মেঘ চক্রবর্তী: আজ Shreyas Iyer-র অনেক ফ্যান। দেশ জুড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুধু তাঁরই জয়গান চলছে। বিদেশি ক্রিকেটার থেকে প্রাক্তন ক্রিকেটাররা, এক কথায় বলছেন ‘শ্রেয়াস অনবদ্য। উফফ, কী ইনিংসটাই না খেলল।’ অনেকে তো বলছেন তিনিই নাকি সেরা, তাঁরই নাকি ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হওয়া উচিত। এই সেই শ্রেয়াস আইয়ার। বিসিসিআই-এর নির্দেশ শুনে ঘরোয়া ক্রিকেটে চোটের জন্য না খেলায় যাঁকে নির্বাসিত হতে হয়েছিল। দীর্ঘদিন জায়গা মেলেনি জাতীয় দলে। বাদ দেওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে। সেই সব নিয়ে টু শব্দটি করেননি। ক্রমশ চোয়ালটা শক্ত হচ্ছিল। আর রবিবার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম দেখল সেই চোয়াল চাপা লড়াই। প্রতিটা ছক্কায় ছিল জবাব, অপমানের, অবিশ্বাসের, অস্বীকৃতির। প্রকৃত স্পোর্টসম্যানরা তো মাঠেই জবাব দেন। শ্রেয়াসের ওই ব্যাটে লেখা ছিল হাজার হাজার নির্ঘুম রাতের কাহিনি। লেখা ছিল বাতিলের উপাখ্যান। যা এভাবেই মাঠের বাইরে পাঠালেন তিনি।
আমি শ্রেয়াস ফ্যান। আজ থেকে নয়, সেই ছোট থেকে। মানে শ্রেয়াস যখন ছোট তখন থেকে। আমার প্রজন্মের ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়রা। কিছুটা যুবরাজ সিং, জাহির খান, হরভজন সিংরাও। তার আগে কপিল দেব, শ্রীকান্ত, সুনীল গাভাস্কারদের শেষের দিকের খেলাও কিছুটা দেখার সুযোগ হয়েছে। এক কথায় ক্রিকেটের নিরিখে আমরা ৯০-এর ছেলে-মেয়েরা লাকি। এতগুলো প্রজন্মের তারকাদের শুরু, শেষ দেখলাম। সেখানে দাঁড়িয়ে এমএস ধোনি, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি পর্যন্ত ঠিক ছিল, তা বলে শ্রেয়াস? অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন। আর জবাব একটাই, ঠিক এখানেই শ্রেয়াস আইয়ার বাকিদের থেকে আলাদা।
আজ আমার এক সতীর্থ বলছিলেন, ‘‘কীভাবে আর কখন যে শ্রেয়াসের ফ্যান হয়ে গেলাম টেরই পাইনি।’’ সেও কিন্তু আমার জেনারেশন। আমার আর এক সতীর্থ, যে নিয়মিত ক্রিকেট নিয়ে চর্চা করেন, শ্রেয়াস সম্পর্কে আমার আগ্রহ দেখে নতুন করে তাঁকে আবিষ্কার করলেন। রবিবার তাই রাত দেড়টায় খেলা শেষ হতেই ফোনটা বেজে উঠল। বলল, ‘‘তোর কথা শুনে শ্রেয়াসকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিলাম, আর আজ এমন একটা অসাধারণ ইনিংস মন কেড়ে নিল।’’
গুচ্ছ গুচ্ছ পরিসংখ্যানে যাওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই, কারণ ম্যাচ উইনিং ইনিংসের পর পঞ্জাব অধিনায়ক যখন বললেন, ‘‘কাজ এখনও হাফ ডান তবে এখনই ফাইনাল নিয়ে ভাবছি না, আপাতত ড্রেসিংরুমে ফিরে সবার সঙ্গে সেলিব্রেট করব, তার পর ম্যাসাজ নেব, রিল্যাক্স করব।’’ যেন একটা প্রশান্তি চোখে মুখে। রবিবার আইপিএল ২০২৫-এর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের ১৯তম ওভারের শেষ বলে উইনিং ছক্কাটা হাঁকানোর পর শ্রেয়াসের মুখটা লাইভ ক্যামেরায় বার বার জুম করা হচ্ছিল। তখনও চোয়ালটা শক্ত, মুখটা থমথম করছে। চোখের কোণাটা চকচক করছিল কিনা বোঝা যায়নি, কিন্তু অনেক অপমানের যেন জবাব ছিল এই ইনিংস। পুরো দল, কর্তারা যখন আনন্দে উত্তাল তখনও হাসি দেখা যায়নি শ্রেয়াসের মুখে। সবাই এসে একে একে শুভেচ্ছা জানিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রীতি জিন্টা থেকে প্রতিপক্ষের রোহিত শর্মাও বাদ যাননি। শ্রেয়াস কিন্তু তখনও চুপ। যেন এখনও সব জবাবটা দেওয়া হয়নি তাঁর। কাজ তো এখনও ‘হাফ ডান’। তবে আমি নিশ্চিত বার্তা চলে গিয়েছে অজিত আগরকরের কাছে।
কী যেন বলেছিলেন তিনি, শ্রেয়াসকে ইংল্যান্ড সফরের দলে না রাখার অজুহাত হিসেবে? যাক সেই কথা এখন তাঁকেই যে ঢোক গিলতে হবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে বয়েই গেছে পঞ্জাব অধিনায়কের, তারকা হতে মঞ্চ লাগে, গায়ে কোন জার্সি আছে সেটা বড় বিষয় নয়। যে পারে সে সব জার্সিতেই পারে। নিশ্চিত হাত কামরাচ্ছেন শাহরুখ খানও। যে অধিনায়কের কাঁধে ভর করে চ্যাম্পিয়ন হল কেকেআর তাঁকে ধরে রাখতে না পারার ব্যর্থতার ফল তো ইতিমধ্যেই পেয়ে গিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। আর মাত্র একটা ম্যাচ। সামনে বেঙ্গালুরু। সেই ম্যাচে জয় আসুক আর না আসুক, ‘শ্রেয়াস আপনি নায়ক’। সেই নায়ক যার শব্দের প্রয়োজন হয় না, ব্যাট আর ক্রিকেট মাথাটাই যথেষ্ট।
রোহিত শর্মার পর শুবমান গিল নয় ভারতীয় ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব পাওয়ার একমাত্র দাবিদার শ্রেয়াস আইয়ারই। এখন পুরো দেশ বুক বাজিয়ে এই কথাটাই বলছে। শুনতে পাচ্ছেন অজিত আগরকর অ্যান্ড ব্রিগেড?
আজকেই কেকেআর-এর ব্যাটিং কোচ অভিষেক নায়ারের একটি সাক্ষাৎকারে শুনছিলাম তিনি বলছিলেন, ‘‘শ্রেয়াস যে ড্রেসিংরুমে থাকে সেখানে সারাক্ষণ একটা পজিটিভ ভাইভ থাকে।’’ শ্রেয়াস নিজেই বলছিলেন, তিনি কাউকে বলে দেননি মাঠে নেমে কী করতে হবে। সবাইকে একটাই কথা বলেছিলেন, ‘‘যাও নিজের খেলাটা খেলো।’’ যে কারণে নেহাল ওয়াধেরার মতো প্লেয়ারও ক্যাপ্টেনের পাশে দাঁড়িয়ে যেভাবে খেললেন তা যে ওই পজিটিভিটিরই ফল, তা বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না একটুও। সে দিল্লি আর পঞ্জাবকে ফাইনালে তোলা হোক বা কলকাতাকে চ্যাম্পিয়ন করা, শ্রেয়াস আইয়ারকে থামানো কঠিন, কারণ তিনি ঠেকে শিখেছেন। গতমরসুমের শ্রেয়াসের সঙ্গেও যে এই মরসুমের শ্রেয়াসের অনেক পার্থক্য। পাথরচাপা জেদটা ক্রিকেট ব্যাটের আস্ফালনে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। এই শ্রেয়াস বন্দনা চলবে। শ্রেয়াসকে বাদ দেওয়া যায়, উপেক্ষা করে কার সাধ্যি!
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google