পরের অনুষ্ঠান ইডেনে করা হোক, সিএসজেসির কাছে আবেদন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের

শুক্রবারের সন্ধ্যায় জমে উঠল কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। যে মঞ্চ আলো করে পুরো সময়টাই থাকলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক ও বর্তমান সিএবি সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এমনিতে তিনি সব সময়ই কলকাতার সাংবাদিকদের যে কোনও উদ্যোগে পাশে থেকেছেন। এবার এই পুরস্কারের মঞ্চ থেকেই আরও একটি বার্তা দিয়ে গেলেন। তাঁর ইচ্ছে, খেলার অনুষ্ঠান খেলার মাঠেই হওয়া উচিত আর সে কারণেই পরের বারের বার্ষিক পুরস্কার অনুষ্ঠান ইডেন গার্ডেনে করার প্রস্তাব রেখে গেলেন। এর থেকে বড় পাওনা আর কী হতে পারে। পুরো সময়টা মঞ্চে থেকে সবার হাতে পুরস্কার তুলে দিলে‌ন, যাতে দারুণ খুশি পুরস্কার প্রাপকরা। আকাশ দীপের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে দিতে মজা করে বললেন, ‘‘আকাশ দীপের জন্য খুব ভালো পুরস্কার হয়েছে ট্রলি ব্যাগ। কারণ ওর জীবনটা এখন এই সুটকেসেই কাটে। একটা সময় আমারও তাই কাটত, প্যাকিং আর আনপ্যাকিং। এখন ওর পালা।’’

তাঁর সঙ্গে মঞ্চ আলো করে ছিলেন লিয়েন্ডার পেজ ও দিলীপ তির্কে। ভারতীয় টেনিসকে বিশ্বের মঞ্চে পৌঁছে দিয়েছেন লিয়েন্ডার। এবার সেই লিয়েন্ডারকেই লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কারে সম্মানিত করল ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাব। পুরস্কার নিয়ে লিয়েন্ডার বলছিলেন, ‘‘গত পাঁচ দশকে আপনাদের প্রচুর সমর্থন পেয়েছি, আমি খুবই ভাগ্যবান আমি ভারতের হয়ে টেনিস খেলি  তবেআমার হৃদয় সবসময় কলকাতায় পড়ে থাকে। আমি আমার বাবার স্বপ্ন সফল করে চলি। আমি সব সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানাই। এমন একটি সম্মানের জন্য কলকাতায় আসতে পেরে আমি গর্বিত।’’


একই লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কারে সম্মানিত করা হল হকি ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট তথা ভারতের প্রাক্তন হকি তারকা দিলীপ তির্কেকেও। পুরস্কার পেয়ে স্বভাবতই খুশি হকি ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট। ফ্ল্যাশব্যাকে ফিরে গেলেন তিনি। বলছিলেন, ‘‘সিএসজেসিকে ধন্যবাদ আমাকে সম্মান দেওয়ার জন্য। পুরস্কারের জন্য আমাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। অনেকেই জানেন না ১৯৯২-৯৩-এ আমি কলকাতা সাইয়ে ছিলাম। কলকাতার সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। যার সঙ্গেই দেখা হয়, কলকাতার স্মৃতি রোমন্থন করি। ১৮৯৫ সালে বেটন কাপ কলকাতায় শুরু হয়, যা প্রথম হকি টুর্নামেন্ট, এই কলকাতাতেই প্রথম অলিম্পিক দল নির্বাচন হয়েছিল। তাই হকির সঙ্গে কলকাতার অনেক পুরনো সম্পর্ক।

তাঁর গলায় লিয়েন্ডারের প্রশংসাও শোনা যায়। বলছিলেন, ‘‘লিয়েন্ডার সাতটি অলিম্পিক খেলেছে আমি জানি এটা কতটা কঠিন কারণ আমি তিনটি অলিম্পিক খেলেই তা টের পেয়েছি। কলকাতার সাংবাদিকরা সব সময় ভারতীয় ক্রীড়াকে সমর্থন করেন। আমরা ভারতীয় ক্রীড়া উন্নয়নে কাজ করব।’’

এদিন বাড়ির অভিভাবকের মতোই সারাক্ষণ সিএসজেসির পাশে ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তাই তাঁর বক্তব্য দিয়েই শেষ হল এবারের বার্ষিক পুরস্কার অনুষ্ঠান। সবাইকে শুভেচ্ছাও জানালেন। যাকে নিয়ে রীতিমতো আপ্লুত দেখাল সৌরভকে সে হল জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দাবাড়ু সর্বার্থ মণি। মঞ্চেই তাঁকে জরিয়ে ধরলেন, তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দিলেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘ যারা পুরস্কার পেলেন তাদের সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা। বিশেষ করে ওই খুদে দাবা খেলোয়াড়কে। ওর অনেক বড় স্বপ্ন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন।’’

এর সঙ্গেই তিনি জুড়ে দেন, ‘‘খেলোয়াড় ও সাংবাদিকদের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতো। মতানৈক্য, ঝামেলা চলতেই থাকে, আবার কারও কাউকে ছাড়া চলে না। আমি সিএসজেসির অনুষ্ঠান খুব উপভোগ করি, অবসরের পর আরও বেশি করে করি কারণ এখন আর আমার খেলা নিয়ে সমালোচনা করে কেউ কিছু লিখবে না।’’ শেষে বলেন, ‘‘এর পরের অ্যাওয়ার্ড ইডেন গার্ডেনে করার অনুরোধ থাকলো, খেলার অনুষ্ঠান খেলার জায়গায় হওয়া উচিত বলে আমার মনে হয়।

যাঁরা পুরস্কার পেলেন—

লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট: দিলীপ তির্কে, লিয়েন্ডার পেস, বছরের সেরা ক্রীড়াবিদ (সিনিয়র): ঐহিকা মুখোপাধ্যায়, বছরের সেরা ক্রীড়াবিদ (জুনিয়র): সর্বার্থ মণি, বছরের সেরা কোচ: কিবু ভিকুনা, বছরের সেরা ক্রিকেটার: আকাশ দীপ, বছরের সেরা ফুটবলার: শুভাশিস বসু, বর্ষসেরা তারকা ফুটবলার: রবি হাঁসদা, বছরের সেরা ফুটবলার (মহিলা): সঙ্গীতা বাসফোর, বছরের সেরা ক্রীড়াবিদ (মহিলা): মৌমিতা মণ্ডল, বছরের সেরা ক্রীড়াবিদ (পুরুষ): সতায়ু মণ্ডল, বছরের সেরা জিমন্যাস্ট: প্রতিস্থা সামন্ত, বছরের সেরা শুটার: অভিনব শ, বছরের সেরা রোয়ার: শ্বেতা ব্রহ্মচারী, বছরের সেরা খো খো খেলোয়াড়: সুমন বর্মণ, বছরের সেরা সাঁতারু: সানিথি মুখোপাধ্যায়, বছরের সেরা হকি খেলোয়াড়: অভয় এক্কা, বছরের সেরা ভলিবল খেলোয়াড়: কুনাল দাস

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle