অজয় প্রথমে অনিরুদ্ধ থাপাকে ও পরে রহিম আলিকে অন্যায় ভাবে আঘাত করায় তাঁকে লাল কার্ড দেখান রেফারি রাহুল কুমার গুপ্তা।

স্বাভাবিক ভাবেই দশ জনে হয়ে যাওয়ার পরে কিছুটা হলেও রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে এসসি ইস্টবেঙ্গল। চেন্নাইন এফসি-ও ক্রমশ চাপ বাড়াতে থাকে। পরিস্থিতি এতটাই কঠিন হয়ে যায় যে, ৪৩ মিনিটের মাথায় বিপক্ষের আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে নিজেদের গোলেই বল ঠেলে দিয়েছিলেন ড্যানিয়েল ফক্স। কিন্তু গোল লাইনের সামনে থেকে তা ক্লিয়ার করেন নারায়ণ দাস। বক্সের মধ্যে জেরির থ্রু পেয়ে গোলের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন অনিরুদ্ধ থাপা, যাঁকে আটকাতে গিয়ে এই বিপদ ডেকে আনার উপক্রম করেন অধিনায়ক ফক্স। এক্ষেত্রে গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদার নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে যাওয়ায় বিপত্তি হতে যাচ্ছিল।

দেবজিৎকে এদিন এ ভাবে প্রায়ই নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে আসতে দেখা যায়। আসলে রক্ষণ এতটাই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছিল যে, তাঁর উঠে যাওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকছিল না। কাউন্টার অ্যাটাকে উঠলেও দ্রুত নেমে আসতে পারছিলেন না অঙ্কিত, নেভিল, ফক্স, নারায়ণরা।

দলের তিন সেরা অ্যাটাকারকে নিয়ে খোলা শুরু করলেও এসসি ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণকে তেমন ধারালো মনে হয়নি কখনওই। মাঘোমাকে তাঁর নিজস্ব জায়গা বাঁ দিকের উইংয়ের পরিবর্তে ডানদিক দিয়েই উঠতে দেখা যায় বেশির ভাগ সময়। চোট সারিয়ে মাঠে ফিরে পিলকিংটন এমনিতেই আগের ফর্মে নেই। আর ব্রাইট ইনোবাখারে এ দিন কিছুটা পিছন থেকে খেলছিলেন বলে সে ভাবে সরাসরি আক্রমণে উঠতে পারছিলেন না। যে কয়েকবার সেই চেষ্টা করেন তিনি, প্রত্যেকবারই বিপক্ষের দু-তিনজন ডিফেন্ডারের পাহাড়ায় তিনি আটক হয়ে যান। একাধিকবার শারীরিক আক্রমণের স্বীকারও হতে হয় তাঁকে।

৫১ মিনিটের মাথায় বাঁ দিকের উইং বরাবর উঠে সুরচন্দ্র বক্সের মধ্যে যে লো ক্রসটি দেন পিলকিংটনের উদ্দেশ্যে, তাকে সুবর্ণ সুযোগ ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। পিলকিংটন বলের জায়গায় গিয়ে পা ছোঁয়াতে পারলেই হয়তো গোল পেতেন। কিন্তু তিনি বলের কাছে পৌঁছতেই পারেননি। ৬০ মিনিটের মাথায় স্কট নেভিলের লম্বা ফ্রি কিক থেকে বক্সের মধ্যে বল পেয়ে যে ভাবে ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে গোলকিপারের হাতে তা জমা দিয়ে দেন, তাও তাঁর পরিচিত ফর্মের সঙ্গে মানানসই নয়। ৬৮ মিনিটের মাথায় আরও সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন স্কট নেভিল। নারায়ণ দাসের কর্নারে মাথা ছোঁয়াতে পারলেই হয়তো জালে বল জড়িয়ে দিতে পারতেন তিনি। কিন্তু বলের সামনে গিয়েও মাথা ছোঁয়াতে পারেননি নেভিল।

চেন্নাইনের এাকাধিক আক্রমণ এ দিন দেবজিৎকে প্রায় একা সামলাতে দেখা যায়। সারা ম্যাচে হাফ ডজন সেভ করেন তিনি। ৫৪ মিনিটে বক্সের মাথা থেকে সোজা গোলে শট নিয়েছিলেন চেন্নাইনের ফরোয়ার্ড এসমা গনসালভেস, যা বরাবরের মতো অসাধারণ দক্ষতায় বাঁচিয়ে দেন দেবজিৎ। ৭০ মিনিটের মাথাতেও দেবজিতের জন্যই অবধারিত গোল থেকে বঞ্চিত হয় চেন্নাইন। এসমায়েলের থ্রু থেকে পাওয়া বল নিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়েন রহিম। দেবজিৎ এগিয়ে এসে রহিমের সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দেন। ৮৪ মিনিটের মাথায় ফের বক্সের মধ্যে ছাঙতের জোরালো শট বাঁ দিকে ডাইভ দিয়ে বাঁচান দেবজিৎ। অবধারিত ভাবেই তাঁকে ম্যাচের হিরোর খেতাব দেওয়া হয়।

রবিবার ফতোরদা স্টেডিয়ামে যে জায়গা থেকে ফ্রি কিকে গোল করেছিলেন এটিকে মোহনবাগানের ফরোয়ার্ড এডু গার্সিয়া, ঠিক সেই জায়গাতেই এ দিন ৮৮ মিনিটের মাথায় ফ্রি কিক পান অ্যান্থনি পিলকিংটন। সোজা শটও নেন তিনি, কিন্তু তা ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে উড়ে যায়।

দশ জনে খেলেও এ দিন সমানে বিপক্ষের আক্রমণ আটকায় এসসি ইস্টবেঙ্গল। বহুবার প্রতি আক্রমণেও ওঠে তারা। মাঝে মাঝেই মনে হচ্ছিল না যে, ৩১ মিনিটের পর থেকে দশ জনে খেলছিল ফাউলারের দল। দেবজিতের অসাধারণ গোলকিপিং, রক্ষণে নেভিল, ফক্স, নারায়ণ, অঙ্কিতদের তৎপরতা, মাঘোমা, ব্রাইট, পিলকিংটন, সুরচন্দ্রদের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স— এই সব নিয়েই যথেষ্ট লড়াই করে লাল-হলুদ বাহিনী। দশ জনে খেলে এই লড়াই ও ম্যাচ গোলশূন্য রেখে এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ার মধ্যেও তাই যথেষ্ট কৃতিত্ব প্রাপ্য তাদের।

এসসি ইস্টবেঙ্গল দলদেবজিৎ মজুমদার (গোল), অঙ্কিত মুখার্জি, স্কট নেভিল, ড্যানিয়েল ফক্স, নারায়ণ দাস, মিলন সিং, অজয় ছেত্রী, সুরচন্দ্র সিং, জাক মাঘোমা, অ্যান্থনি পিলকিংটন, ব্রাইট ইনোবাখারে (অ্যারন হলোওয়ে)