‌লিভারপুলের কাছে হার বার্সেলোনার, মেসিকে ফেলে বিমানবন্দরে দল!‌

Ballon d’Or 2022

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ‌লিভারপুলের কাছে হার বার্সেলোনার । বিমানবন্দর ছন্নছাড়া। সাজঘরও তাই। অদ্ভুত এক ঘোরে যেন বার্সিলোনা!‌ না হলে অধিনায়ক লিওনেল মেসিকে ফেলেই বিমানবন্দরে পৌঁছে গেল দল!‌ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় পর্বে লিভারপুলের কাছে ০–৪ ব্যবধানে হেরে বিদায়ের পর ডোপ পরীক্ষার জন্য মূত্রের নমুনা দিতে স্টেডিয়ামে রয়ে গিয়েছিলেন মেসি। সে কথা ভুলেই যায় বার্সিলোনা দল!‌ স্প্যানিশ টেলিভিশন চ্যানেলের খবর, লজ্জার হারের পর বার্সার ফুটবলারদের মনের অবস্থা কী ছিল, সহজেই অনুমেয়। ফলে অধিনায়ক টিম বাসে উঠেছেন কি না, সে খেয়াল কেউই করেননি।

অ্যানফিল্ড থেকে বেরিয়ে সোজা বিমানবন্দরে পৌঁছে যায় দল। টনক নড়ে ঠিক কখন, তা অবশ্য ওই স্প্যানিশ টেলিভিশন বিস্তারিত কিছু জানায়নি। স্প্যানিশ প্রচারমাধ্যমের আরেকটিসূত্রের দাবি, বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পর মেসির সঙ্গে নাকি একদল বার্সা সমর্থকের বাদানুবাদ হয়েছে। আসলে প্রথম পর্বে ৩–০ এগিয়ে থেকেও, দ্বিতীয় পর্বে ০–৪ হার মানতে পারছেন না মেসি। খবর, ম্যাচ হারার পর তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁকে ওই মুহূর্তে শান্ত করার কেউ চেষ্টা করেছিলেন কিনা, সে খবর অবশ্য বাইরে আসেনি।

মেসি নিজে ভেতরে ভেতরে যন্ত্রণায় কাতর হলেও, সতীর্থদের দিকে অবশ্য আঙুল তোলেননি। তবে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন লুই সুয়ারেজ। বার্সার ডিফেন্ডারদের ‘‌স্কুল ছাত্র’‌ বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি। সুয়ারেজ বলেন, ‘‌খুব খারাপ লাগছে। আমরা দুঃখিত। এটা এমন এক সময়, যখন আত্মসমালোচনা করা উচিত। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার একই ঘটনা ঘটল। পরপর দু’‌বার একই ভুল মেনে নেওয়া যায় না। অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে হবে। সত্যিটা মুখের ওপর বলা দরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘লিভারপুল যখন চতুর্থ গোলটা দিল, তখন আমাদের দেখে মনে হচ্ছিল, যেন জুনিয়র কোনও দল খেলছে।’‌ সুয়ারেজ যখন এভাবে বলেছেন, তখন বার্সা কোচ ভালভার্দেও একই সুরে বলেছেন, ‘‌এই বিপর্যয়ের জন্য বার্সিলোনার নিজেকেই দায়ী করা উচিত। পরপর দুই গোল করে লিভারপুল এগিয়ে যেতেই আমরা খেই হারিয়েছিলাম। ওরা আমাদের ধুয়ে মুছে দিয়েছে। অস্বাভাবিক ফলাফল। মেনে নেওয়া কঠিন, আমাদের অনুরাগীদের পক্ষে। আমাদের পক্ষেও।’‌

সালাহীন লিভারপুল নামছে বার্সেলোনার বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে

এই হারের পর বার্সা কি আর তাঁকে কোচ রাখবে?‌ ভালভার্দের জবাব, ‘‌জানি না, কী হবে। পরাজয়ের দায় কোচকে নিতে হয়। খুবই যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতি। যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবেই।’‌

সের্জিও বুসকেতস কান্নাভেজা চোখে ক্ষমা চেয়েছেন বার্সা সমর্থকদের কাছে। বলেছেন, ‘‌রোমার বিরুদ্ধে যা ঘটেছিল, এবার লিভারপুলের বিরুদ্ধেও ঠিক তাই ঘটল। প্রথম পর্বে ভাল ফল করে, দ্বিতীয় পর্বে এভাবে ছিটকে যাওয়াটা মারাত্মক যন্ত্রণার। তাই অনুরাগীদের কাছে ক্ষমা চাইছি।’‌

বার্সা শিবির যখন শোকে ডুবে, তখন লিভারপুল আনন্দে ভাসছে। কোচ ক্লপ বলেই দিলেন, ‘‌আমার দলের ছেলেরা, এক একজন দৈত্য। অতিমানবীয়!‌ অবিশ্বাস্য জয়। আর কোনও ভাল, প্রশংসাসূচক শব্দ এই মুহূর্তে মাথায় আসছে না। আবেগতাড়িত এই মুহূর্তে। বিশ্বের সেরা দলের বিরুদ্ধে আমরা খেললাম। অথচ ছেলেরা যে কীভাবে গোটা ছবিটা বদলে দিল!‌ সব কৃতিত্ব ফুটবলারদের। যোগ্যতা এবং বুকের ভেতর অসম্ভব সাহস থাকলে বোধহয় এমনটা করা যায়। এমন দৃশ্য সত্যিই আগে দেখিনি। এই দলের ম্যানেজার হিসেবে আমি গর্বিত।’‌ এখানেই শেষ নয়। ক্লপ আরও যোগ করেন, ‘‌আমরা নিজেদের ইতিহাস লিখতে চেয়েছিলাম। আর সেই ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের প্রয়োজন ছিল। ছেলেরা সেই অধ্যায়টাই লিখেছে। অনুরাগীদের এমন এক রাত উপহার দিতে পেরে ভাল লাগছে।’‌

ক্লপ যখন দলের ফুটবলারদের কৃতিত্ব দিচ্ছেন, তখন তাঁকে কৃতিত্ব দিলেন মোরিনহো। বলেছেন, ‘‌ভাবিনি, এমনটা ঘটবে। হ্যাঁ, বারবার বলি, ফুটবলে সব কিছু ঘটতে পারে। আর অ্যানফিল্ডে তো অবিশ্বাস্য কিছু ঘটেই থাকে। তবে এতটাও ঘটবে, কল্পনা করতে পারিনি। এর জন্য কৃতিত্ব যদি কাউকে দিতে হয়, সেটা ক্লপকেই দেব। কৌশল বা মনঃস্তত্ত্ব নয়। এটা আসলে হৃদয় দিয়ে খেলার ফল। ও–ই ফুটবলারদের এভাবে গড়েছে। তাই ওরা পেরেছে। আর এক ধাপ। আমি তো বলব, ক্লপ যোগ্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী দলের কোচ হওয়ার।’‌

(খেলার আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)