জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: কাশ্মীরে বাতিল ফুটবল কারন ভয়। পুলওয়ামা আক্রমণের প্রভাব পড়েছে গোটা দেশে। যন্ত্রণায়, আতঙ্কে কুঁকড়ে গিয়েছে কাশ্মীর ভ্যালি। যে রাজ্যে শান্তির খোঁজে যায় মানুষ সে তো সেই কবে থেকেই আশান্ত। একটু শান্তি দেখা দিলেই ছুটে যায় মানুষ। কাশ্মীর দেশ বিদেশের মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো। সেখানেই কখনও জ্বলে ওঠে আগুন, কখনও রক্তাক্ত হয় দেশের সন্তানের রক্ষে। বাবা-মায়ের কোল খালি করে বালক থেকে সদ্য যুবক হওয়া ছেলেটা বন্দুক হাতে ভিড়ে যায় কোনও এক অজানা টানে। তার পর, একরাশ অন্ধকার। উড়ে যায় সেনা বোঝাই গাড়ি। ওই যে গাড়িটা এসে সেনা বোঝাই গাড়িতে ধাক্কা মাড়ল তার মধ্যেই ছিল আদিল আহমেদ দার। ওর পরিবার তো এখনও ওই কাশ্মীরেই। জানতেনই না তাঁরা। ছেলে আরডিএক্স বোঝাই গাড়ি নিয়ে ছুটে আসছে মৃত্যুর মুখে। নিজে মরছে, মারছে হাজার।
সদ্য পুলওয়ামায় সিআরপিএফ জওয়ানদের উপর আক্রমণের কথাই এখন মানুষের মুখে মুখে। একটা আক্রমণে শহীদ ৪০জন সেনা জওয়ানের পরিবার যখন অন্ধকার ঘরে গুমরে কেঁদে উঠছে তখন দেশ জুড়ে তৈরি হচ্ছে আরও এক আক্রমণ। ‘‘তুমি কাশ্মীরি? মারো তা হলে?’ তুমি কাশ্মীরি? দূর হয়ে যাও এই রাজ্য, এই দেশ থেকে।’’ ‘‘তুমি কাশ্মীরি? তা হলে তোমার সঙ্গে কথা বলবে না আর কেউ।’’
কাশ্মীর! একটা ইতিহাস। কাশ্মীর ভালবাসার রূপকথা। কাশ্মীর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সন্তানদের ঘর। একটা সময় কাশ্মীর ভাবলেই ওই গানটা মনে পড়ত, ‘‘চাঁদ সা রওশন চেহেরা, ঝিল সি নীলি আঁখে।’’ মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে গাইছেন শামি কাপুর শর্মিলা ঠাকুরকে লক্ষ্য করে। তার পর কাশ্মীর মানে ‘‘বুমরো বুমরো, শাম রঙ বুমরো, আয়ে হো কিস দুনিয়া সে।’’ সেই পর্যন্ত ঠিক ছিল।
আদিল আহমেদ দার, বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে ছেলের জঙ্গি দলে নাম লেখানোর কথা জানতেন না বাবা!
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে উরিতে জঙ্গি আক্রমণে শহীদ হয়েছিলেন সাত সেনা জওয়ান। সেই আক্রমণ নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। তার পর সেই বিখ্যাত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। সদ্য সিনেমাটাও মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু আজ যেন সব অদ্ভুতভাবে তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে। ৪০জন সেনা দেশের স্বার্থে মুহূর্তের মধ্যে উড়ে গেল শূন্যে। ছিটগে গেল নিথর শরীরগুলো। ঠিক তখন কোনও স্ত্রী তাঁর জঠরে আগামীর স্বপ্নকে লালন করছেন। কোনও মা চোখ খুলছেন ছেলের আসার প্রতিক্ষায়। কোনও সন্তান বাবার হাত ধরে আরও অনেকটা পথ হাঁটার অপেক্ষায়।
কিন্তু কোনওটাই হল না। ওঁরা ফিরল কফিনবন্দী হয়ে, জাতীয় পতাকায় ঢেকে। উঠল স্লোগান, ফুলে ভরে উঠল কফিন। নেতা-মন্ত্রী, আমলা কে না আশ্বাস দিল। এক সেনার স্ত্রী তার পরও বললেন, যুদ্ধ চাই না। শান্তি চাই।
কাশ্মীরকে নতুন দিশা দেখিয়েছে ফুটবল। রিয়েল কাশ্মীর এফসি আই লিগ খেলছে। নিয়মিত শ্রীনগরে হচ্ছে আই লিগের খেলা। গ্যালারি ভরাচ্ছেন কাশ্মীরি যুবকরা। গলা ফাটাচ্ছে দলের হয়ে। সেই দলে কি কখনও ছিলেন আদিল আহমেদ দার? ও আজ জানতেই পারল না, তাঁর কাশ্মীরে আর খেলতে যেতে চাইছে না কোনও ফুটবল দল। যা নিয়ে তোলপাড় ভারতীয় ফুটবল। সোমবার শ্রীনগরের মাঠ যা কিছুদিন আগেই ঢেকে গিয়েছিল বরফের চাদরে আজ তা পরিষ্কার। কিন্তু রক্তের ছিটে লেগেছে বরফঘেরা কাশ্মীরে। পঞ্জাব থেকে তাই কাশ্মীরের মাটিতে ফুটবল পায়ে নামার সাহস দেখাতে পারল না মিনার্ভা পঞ্জাব।
২৮ ফেব্রুয়ারি, সেখানে খেলতে যেতে চায় না ইস্টবেঙ্গল। আর্জি জানিয়েছে দিন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য। পরিবেশ, পরিস্থিতি সঠিক হওয়ার জন্য। রিয়েল কাশ্মীর বার্তা দিল, ‘‘ঘৃণা নয়, ক্ষততে প্রলেপ লাগাতে পারত এই ফুটবল। নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের।’’ আসুন আসুন আসুন, ফুটবল খেলুন। কিন্তু প্রানের ভয়কে অস্বীকার করে কী করে। যেখানে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা নেই সেখানে একটা ফুটবল দলের কী গুরুত্ব।
আবার ছন্দে ফিরবে কাশ্মীর। ভ্রমনার্থীরা যখন জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়ে ধরে প্রকৃতির শোভা দেখতে দেখতে ঘোরার আনন্দে মাতবে তখন এই দেশের অনেকগুলো গ্রামে ফুলের মালায় সাজবে কোনও ছবি। জ্বলে উঠবে প্রদীপ। লুকিয়ে চোখের জল ফেলবেন কোনও মা, স্ত্রী, সন্তান, বাবা, বন্ধু। আবার ফুটবল হবে। রিয়েল কাশ্মীরের জন্য গলা ফাঁটাবে গোটা রাজ্য। মিনার্ভা, ইস্টবেঙ্গলরা খেলতে যাবে। গ্যালারির ভিড়ে হাজার হাজার আদিল আহমেদ দাররা বন্দুক ছেড়ে ফুটবলপ্রেমে মাতবেন। সেদিনই হবে ফুটবলের জয় আতঙ্কের পরাজয়।
ছবি: রিয়েল কাশ্মীরের ফেসবুক থেকে
(পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা সংক্রান্ত খবর পড়তে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)