আইএসএল-এর প্রথম কলকাতা ডার্বি নিয়ে দুই কোচ দুই মেরুতে

আইএসএল-এর প্রথম কলকাতা ডার্বি

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আইএসএল-এর প্রথম কলকাতা ডার্বি যে তাঁদের পক্ষে একেবারেই সহজ পরীক্ষা নয়, তা বেশ ভালই বুঝতে পারছেন এটিকে মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। যে সময়ে প্রতি ম্যাচে তিন পয়েন্ট না পেলে লিগ টেবলে এক নম্বর জায়গাটা ধরে রাখা সোজা হবে না, সেই সময়ে এমন একটা কঠিন ম্যাচ দুশ্চিন্তায় রেখেছে হাবাসকে।

ডার্বি যখন বিপজ্জনক

গত চার ম্যাচে দশ গোল করে জেতা দলের কোচ বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “ডার্বি মানে একটা অন্য ধরনের ম্যাচ। এই ধরনের ম্যাচে সর্বোচ্চ স্তরের মানসিকতা প্রয়োজন। আর পাঁচটা ম্যাচের থেকে এটা আলাদা। কারণ, এই ম্যাচে যে কোনও সমস্যার সমাধান অন্য ভাবে করতে হয়। এটা আমাদের পক্ষে খুবই বিপজ্জনক ম্যাচ। তা ছাড়া পরিস্থিতিও আলাদা। আমাদের লক্ষ্য একই থাকবে, তিন পয়েন্ট পাওয়া। কিন্তু এসসি ইস্টবেঙ্গল যথেষ্ট ভাল দল। তাই এই ম্যাচ জেতা মোটেই সোজা হবে না”।

প্রথম লেগে দুর্বল এসসি ইস্টবেঙ্গলকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল এটিকে মোহনবাগান। ৪৯ মিনিটে রয় কৃষ্ণা ও ৮৫ মিনিটে মনবীর সিংয়ের দুর্দান্ত দুই গোলে চিরপ্রতিদ্বন্দীদের হারায় সবুজ-মেরুন শিবির। কিন্তু এখন যে লাল-হলুদ শিবির অনেক শক্তিশালী, তা স্বীকার করে নিয়ে হাবাসের দলের তারকা ডিফেন্ডার সন্দেশ ঝিঙ্গন বলছেন, “আগের ডার্বির পরে আমরা দুই দলই উন্নতি করেছি। পরিবর্তনও এসেছে অনেক। ওদের অনেক ভাল ভাল ফুটবলার আছে। আগের বারেও অবশ্য ছিল। ব্রাইট (ইনোবাখারে) অবশ্যই ভাল খেলোয়াড়। ও একাধিক ভাল গোল করেছে। ওদের হারাতে গেলে আমাদের সেরা পারফরম্যান্স দিতেই হবে”।

রয়-নির্ভরতা নয়

এটিকে মোহনবাগান এ পর্যন্ত যে ২৩টি গোল করেছে, তার মধ্যে ১৩টিই দলের ফিজিয়ান তারকা স্ট্রাইকার রয় কৃষ্ণার। তবে ডার্বিতে তাঁকে কতটা বাধা পেতে হবে, তাও বুঝতে পারছেন হাবাস। তাই বলছেন, ডার্বি জিততে গেলে শুধু রয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “রয় কৃষ্ণা দুর্দান্ত ফুটবলার। তবে এই ম্যাচে গোলের জন্য শুধু ওর ওপর নির্ভর করলে হবে না। বাকি দশজনকেও সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তবে আমি চাই যে রয় নিজের ফর্ম ধরে রাখুক। ওর পারফরম্যান্সে আমি খুবই খুশি”।

রক্ষণ ও আক্রমণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার কথাটা তিনি প্রতি ম্যাচেরই আগে ও পরে বলে থাকেন। এ দিন আরও জোর দিয়ে বললেন সেই প্রসঙ্গে। বলেন, “আমাদের পায়ে বল থাকলে আমাদের আক্রমণে উঠতে হবে। বল যখন প্রতিপক্ষের দখলে থাকবে, তখন আমাদের সঠিক রক্ষণ করতে হবে। এই ভূমিকা বদলটা ফুটবলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আক্রমণ ও রক্ষণে সবচেয়ে জরুরি হল একটা দল কখন বল পুনরুদ্ধার করছে”।

ঝিঙ্গন মনে করেন, শুক্রবারের ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তিনি বলেন, “দুই দলই শক্তিশালী। তাই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। সেরা পারফরম্যান্স না দিতে পারলে যে কোনও দলই হারিয়ে দিতে পারে। তাই আমাদের নিজেদের সেরা শক্তি দিয়ে খেলতে হবে। ওদের শক্তি যথাসম্ভব কমানোর চেষ্টা করতে হবে এবং ওই দিনে প্রতিপক্ষের চেয়ে নিজেদের ভাল প্রমাণ করে তিন পয়েন্ট অর্জন করতে হবে”।

