জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ভাঙাচোরা দল নিয়ে নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে ৩-১ গোলে হারিয়ে লিগ টেবলের দু’নম্বরে উঠে পড়ল গতবারের রানার্স আপ এটিকে মোহনবাগান (ISL 8 NEFC vs ATKMB)। শনিবার ফতোরদার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ভিপি সুহেরের গোলে নর্থইস্ট এগিয়ে গেলেও জনি কাউকো, লিস্টন কোলাসো ও মনবীর সিংয়ের গোলে জয়ের রাস্তা পরিষ্কার করে ফেলে সবুজ-মেরুন শিবির। তবে যে গোলের সুযোগগুলি পেয়েছিল তারা, সেগুলির অর্ধেকও কাজে লাগাতে পারলে ৫-১-এ জিততে পারত কলকাতার দল।
এই জয়ের ফলে ১৪ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের দুই নম্বরে উঠে পড়ল এটিকে মোহনবাগান। শীর্ষে ১৬ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট পাওয়া হায়দরাবাদ এফসি। জামশেদপুর ও বেঙ্গালুরু এফসি যথাক্রমে ২৫ ও ২৩ পয়েন্ট পেয়ে সেরা চারের শেষ দুই স্থানে। রবিবার মুম্বই সিটি এফসি ও ওডিশা এফসি-র মধ্যে ম্যাচে ফয়সালা হলে বেঙ্গালুরু এফসি সেরা চার থেকে ফের ছিটকে যাবে। সোমবার কেরালা ব্লাস্টার্স এসসি ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে পারলে তারা ফের সেরা চারে ঢুকে পড়বে। এখন লিগের যা অবস্থা, তাতে প্রায় রোজই ম্যাচের পরে লিগ টেবলের চেহারা পাল্টে যেতে পারে।
শনিবার কার্যত ভাঙা দল নিয়ে খেলতে নামে এটিকে মোহনবাগান। নেই-এর তালিকায় ছিলেন রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস, হুগো বুমৌস ও কার্ল ম্যাকহিউ। ফলে মাত্র দুই বিদেশিকে নিয়ে প্রথম এগারো সাজাতে হয় কোচ হুয়ান ফেরান্দোকে। আক্রমণের তিন প্রধান স্তম্ভ না থাকায় দলের আক্রমণ বিভাগ কতটা দুর্বল হয়ে পড়ে, তা আন্দাজ করা যেতেই পারে। কিন্তু কোলাসো, কাউকো, মনবীররা সেই দূর্বলতা একেবারেই বুঝতে দেননি। তিনটি গোল করলেও এ দিন আটটি শট গোলে ছিল এটিকে মোহনবাগানের (নীচে পরিসংখ্যান দেখুন)। একাই চারটি শট নেন মনবীর, যেগুলি জালে জড়াতে ব্যর্থ হন তিনি।
শুরু থেকেই তাদের আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়া দেখে একেবারেই বোঝার উপায় ছিল না যে আক্রমণ বিভাগের নির্ভরযোগ্য তারকাদের ছাড়াই নেমেছে সবুজ-মেরুন শিবির। দশ মিনিটের মধ্যেই এক গোলে এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল সবুজ-মেরুন শিবিরের। কিন্তু বরাবরের মতো মনবীর সিংয়ের ভুলে তা সম্ভব হয়নি। এর পরে ঘন ঘন আক্রমণে ওঠে এটিকে মোহনবাগান। পুরো দলটাই এ দিন যথেষ্ট উজ্জীবিত ফুটবল খেলে। রয়, ডেভিড, হুগোদের অভাব পূরণ করার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠেন লিস্টন, মনবীররা। তবে শুধু মনবীরই নন, অবিশ্বাস্য গোলের সুযোগ নষ্ট করেন লিস্টনও।
দশ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে তিরির বাড়ানো বল নিয়ে বক্সে ঢুকেও লক্ষ্যপূরণ করতে ব্যর্থ হন মনবীর। এর চার মিনিট পরে ফের গোলের কাছ থেকে গোলে শট নিতে ব্যর্থ হন তিনি। ঘন ঘন আক্রমণে উঠতে গিয়ে তাদের রক্ষণও প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। এই সুযোগ নিয়ে ১৭ মিনিটের মাথায় প্রতি আক্রমণে উঠে বক্সের মাথায় প্রাক্তন এটিকে মোহনবাগানি মার্সেলিনহোর পাস থেকে বক্সে ঢুকে দুর্দান্ত গোল করে নর্থইস্টকে এগিয়ে দেন প্রাক্তন মোহনবাগানি ভিপি সুহের (১-০)। মার্সেলিনহোর পিছন থেকে দৌড়ে তাঁর সামনে গিয়ে বলটি নেন সুহের এবং প্রথম পোস্টে শট নেন। ওই পোস্টেই দাঁড়িয়ে সেই শট আটকাতে পারেননি গোলকিপার অমরিন্দর।
তবে বেশিক্ষণ ব্যবধান বজায় রাখতে পারেনি নর্থইস্ট ইউনাইটেড। ২২ মিনিটের মাথায় গোল শোধ করেন জনি কাউকো। এ বার তিনি লিস্টনের পাস পেয়ে বিপক্ষের বক্সের মাথা থেকে সরাসরি গোলে শট নেন ও সমতা আনতে সফল হন। তাঁর গতিতে ঠাসা শট আটকানোর সুযোগই পাননি নর্থইস্টের গোলকিপার শুভাশিস রায়চৌধুরি (১-১)।
