লাদাখ জোড়া ধাক্কা কাটিয়ে কবে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে, অপেক্ষায় সেখানকার পর্যটন শিল্প

পৃথক রাজ্যের দাবি লাদাখের

লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা পাচ্ছে, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ঠিক এক বছর আগে। খবরটা শোনার পর থেকেই লাদাখবাসীর মন আশায় ভরে উঠেছিল, এ বার তা হলে পর্যটন শিল্পে লাদাখ নিজের মতো করে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে। জম্মু-কাশ্মীর সরকারের ছত্রছায়া থেকে সরে এসে লাদাখ হয়ে উঠবে স্বয়ং সম্পূর্ণ। কিন্তু, লাদাখবাসীর সে আশায় জল ঢেলে দিয়েছে অতিমারি কোভিড-১৯। কেমন আছে লাদাখের পর্যটন শিল্প? লে থেকে সেই কথাই লিখলেন সোনম দাওয়া


কোভিড যদি গোদ হয়, তার উপর বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে চিন। লাদাখের খারাপ সময়ে পরিস্থিতি আরও শোচনীয় করে তুলেছে তাদের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় হামলা চালানোর ঘটনা। সব মিলিয়ে এত খারাপ সময় অতীতে কখনও লাদাখবাসী কাটায়নি বলেই মনে হয়। এর আগে অনেক রকম সঙ্কট তৈরি হয়েছে লাদাখের জীবনে, কিন্তু এ যেন এক অদ্ভুত আঁধার।

লাদাখের ৬০ শতাংশ রাজস্ব আসে পর্যটন ক্ষেত্র থেকে। লকডাউন কাটিয়ে দেশ যখন আনলকের পথে ধাপে ধাপে এগোচ্ছে, পর্যটক আসার সম্ভাবনায় তখনও দিন গুনছে লাদাখ। আজও লাদাখে কোনও পর্যটক নেই। আর সে কারণে কোনও ব্যবসাও নেই। কোটি কোটি টাকার ক্ষতি। সবচেয়ে ক্ষতি স্থানীয় বাসিন্দাদের, যাঁদের রুটি ও রুজির মূল উৎস আসলে এই পর্যটন শিল্প। এককথায় বলতে গেলে পর্যটক। আর সেই পর্যটকেরই দেখা নেই এ বার লাদাখে। অতিমারি এবং প্রতিবেশী দেশ, উভয়েই তছনছ করে দিয়েছে লাদাখের বেঁচে থাকা। এখানকার ৬০ শতাংশ মানুষের বেঁচে থাকার মূল অবলম্বন কিন্তু পর্যটন শিল্প। কিন্তু অতিমারি করোনা, তা রুখতে লকডাউন এবং সব শেষে চিনের হামলা— ত্র্যহস্পর্শে কার্যত শেষ লাদাখের ভাল থাকার আশা।

গত বছর কিন্তু লাদাখের পর্যটন শিল্পের হাল রমরমা ছিল। খুব ভাল ব্যবসা হয়েছিল। কিন্তু এ বছর, সব কিছু শুনশান। একটা শান্ত দশা চলছে যেন। এখানে সেপ্টেম্বরে পর্যটন মরসুম শেষ হয়। মার্চ মাসে ফের মরসুম শুরুর সময়। কিন্তু সেই শুরুর মুখেই অতিমারি করোনার থাবা। ফলে, গত সেপ্টেম্বর থেকে এ বছরের অগস্ট— প্রায় ১১ মাস ধরে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের কোনও কাজ জোটেনি। একটা পয়সা রোজগারও হয়নি।

অনেকেই জানেন না, লাদাখে পর্যটন মরসুম কিন্তু বছরভরের নয়। মাত্র ৬ মাস এখানে পর্যটন শিল্প সচল থাকে। বাকি ৬ মাস বসে থাকা। এখানকার প্রবল ঠান্ডায় স্থানীয়েরাই জবুথবু হয়ে যান, তা হলে বাইরে থেকে পর্যটকই বা এসে ঘুরবেন কী করে, আর এঁরাই বা পরিষেবা দেবেন কী ভাবে? তাই ৬ মাস চালু, বাকি ৬ মাস পর্যটন ব্যবসা বন্ধ। কিন্তু এ বছর মরসুমের শুরুতেই লকডাউন। আনলকের পথে দেশ এগোলেও এখন করোনার প্রকোপ ও চিনের কারণে লাদাখে পর্যটক নেই। ফলে লাদাখে যেন বছরভরের লকডাউন। গোটা দেশের সঙ্গে এখানকার অবস্থা মেলানো যাবে না। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

স্থানীয়েরা, যাঁরা সরাসরি পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের দুরাবস্থা অবর্ণনীয়। হোটেল-মালিক, হোটেল-কর্মী, রেস্তরাঁ-মালিক, রেস্তরাঁ-কর্মী, ট্যুর অপারেটর, ভাড়া গাড়ির মালিক, গাড়িচালক, গাইড, পোর্টার— এঁদের পাশাপাশি আরও অজস্র মানুষ রয়েছেন, যাঁরা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার। পর্যটক নেই। ফলে, এঁদের রোজগারও নেই। আবার পর্যটক নেই বলে বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ। যে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী দোকান খুলছেন, তাঁদের কোনও খরিদ্দার নেই। অন্যদিকে স্থানীয়েরাও এই সময়টায় বাড়ি থেকে একেবারেই বেরোচ্ছেন না, অতিপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়া কোনও কিছু কিনছেনও না। ফলে ওই সব দোকানপাটে বিক্রিবাটা কার্যত নেই। কাজেই একটা বড় অংশের মানুষের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়।

মরসুম প্রায় শেষের মুখে। আগস্টের মাঝামাঝি হয়েই গেল। সেপ্টেম্বর আসতে আর ক’দিনই বা! এর পর আবার শীত এসে যাবে। ফলে লাদাখ ফের বন্ধ। খুলতে খুলতে ফের সেই সামনের মার্চ। তা-ও যদি সব কিছু ঠিক থাকে। ৬ মাসের রোজগারে বছর চালাতেন লাদাখবাসী। এ বার সেই ৬ মাস তো একেবারেই খালি হাত! কারণ সব কিছু রাতারাতি স্বাভাবিক হয়ে গেলেও পর্যটক কি আর আসবে আগের মতো? ধরা গেল গুটিকয়েক পর্যটক এলেনও বা, তাতে তো আর বছরের বাকি অর্ধেক চলবে না। এমনিতেই বর্তমানের চিন্তায় ঘুম নেই, তার উপর এই ভবিষ্যতের চিন্তা যেন কুরে কুরে খাচ্ছে লাদাখবাসীকে। সমগ্র লাদাখের অর্থনীতি ধুঁকছে। এ এখ অসহনীয় ক্ষতি। প্রচুর মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন। অতিমারির আবহে এ এক ঘনঘোর দুর্যোগ।

এই দুর্যোগের আবহেই লাদাখবাসী এখন প্রশাসনের কাছে, সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন করছেন। দাবি করছেন, লাদাখকে অর্থনৈতিক সাহায্য দেওয়া হোক। এই বিপুল ক্ষতির ক্ষত ভরাট করে লাদাখ যেন বাকি বছরটা অন্তত বেঁচে থাকতে পারে।

ছবি: লেখক

(আরও ফিচার পড়তে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)