অলিম্পিক ২০২০ হকি কোয়ার্টার ফাইনাল: ইতিহাস গড়ে সেমিতে ভারত

অলিম্পিক ২০২০ হকি কোয়ার্টার ফাইনালঅলিম্পিক ২০২০ হকি কোয়ার্টার ফাইনাল

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: অলিম্পিক ২০২০ হকি কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ ভারতের কাছে এক অন্য লক্ষ্য নিয়ে এসেছিল। অলিম্পিকে ঐতিহাসিক ম্যাচের তকমা নিয়ে রবিবার গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ খেলতে নেমেছিল ভারতীয় হকি দল। যদি এই ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে পৌঁছে যেতে পারে তাহলে ৪১ বছর পর এই প্রথম এই কৃতিত্ব অর্জন করবে ভারতীয় হকি। স্বভাবতই বিপুল পরিমাণ চাপ নিয়েই এই ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন শ্রীজেশ, মনপ্রীতরা। কিন্তু ম্যাচ যত এগিয়েছে  ভারতীয় হকি দল সেই চাপকেই তাঁদের শক্তি বানিয়ে গ্রেট ব্রিটেনের বিরুদ্ধে লড়াই দিয়েছে। আর সেখানে সফল তারা। ইতিহাস গড়ে অলিম্পিকের সেমিফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে ভারতীয় হকি দল। খেলার ফল ৩-১।

শুরুতেই পেনাল্টি কর্ণার তুলে নিয়েছিল গ্রেট ব্রিটেন। কিন্তু ভারতের রক্ষণে আটকে যায়। এই ম্যাচে দু’পক্ষই খুব কম পেনাল্টি কর্নার পেয়েছে। প্রথম থেকেই গোলের জন্য ছটফট করতে থাকা ভারতীয় দল ম্যাচের প্রথম কোয়ার্টারে দুরন্ত গোলে ভারতকে এগিয়ে দেন দিলপ্রীত সিং। ভারতের মাঝ মাঠ থেকে তৈরি হওয়া আক্রমণে ছিটকে যায় গ্রেট ব্রিটেন রক্ষণ। যার ফলে গোলের সামনে একা পড়ে যান গোলকিপার। আর সেই সুযোগ হাতছাড়া করেননি ভারতের দিলপ্রীত। দুরন্ত শটে গোল কিপারের পায়ের ফাঁক দিয়ে গোলে বল পাঠান তিনি। ১৯৮০-র পর আবার অলিম্পিকের সেমিফাইনালে পৌঁছনোর স্বপ্ন উজ্জ্বল হতে শুরু করে তখন থেকেই।

প্রথম কোয়ার্টার শেষ হয় ভারতের পক্ষে ১-০ গোলেই। যদিও এই ফল শেষ পর্যন্ত ধরে রাখায় অনেকটাই কৃতিত্ব ভারতীয় গোলকিপার শ্রীজেশের। প্রথম কোয়ার্টারের শেষ মুহূর্তে দক্ষতার সঙ্গে গ্রেট ব্রিটেনের আক্রমণ শরীর দিয়ে না বাঁচালে ফল অন্যরকম হতেই পারত। সমতায় ফিরে প্রথম কোয়ার্টার শেষ করতে পারত ব্রিটেন। ১ গোলে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় কোয়ার্টারে আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বাড়িয়ে মাঠে নেমেছিল ভারতীয় হকি দল।

অলিম্পিক হকিতে ভারতের পদক তালিকা

সোনা জয়: ১৯২৮ আমস্টারডম, ১৯৩২ লস অ্যাঞ্জেলেস, ১৯৩৬ বার্লিন, ১৯৪৮ লন্ডন, ১৯৫২ হেলসেঙ্কি, ১৯৫৬ মেলবোর্ন, ১৯৬৪ টোকিও, ১৯৮০ মস্কো।

রুপো জয়: ১৯৬০ রোম

ব্রোঞ্জ জয়: ১৯৬৮ মেক্সিকো, ১৯৭২ মিউনিখ

তা প্রমাণ হল কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই যখন গুরজন্তের গোলে ২-০ করল ভারত। ভারতের খেলায় কোনও ভাবেই সেই চাপ লক্ষ্য করা যায়নি একবারের জন্যেও। বোঝা যায়নি এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে গোটা দল। দ্বিতীয় কোয়াটার থেকে বাড়ল খেলার গতিও আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে দুই পক্ষকেই পুরো সময়টা ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল। একইভাবে গোলের নিচে দুই গোল কিপারকেও। শুধু তৃতীয় কোয়ার্টারে গোল পেল না ভারত। বাকি তিন কোয়ার্টারে ৩ গোল তুলে নিয়ে গ্রেট ব্রিটেনের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দিল গ্রাহাম রিডের ছেলেরা।

দুই কোয়ার্টারে দুই গোল করে প্রথমার্ধ শেষে ভারত ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়ে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে দিয়েছিল। প্রথম কোয়ার্টারে ১, দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ১ গোল ভারতীয় দলের ধারাবাহিকতার প্রমান। তৃতীয় কোয়ার্টারে না পেলেও চতুর্থ কোয়ার্টারে আরও ১। প্রসঙ্গত তিনটিই ছিল ফিল্ড গোল। সঙ্গে দারুণ ফিনিশ। তৃতীয় কোয়ার্টারের শেষ মিনিটে পেনাল্টি কর্নার থেকে ব্যবধান কমায় গ্রেট ব্রিটেন। ভারতের সামনে ছিল ব্যবধান ধরে রাখার লক্ষ্য সঙ্গে ব্যবধান বাড়িয়ে নেওয়ারও। তবে তাড়াহুড়ো করতে চায়নি ভারতীয় দল। শেষ কোয়ার্টারে আবারও পেনাল্টি কর্নার পেয়ে গিয়েছিল ব্রিটেন কিন্তু অসাধারণ দক্ষতায় সেই বল ভারতের গোলে ঢুকতে দেননি শ্রীজেশ। আর তার পরই কাউন্টার অ্যাটাকে হার্দিক সিংয়ের ৩-১ করে দেওয়া ভারতের লক্ষ্য নিশ্চিত করে দেয়। সেমিফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ বেলজিয়াম।

গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বড় ব্যবধানে হারের পর যে ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভারতীয় পুরুষ হকি দল তা মনে রাখার মতো।  ১-৭ গোলে হারের পর যে কোনও দলের আত্মবিশ্বাস ভেঙে যাওয়ার কথা। কিন্তু এই হারই ভারতকে চাগিয়ে দিয়েছিল আগামীর জন্য। তার পর নিউজিল্যান্ড, আর্জেন্তিনা, স্পেনের মতো দলকে পর পর হারিয়ে সেমিফাইন‌ালের আশা তৈরি করেছিলেন মনপ্রীতরা। যা ভারতীয় হকির জন্য এক অনবদ্য অনুভূতি। হারিয়ে যাওয়া গৌরব পুনরুত্থানের মঞ্চ। সেখানে সফল এই প্রজন্মের ভারতীয় হকি। ১৯৮০-তে শেষ সোনা জিতেছিল ভারত। তার আগে ১৯৭২-এ সেমিফাইনালে পাকিস্তা‌নের কাছে হেরে ছিটকে যেতে হয়েছিল। কিন্তু সেবার ব্রোঞ্জ জেতে ভারত।

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)