ম্যাচের ২২ মিনিটের মধ্যে দু’টি গোল হয় বটে, তবে এই সময়ে আরও অন্তত দু’টি অবধারিত গোলের সুযোগ নষ্ট করেন সবুজ-মেরুন ফুটবলাররা। ২৭ মিনিটের মাথায় ডান দিক দিয়ে ওঠা প্রবীরের মাটি ঘেঁষা ক্রস দীপক টাঙরি কাউকোকো দিলে তিনি ফেরে গোলে জোরালো শট মারেন, কিন্তু তা ব্লক করে দেন এক ডিফেন্ডার।
৪২ মিনিটের মাথায় ডানদিক থেকে প্রবীরের পাস থেকে ফের বিপক্ষের গোলের সামনে থেকে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়ে যান মনবীর। কিন্তু তাঁর দুর্বল শট বাঁচিয়ে দেন গোলকিপার শুভাশিস। তবে প্রথমার্ধের নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে যে ভাবে ব্যবধান বাড়ান লিস্টন, তাকে অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। মাঝমাঠ থেকে আসা বল বক্সের বাঁ দিক থেকে মাইনাস করেন কাউকো। সেই বল নিয়ে বক্সের মাঝখান দিয়ে উঠে দুই ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে সোজা গোলে শট নেন কোলাসো (১-২)। চলতি লিগে সাত নম্বর গোলটি হয়ে গেল তাঁর।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে প্রবীরের বদলে নামেন সন্দেশ ঝিঙ্গন। কোচ রক্ষণ শক্তিশালী করার চেষ্টা করলেও ৫২ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়িয়ে নেন মনবীর। এই গোলেও অবদান ছিল লিস্টন কোলাসোর। বক্সের বাইরে থেকে তিনি ফরোয়ার্ড পাস দেন মনবীরকে এবং সেই বল নিয়ে বক্সে ঢুকে এক ডিফেন্ডারকে ধোঁকা দিয়ে সোজা গোলে শট নেন তিনি (১-৩)।
তৃতীয় গোলের পর থেকেই আরও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে সবুজ-মেরুন শিবির। রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে মাঠে নামেন কিয়ান নাসিরি ও বিদ্যানন্দ সিং। লিস্টন ও দীপক টাঙরির জায়গায় নামেন তাঁরা। রিজার্ভ বেঞ্চে শক্তি ঠিক কতটা, তা বুঝে নেওয়ার জন্যই এই পরিবর্তনগুলো করেন ফেরান্দো। জনি কাউকোর জায়গায় নামেন অভিষেক সূর্যবংশী। অন্য দিকে, গোলের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে মার্সেলিনহোর জায়গায় দেশর্ন ব্রাউনকে নামান খালিদ জামিল। তবে তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। ততক্ষণে নিজেদের এলাকায় কার্যত দেওয়াল তুলে দেয় এটিকে মোহনবাগান।
তবু ম্যাচের শেষ দিকে নর্থইস্ট বিপক্ষের ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়। ৮৫ মিনিটের মাথায় হারনান সান্তানার গতিপথ বদলানো করা শট বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। তার আগে ৮২ মিনিটের মাথায় মনবীর বল নিয়ে বক্সের দিকে এগিয়ে যান, কিন্তু বক্সের বাইরে বেরিয়ে এসে তা ব্লক করেন গোলকিপার শুভাশিস। শেষ মিনিটেও মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে গোলের অনবদ্য সুযোগ পান মনবীর। কিন্তু এ বার বক্সে ঢুকে গোলকিপারের গায়ে শট মারেন তিনি। মনবীর এ দিন সুযোগগুলি কাজে লাগাতে পারলে আরও অন্তত চারটি গোল পেতে পারতেন। তাঁর দলও জিতত ৭-১ গোলে। তবে বলতেই হবে যে, সেরা তারকাদের ছাড়াই জিতে ফেরান্দোর দলের ভারতীয় ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস একলাফে অনেকটা বেড়ে গেল, যা কাজে লাগবে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে পরের ম্যাচে।
এটিকে মোহনবাগান দল: অমরিন্দর সিং (গোল), তিরি, আশুতোষ মেহতা, শুভাশিস বোস, প্রীতম কোটাল (অধি), প্রবীর দাস (সন্দেশ ঝিঙ্গন), জনি কাউকো (অভিষেক সূর্যবংশী), দীপক টাঙরি (বিদ্যানন্দ সিং), লেনি রড্রিগেজ (গুরসিমরত সিং), মনবীর সিং, লিস্টন কোলাসো (কিয়ান নাসিরি)
(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েবসাইট)
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)