সুচরিতা সেন চৌধুরী: সালটা ২০১৭।
ভারতের মাটিতে বসেছে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের আসর। আয়োজক দেশ হিসেবে ভারত খেলবে দিল্লিতে। তাই কলকাতা থেকে প্রায় সব সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিক সেখানে হাজির হয়েছেন। আমিও ছিলাম সেই তালিকায়। আনন্দবাজার ডিজিটালের হয়ে প্রথম বড় ইভেন্ট। প্রাথমিকভাবে লক্ষ্য ছিল শুধু ভারতীয় ফুটবল দলই। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছে লক্ষ্যে সংযোজন হতে শুরু করল নতুন নতুন দেশ, নতুন নতুন নাম। আর সেই তালিকায় দুম করেই ঢুকে পড়লেন তিমোথি উইয়া (Timothy Weah)। পদবী দেখেই যেন তাঁকে ঘিরে উত্তেজনাটা তুঙ্গে উঠেছিল সেই সময়। তখন তাঁকে কে চেনে। ইউএসএ জুনিয়র দলের সদস্য। সদ্য যোগ দিয়েছেন পিএসজি-তে।
কাট টু ২০২২।
সোমবার রাত। কাতার বিশ্বকাপে মুখোমুখি ওয়েলস ও ইউএসএ। আমেরিকার দলে আবারও সেই তিমোথি উইয়া। আরও একবার গ্যালারিতে ‘উইয়া উইয়া’ গর্জন শোনা গেল। যা শোনা যেত বিশ্বকাপ না খেলা একটি দেশের এক ফুটবলারের জন্য। আর এদিন বাবার বিশ্বকাপ না খেলতে পারার যন্ত্রণাটা যেন এক ধাক্কায় মিশিয়ে দিলেন মাটির সঙ্গে। কারিগর সেই তিমোথি উইয়া। জর্জ উইয়ার ছেলে। গোল করলেন। আর তার পরই দু’হাত ছড়িয়ে ছুটে গেলেন কর্নার ফ্ল্যাগের দিকে ঠিক যেভাবে গোল সেলিব্রেট করতেন বাবা উইয়া। ছেলেও ব্যতিক্রম নন।
জর্জ উইয়া বিশ্বকাপ খেলেননি তাও কেন বিখ্যাত? তিনিই প্রথম নন-ইউরোপিয়ান যিনি ব্যালন ডি‘ওর জিতেছিলেন। সালটা ১৯৯৫। আর এখন তিনি লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট। কিন্তু সোমবার দেশের দায়িত্বের উপরও যে বড় দায়িত্ব, সেই সন্তানকে বিশ্বমঞ্চে দেখতে হাজির ছিলেন গ্যালারিতে। দায়িত্বটা অনেক আগেই পালন করে ফেলেছিলেন ছেলেকে আমেরিকার নাগরিকত্ব দিয়ে, সে দেশের ফুটবলে মিশিয়ে দিয়ে। আজ ছিল ফল পাওয়ার দিন। পেলেনও হাতে নাতে। এক উইয়া যখন মাঠে গোল করে উদযাপন করছেন তখন আর এক উইয়া গ্যালারিতে। প্রেসিডেন্ট নয় বাবা উইয়ার চোখের কোণাটা সে সময় নিশ্চইই চিক চিক করে উঠেছিল। বিশ্বকাপের স্বপ্ন, আর শুরুতেই গোল।
কাট টু ২০১৭, ৬ অক্টোবর।
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম ম্যাচ। প্রতিপক্ষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাঁদের কাছে ভারতের ৩-০ হারের পরও মন জিতে নিয়েছিলেন ভারতের ছেলেরা। অদম্য অসম লড়াই ছিল সেদিন। ভারতের জয়জয়কারের পাশাপাশি গ্যালারিতে মাঝে মাঝেই শোনা যাচ্ছিল ‘উইয়া উইয়া’ ধ্বনী। কে জানত এই প্রজন্ম মনে রেখেছে জর্জ উইয়াকে। তাই সেদিন ছেলের জন্য উঠেছে ‘উইয়া উইয়া’ ধ্বনী। যা দেখে অবাক হয়েছিলেন স্বয়ং তিমোথি উইয়া। ১৭ বছরের বাচ্চা ছেলেটার কাঁধে তখন বাবার সাফল্যের চাপ।
ম্যাচ শেষে স্টেডিয়ামের মিক্স জোনে যখন ভারতীয় সাংবাদিকরা তিমোথির রাস্তা আটকাল তখন আপ্লুত দেখাচ্ছিল তাঁকে। তাঁকে ঘিরে এই উচ্ছ্বাস যে তাঁর বাবার জন্যই তা আর বুঝতে বাকি ছিল না। তাই বাবাকে নিয়ে অনর্গল বলে গেলেন। বাবার সঙ্গে তাঁর কোথায় কোথায় মিল তাও বললেন। বিশেষত, স্পিড আর জাম্পে। আর তা আরও জোড়দাড় করতে চান তিনি। তবে না, বাবার নামের চাপ নেন না বরং সেটাকেই প্রেরণা করে নিয়েছেন তিনি।
ভারতের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে অফ সাইডের জন্য তিমোথির গোল বাতিল হয়েছিল। আর এদিন ওয়েলসের বিরুদ্ধে তাঁর গোলে এগিয়ে গিয়েও ড্র করতে হল ম্যাচ। পেনাল্টি থেকে গোল করে ওয়েলসকে সমতা এনে দিলেন গ্যারেথ বেল। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের শুরুতে গোল না পেলেও নক-আউটে হ্যাটট্রিকও লিখে নিয়েছিলেন তিমোথি উইয়া এবার তো গোল দিয়েই শুরু করলেন। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই গোল করে বাবার স্বপ্ন হয়তো পূরণ করলেন ছেলে উইয়া কিন্তু এখান থেকেই তাঁর জন্য শুরু হয়ে গেল নতুন যাত্রাপথ। বিশ্ব ফুটবলে সাফল্যের পথে টিকে থাকার লড়াই। পাঁচ বছর সময়টা যে অনেক। সামনে আরও অনেক পাঁচ বছর অপেক্ষায়।
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google