আইএসএল ২০২০-২১, এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম মুম্বই সিটি এফসি প্রিভিউ

আইএসএল ২০২০-২১, এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম মুম্বই সিটি এফসিছবি এসসি ইস্টবেঙ্গলের টুইটার থেকে

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আইএসএল ২০২০-২১, এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম মুম্বই সিটি এফসি ম্যাচ লাল-হলুদের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর মঞ্চ। চলতি হিরো আইএসএলের শুরুটা একেবারেই ভাল হয়নি এসসি ইস্টবেঙ্গলের। মঙ্গলবার দ্বিতীয় ম্যাচে তাই ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ তাদের সামনে। একসময় ফুটবলার হিসেবে সাফল্য পাওয়া ইংলিশ ফুটবলার রবি ফাউলার এখন কোচ হিসেবে হট সিটে বসে। প্রথম ম্যাচে এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে কৌশলের লড়াইয়ে হার মেনেছেন স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের কাছে। মঙ্গলবার বাম্বোলিমের জিএমসি স্টেডিয়ামে তাঁর লড়াই আর এক স্প্যানিশ মস্তিষ্ক সের্খিও লোবেরার বিরুদ্ধে। আর উল্টোদিকের দলটার নাম যেহেতু মুম্বই সিটি এফসি, তাই লাল-হলুদ শিবিরের কাজটা খুব একটা সহজ হবে না।

চ্যালেঞ্জের মুখে লাল-হলুদ বাহিনী

প্রথম ম্যাচে এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে যে নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে পারেননি তাঁর দল, তা নিজেই কার্যত স্বীকার করে নিয়েছিলেন ফাউলার। দ্বিতীয়ার্ধের চেয়ে প্রথমার্ধে অবশ্য তাঁর দল ভাল ফুটবল খেলেছিল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে প্রতিপক্ষের উন্নত পারফরম্যান্সের জেরে পিছিয়ে পড়ে তারা।

সাত-আট মাস পরে ফুটবলারদের ম্যাচে নামা, সম্পুর্ণ নতুন একটা কম্বিনেশনে প্রথম ম্যাচ খেলা—এগুলোকে বিশেষজ্ঞরা কারণ হিসেবে দেখলেও কোচ ফাউলার কিন্তু তা মানতে নারাজ। তাঁর মতে, প্রস্তুতি মোটেই খারাপ হয়নি তাঁদের। তবে ফুটবলারদের মধ্যে বোঝাপড়া আরও উন্নতি করতে হবে এবং পরিবেশের সঙ্গে আরও দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে। তিনি অবশ্য তাঁদের দলের ছেলেদের নিয়ে আশাবাদী, লিগ যত গড়াবে, তাঁর দল ক্রমশ আরও ধারালো হয়ে উঠবে। তাই শুক্রবার মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে ভুল শুধরে ভাল ফুটবল দেখার আশা করতেই পারেন সমর্থকেরা।

কোচের এই আশার অবশ্য যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ, তিনি জানেন, তাঁর হাতে এমন কয়েকজন ফুটবলার রয়েছেন, যাঁরা ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা রাখেন। প্রথম ম্যাচে সেই ইঙ্গিতও দিয়েছেন গত পাঁচ মরশুম ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলে আসা কঙ্গোর তারকা মিডফিল্ডার জাক মাঘোমা এবং আইরিশ মিডফিল্ডার অ্যান্থনি পিলকিংটন। দু’জনেই মিডফিল্ডার হলেও এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে প্রায় ফরোয়ার্ডের ভূমিকাতেই দেখা যায় এঁদের।  গোলের সুযোগ তৈরি করা থেকে গোলে শট নেওয়ার ক্ষেত্রে এই দু’জনকে তৎপর হতে দেখা যায়। তাঁর একটি গোলমুখী শট বিপক্ষের গোলরক্ষক অরিন্দম ভট্টাচার্য দুর্দান্ত ভাবে না বাঁচালে, প্রথম ম্যাচেই সাফল্য পেতেন ৩২ বছর বয়সি পিলকিংটন।  সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যে এই দুই বিদেশি তারকা ক্রমশ আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন, তার ইঙ্গিত তাঁরা প্রথম ম্যাচেই দেন।

বরং যে পারফরম্যান্স প্রত্যাশা করা হয়েছিল দুই বিদেশি ডিফেন্ডার ইংল্যান্ডের ড্যানিয়েল ফক্স ও অস্ট্রেলিয়ার স্কট নেভিলের কাছ থেকে, তা তাঁরা পূরণ করতে পারেননি। রয় কৃষ্ণার প্রথম গোলটির কারণ কিছুটা হলেও নেভিলের ব্যর্থতা। মনবীর সিংয়ের দ্বিতীয় গোলটি দলের পুরো রক্ষণ বিভাগেরই ব্যর্থতা বলা যায়। ম্যাচের শেষ দিকে প্রায় হতোদ্যম হয়ে পড়েছিল এসসি ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ।

