আইএসএল ২০২০-২১, এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম হায়দরাবাদ এফসি ম্যাচ

আইএসএল ২০২০-২১, এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম হায়দরাবাদ এফসি

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আইএসএল ২০২০-২১, এসসি ইস্টবেঙ্গল বনাম হায়দরাবাদ এফসি ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এক গোলে এগিয়ে থাকার পরেও হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করল এসসি ইস্টবেঙ্গল। শুক্রবার তিলক ময়দান স্টেডিয়ামে চলতি হিরো আইএসএলের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে প্রায় হাতের মুঠোয় আসা তিন পয়েন্ট হাতছাড়া করে মাঠ ছাড়তে হল লাল-হলুদ বাহিনীকে। অন্যদিকে, কলকাতার দলকে সারাক্ষণ চাপে রেখেও কোনওরকমে ম্যাচ ড্র করায় সেরা চারে পৌঁছনোর দৌড়ে পিছিয়ে পড়ল হায়দরাবাদ এফসি।

শুক্রবার প্রথমার্ধে দাপুটে ফুটবল খেলেও গোল না পাওয়া হায়দরাবাদ এফসি দ্বিতীয়ার্ধেও শুরু থেকে বিপক্ষকে চাপে রাখা শুরু করে। কিন্তু ৫৯ মিনিটে ওঠা পাল্টা আক্রমণ থেকে হঠাৎ গোল করে দলকে এগিয়ে দেন নাইজেরীয় স্ট্রাইকার ব্রাইট ইনোবাখারে। ব্যবধান বাড়ানোরও সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন ব্রাইট। কিন্তু সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়। দুর্ভেদ্য ডিফেন্সের তৎপরতায় এই ব্যবধান স্টপেজ টাইম পর্যন্ত বজায় রাখতে পেরেছিল লাল-হলুদ বাহিনী। কিন্তু স্টপেজ টাইমে রক্ষণের মুহূর্তের ভুলে গোল শোধ করে দেন হায়দরাবাদের দলের স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড আরিদানে সান্তানা।

শুক্রবার তিলক ময়দানে এই ফলের জেরে সেমিফাইনালে জায়গা পাকা করে ফেলল মুম্বই সিটি এফসি (১৬ ম্যাচে ৩৪) ও এটিকে মোহনবাগান (১৬ ম্যাচে ৩৩)। ১৭ ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে হায়দরাবাদ আপাতত তিন নম্বরে থাকলেও এফসি গোয়া (১৬ ম্যাচে ২৩), নর্থইস্ট ইউনাইটেডের (১৬ ম্যাচে ২৩) ম্যাচের সংখ্যা যেহেতু কম, তাই তাদের সেরা চারে টিকে থাকার লড়াইটা কঠিন হয়ে গেল।

গত ম্যাচের প্রথম এগারো নিয়েই এ দিন মাঠে নামে এসসি ইস্টবেঙ্গল। এই প্রথম চলতি হিরো আইএসএলে পরপর দুই ম্যাচে একই দল নিয়ে নামল তারা। তবে এ দিন অ্যান্থনি পিলকিংটনকে একেবারে সামনে রেখে তাঁর পিছনে জাক মাঘোমা, ব্রাইট ইনোবাখারে ও অঙ্কিত মুখার্জিকে রাখা হয়।

অন্য দিকে হায়দরাবাদ এফসি এ দিন প্রথম এগারোয় দুটি পরিবর্তন করে মাঠে নামে। লিস্টন কোলাসো ও জোয়েল চিয়ানিজ নামেন মহম্মদ ইয়াসির ও ফ্রান সান্দাজার জায়গায়। তারাও এসসি ইস্টবেঙ্গলের মতো ৪-২-৩-১-এ দল সাজায়। কিন্তু শুরু থেকে বিপক্ষকে বেশি চাপ রাখার প্রবণতা দেখা যায় হায়দরাবাদের ফুটবলারদের মধ্যে। মাঝমাঠেও তারা কমই জায়গা দিচ্ছিল লাল-হলুদ শিবিরকে।

দুই দিকের উইং দিয়ে সমানে আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছিল নিজামের শহরের দল। কিন্তু বারবার গোলের সামনে গিয়ে ব্যর্থ হচ্ছিল তারা। ইস্টবেঙ্গল ফরোয়ার্ডদের প্রথমার্ধে সে ভাবে বিপক্ষের শিবিরে হানা দিতে দেখা যায়নি। তাঁরা বিপক্ষের আক্রমণ সামলাতেই ব্যস্ত ছিলেন।

২১ মিনিটের মাথায় মাঝ মাঠ থেকে লুই সাস্ত্রের বাড়ানো বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন জোয়েল চিয়ানিজ, যেখানে তাঁকে আটকাতে ব্যর্থ হন এসসি ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডাররা। গোল ছেড়ে বেরিয়ে এসে গোলকিপার সুব্রত পাল চিয়ানিজের সামনে ডাইভ দিয়ে বল নিজের দখলে না নিলে অবধারিত গোল পেত হায়দরাবাদ এফসি। ৩৪ মিনিটের মাথায় বক্সের মাথা থেকে নেওয়া সাস্ত্রের গোলমুখী শট ক্রসবারের সামান্য ওপর দিয়ে উড়ে যায়।