সমীহ, কিন্তু ভয় নয়

লিগে এটিকে মোহনবাগানের সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে রয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গল। সবুজ-মেরুন শিবির যেখানে লিগ শীর্ষে, সেখানে লাল-হলুদ বাহিনী ন’নম্বরে। দুই দলের মধ্যে ১৯ পয়েন্টের তফাৎ। নক আউটে ওঠার কোনও সম্ভাবনাই আর নেই তাদের। কিন্তু শুক্রবারের কলকাতা ডার্বিতে ভাল খেলার তাগিদই তাদের চাঙ্গা রেখেছে। তফাৎটা যে এতটাই, তা যাতে একেবারেই না বোঝা যায়, সেই চেষ্টাই করবেন বলে জানিয়ে দিলেন দলের সহকারী কোচ অ্যান্থনি গ্রান্ট।

ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলে দেন, “আমরা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গিয়েছি বলে আমাদের মানসিক শক্তি কমে গিয়েছে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। আমাদের অনেক খেলোয়াড়ই আগে আইএসএলে খেলেনি। কয়েকজন অনেক উন্নতি করেছে। কয়েকজনের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই নক আউটের দৌড় থেকে ছিটকে গেলেও আমরা কিন্তু দমে যাইনি। এখানে রোজই কিছু না কিছু শেখা যায়”।

শুক্রবার মাঠে নামার আগে এটিকে মোহনবাগানকে সমীহই করছেন গ্রান্ট ও তাঁর দল। তাই বলে, তাদের ভয় পেতে রাজি নয় তারা। এই নিয়ে তিনি বলেন, “ওদের দলে খুব ভাল আক্রমণাত্মক ফুটবলার আছে। আমরা ওদের যথেষ্ট শ্রদ্ধাই করব। এই প্রতিদ্বন্দিতা উপভোগও করছি। গত কয়েক বছর ধরে রয় কৃষ্ণা দারুন খেলছে। তবে অবশেষে এটা তো ফুটবলই। প্রতি দলেই কিছু ভাল খেলোয়াড় থাকে। আমরা তাদের সমীহ করি। কিন্তু কাউকে ভয় পাই না”।

সেই ম্যাচ আর এই ম্যাচ

দলের অধিনায়ক ড্যানিয়েল ফক্সকে সঙ্গে নিয়েই এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে বসেছিলেন গ্রান্ট। ফক্স বলেন, “ম্যাচটা অবশ্যই কঠিন হবে। প্রতি ম্যাচই কঠিন। ওডিশার মতো দলের দিকে তাকান। ওদের আক্রমণ ভাল। কেরালা ব্লাস্টার্সের জর্ডান মারে, গ্যারি হুপার রয়েছে। তবে শুক্রবারের ম্যাচে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। আমরা সেই পরীক্ষার অপেক্ষাতেই রয়েছি। ভুললে চলবে না, আমাদেরও আক্রমণ যথেষ্ট ভাল। বেশ কঠিন একটা ম্যাচ হতে চলেছে। তবে আমরা কিন্তু বেশ উপভোগ করছি”।

গতবার ০-২ গোলে হেরেছিল তারা। সে ছিল এসসি ইস্টবেঙ্গলের হিরো আইএসএল অভিষেক। সেই হারের কথা মনে করিয়ে দিতে গ্রান্ট বলেন, “সেই ম্যাচে আমরা সদ্য এক জায়গায় জড়ো হয়েছিলাম মাত্র। দুই সপ্তাহে, খুব বেশি হলে আটটা ট্রেনিং সেশনের পরে সেই ম্যাচে নামি আমরা। একটাও প্র্যাকটিস ম্যাচ পাইনি। এই অবস্থায় সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দী যারা, তাদের সামনে আমাদের ফেলে দেওয়াটা বোধহয় আমাদের প্রতি সুবিচার হয়নি। এমন একটা বড় ম্যাচের আগে আমরা তেমন প্রস্তুতি নিতেই পারিনি। আর ওরা একটা সেট টিম নিয়ে নেমেছিল। তাই আমাদের পক্ষে খুবই কঠিন পরিস্থিতি ছিল”।

বদলে যাওয়া দিন

তবে এখন তাঁদের দল অনেক ভাল জায়গায় রয়েছে বলে দাবি করেন এভার্টনের প্রাক্তন মিডফিল্ডার গ্রান্ট। বলেন, “সময় যত এগিয়েছে, আমরা ততই উন্নতি করেছি। এখন যেমন দেখতে পাচ্ছেন আমাদের খেলোয়াড়রা মাঠে নেমে ফুটবলকে উপভোগ করছে। ম্যাচে নামার জন্য মুখিয়ে থাকছে। দলের স্টাফদের চেষ্টাও ছিল যথেষ্ট। ওরাও খেটেছে, খেলোয়াড়দের শারীরিক ও মানসিক ভাবে চাঙ্গা করেছে। ওদের আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। তার পরে কয়েকজন নতুন খেলোয়াড় দলে এনে দলটার স্বাভাবিক উন্নয়নে গতি এনেছে”।

বুধবার ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে এফসি গোয়ার জয় এসসি ইস্টবেঙ্গলকে লিগ থেকে পুরোপুরি ছিটকে দিলেও শুক্রবার ডার্বিতে চিরপ্রতিদ্বন্দীকে হারিয়ে হাসিমুখে মাঠ ছাড়তে পারলে তা লাল-হলুদ ফুটবলারদের কাছে নক আউটে ওঠার চেয়ে কম তৃপ্তির হবে না বোধহয়।

(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েব সাইট)

(আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)