জেজে লালপেখলুয়ার মতো অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ডকে কেন ডার্বির মতো গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন ম্যাচে রিজার্ভ বেঞ্চে বসিয়েই রাখা হল, ম্যাচের পরে সেই প্রশ্ন উঠে যায়। তবে সুরচন্দ্র সিংয়ের ডান উইং দিয়ে আক্রমণে ওঠার ভূমিকা বেশ কার্যকরী হয়ে ওঠে। সুরচন্দ্রের মতো রাণা ঘরামি, লোকেন মেতেই, অভিষেক অম্বেকর, ওয়াহেংবাম লুয়াংদের মতো দলের তরুণ ফুটবলারদের ওপর ফাউলারের আস্থা রাখার প্রবণতাও তাঁর ইতিবাচক দিক বলা যায়। তাঁর এই প্রবণতা ও বিদেশিদের পারফরম্যান্সে উন্নতি দলকে সঠিক দিশায় নিয়ে যেতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আত্মবিশ্বাসে ভরপুর মুম্বই সিটি এফসি

মুম্বই সিটি এফসি প্রথম ম্যাচে অপ্রত্যাশিত ভাবে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের কাছে হেরে যাওয়ার পরে দ্বিতীয় ম্যাচে এফসি গোয়াকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। মুম্বইয়ের দলের কোচ লোবেরা গত বার ছিলেন গোয়ার দলেরই দায়িত্বে। লিগের মাঝখানে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল কোনও কারণ না জানিয়েই। এ বার মুম্বইয়ের দায়িত্ব পেয়ে তিনি গতবার লিগ টেবলে এক নম্বরে থাকা এফসি গোয়া থেকে তুলে নিয়ে আসেন ডিফেন্ডার মান্দার রাও দেশাই এবং তিন বিদেশি মিডফিল্ডার ফ্রান্সের হুগো বুমুস, সেনেগালের মুর্তাদা ফল ও মরক্কোর আহমেদ জাহুকে।

প্রথম ম্যাচের শুরুতেই জাহু লাল কার্ড দেখায় পুরো ম্যাচটাই লোবেরার দলকে দশ জনে খেলতে হয়। সেই ঘটনারই প্রভাব পড়ে মুম্বই সিটি এফসি দলটার ওপর এবং শেষ পর্যন্ত হেরে যায় তারা। নতুন কম্বিনেশন নিয়ে প্রথম দিনই এমন একটা আকস্মিক ধাক্কা সামলানো সম্ভব হয়নি তাঁর দলের। যদিও স্প্যানিশ কোচ মনে করেন, প্রথম ম্যাচেও তাঁদেরই আধিপত্য ছিল, কিন্তু সে দিন বেশি সুযোগ তৈরি করতে না পারার মাশুল দিতে হয়েছিল তাঁদের।

এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে অবশ্য তাঁর দলের ছেলেরা অনেক বেশি সুযোগ তৈরি করেন এবং ইনজুরি টাইমে গোল করে দলকে কষ্টার্জিত জয় এনে দেন ইংল্যান্ড থেকে আসা ফরোয়ার্ড অ্যাডাম লে ফন্দ্রে। এই ম্যাচে আবার শেষ ৪৫ মিনিট দশ জনে খেলতে হয় এফসি গোয়াকে। তাতেও তাঁদের গোলের মুখ খোলা বেশ কষ্টকর হয়ে ওঠে মুম্বইয়ের পক্ষে এবং একেবারে শেষ মুহূর্তের গোলে আসে জয়। এমন একটা কষ্টার্জিত জয়ের পরে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নিয়েই মঙ্গলবার এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে মুম্বই সিটি এফসি।

গত মরশুমের মাঝে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত সিটি ফুটবল গ্রুপ ক্লাবটির দায়িত্ব নেওয়ার পরে এ বার অনেকটাই বদল এসেছে দলে। প্রথমেই তারা কোচ বদল করেন এবং দল বাছাইয়ের দায়িত্ব দিয়ে দেয় তাঁকে। এফসি গোয়া থেকে চার নির্ভরযোগ্য ফুটবলারকে তুলে আনা ছাড়াও লোবেরা স্প্যানিশ মিডফিল্ডার হার্নান সান্তানাকে নিয়ে আসেন দলে। ইউডি লা পালমায় লোবেরার প্রশিক্ষণে খেলেছিলেন সান্তানা। তাঁর সঙ্গে রাওলিন বোর্জেস, রেইনিয়ে ফার্নান্ডেজরা মাঝমাঠকে যথেষ্ট শক্তি জোগাচ্ছেন। ডিফেন্ডার সার্থক গোলুই ও মিডফিল্ডার সৌরভ দাসকেও মাঠে দেখা যেতে পারে মঙ্গলবার।

আক্রমণ বিভাগকে আগের চেয়ে ধারালো করে তুলতে গত বার কেরালা ব্লাস্টার্সের জার্সি গায়ে একের পর এক গোল পাওয়া (মোট ১৫) ফরাসি স্ট্রাইকার বাবার্থোলোমিউ ওগবেচেকে নিয়ে আসা হয়েছে যেমন, তেমনই এ লিগের ক্লাব সিডনি এফসি-র হয়ে ৬৭ ম্যাচে ৪৫ গোল করে আসা লে ফন্দ্রেকেও সই করানো হয়। এঁরা দু’জন সেরা ফর্মে চলে এলে চলতি হিরো আইএসএলের সেরা আক্রমণ বিভাগের দৌড়ে এটিকে মোহনবাগানের রয় কৃষ্ণা-ডেভিড উইলিয়ামস জুটিকে টেক্কা দিতে পারেন। মঙ্গলবার এই দু’জনকে সামলানো এসসি ইস্টবেঙ্গলের বিদেশি ডিফেন্ডার জুটির প্রধান কাজ হয়ে উঠতে পারে।

(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)

(খেলার জগতের আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)