প্রথমার্ধের শেষ দিকে এসসি ইস্টবেঙ্গল পাল্টা চাপ বাড়াতে শুরু করে। ৪০ মিনিটের মাথায় ডানদিকের উইং দিয়ে উঠে অঙ্কিত বিপক্ষের বক্সের মধ্যে ঢুকে গোলে শট নিয়েছিলেন, যা গোলকিপার লক্ষ্মীকান্ত কাট্টিমানির পায়ে লেগে ফিরে এলে ফের হেড করেন অঙ্কিত। এ বার বল জমা হয়ে যায় গোলকিপারের হাতে। এই আক্রমণের দুমিনিট পরেই ডান দিক দিয়েই উঠে বক্সের বাঁ দিকের কোণ থেকে প্রায় ৪৫ ডিগ্রির কোণাকুণি গোলমুখী শট নেন পিলকিংটন। কিন্তু কাট্টিমানি লাফিয়ে উঠে হাত ছুঁইয়ে বল বার করে দেন।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ফের এসসি ইস্টবেঙ্গলের ওপর চাপ বজায় রেখে যায় হায়দরাবাদ এফসি। আক্রমণে উঠতে উঠতে একটা সময় হায়দরাবাদের গোটা দলটাই বিপক্ষের গোল এরিয়ায় চলে যায়। ৫৯ মিনিটের মাথায় এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই বিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে দেন নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার ব্রাইট ইনোবাখারে।

(আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

মাঝমাঠ থেকে পিলকিংটনের হেড থেকে পাওায়া বল নিয়ে যখন ব্রাইট একটা স্প্রিন্টে বিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েন, তখন তাঁর সামনে গোলকিপার ছাড়া কেউ ছিলেন না। ডান পায়ের আউটস্টেপে ছোট্ট একটা টোকায় গোলে বল জড়িয়ে দেন তিনি। এই গোলের কয়েক সেকেন্ড আগেই বিপজ্জনক আক্রমণ শানিয়েছিল হায়দরাবাদ। আরিদানে সান্তানার শট ড্যানিয়েল ফক্সের পায়ে লেগে গোলের দিকে ছিটকে যায়, যা পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এই ফিরতি বলেই মাথা ছুঁইয়ে ব্রাইটকে গোলের বল দেন পিলকিংটন।

ফের পাল্টা আক্রমণ থেকে ব্যবধান বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন ব্রাইট। ৮২ মিনিটের মাথায় বিপক্ষের বক্সের মধ্যে অ্যারন হলোওয়ের বাড়ানো পাস নিয়ে গোলের দিকে এগিয়ে গেলেও গোলকিপারের পায়ে পা লেগে মাঠে পড়ে যাওয়ায় সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে হয় তাঁকে। পেনাল্টির দাবি করেও সুফল পাননি এসসি ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়রা।

গোল খাওয়ার পর থেকেই চাপ বাড়াতে থাকে হায়দরাবাদ। ৭৩ মিনিটের মাথায় প্রায় গোল শোধ করেই দিয়েছিলেন ফ্রান সান্দাজা। আকাশ মিশ্রর লো ক্রস থেকে বল জালে জড়িয়ে দিলেও তিনি অফ সাইড থাকায় সেই গোল বাতিল হয়ে যায়। ৭৭ মিনিটেও লিসটন কোলাসের ক্রস বুক দিয়ে নামিয়ে গোলের দিকে শট নেন সান্তানা। কিন্তু তা গোলের বাইরে চলে যায়। হায়দরাবাদ বারবার আক্রমণে উঠলেও লাল-হলুদ ডিফেন্সের তৎপরতায় প্রত্যেকবারই তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

তবে গোলশোধের মরিয়া চেষ্টা করে ৯২ মিনিটের মাথায় সফল হন সান্তানা। ডান দিক দিয়ে ওঠা রোহিত দানু বক্সের মধ্যে বল দেন ফ্রান সান্দাজাকে। তিনি স্কোয়ার পাস করেন গোলের সামনে চলে আসা সান্তানাকে। বল গোলে ঠেলে দিতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। লাল-হলুদ ডিফেন্সের মুহূর্তের ভুলে তিন পয়েন্ট হাতছাড়া হয় এসসি ইস্টবেঙ্গলের। স্টপেজ টাইমের শেষ মুহূর্তে বিপক্ষের বক্সের সামনে ফ্রিকিক পায় এসসি ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু সেই সুযোগও কাজে লাগাতে পারেননি মাঘোমা। সোজা ওয়ালে শট নেন তিনি।

এসসি ইস্টবেঙ্গল দলসুব্রত পাল (গোল), সার্থক গলুই, রাজু গায়কোয়াড়, ড্যানিয়েল ফক্স, নারায়ণ দাস, অঙ্কিত মুখার্জি, ম্যাটি স্টাইনমান, সৌরভ দাস (ওয়াহেংবাম লুয়াং), জাক মাঘোমা, অ্যান্থনি পিলকিংটন (অ্যারন হলোওয়ে), ব্রাইট ইনোবাখারে।

(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)