Neemrana Fort: যেখানে ইতিহাস কথা বলে আধুনিকতার ছোঁয়ায়ও

Neemrana Fort

সুচরিতা সেন চৌধুরী: দিল্লিতে তখন হালকা বর্ষা। রাজধানীতে বৃষ্টি হয় না বললেই চলে। তবুও একটা মেঘলা মেঘলা আমেজ। এই আবহাওয়ায় সব থেকে যেটা ইচ্ছে করে সেটা হল ঘুরতে যাওয়া। আর দিল্লিতে থাকার সব থেকে বড় প্রাপ্তি হচ্ছে, হাতের কাছে ঘুরতে যাওয়ার বিকল্পের কোনও অভাব নেই। শুধু বেরিয়ে পড়তে পারলেই হল। মাত্র কয়েকদিনের আলোচনাতেই ঠিক হয়ে গেল সাড়ে পাঁচশো বছরেরও বেশি পুরনো নীমরানা ফোর্ট (Neemrana Fort)। ফোর্ট মানেই রাজস্থান আর সঙ্গে ইতিহাস। দিল্লি থেকে সকালে গিয়ে বিকেলে ফিরে আসা। থাকতে চাইলে এই ফোর্টের ভিতরেই রয়েছে রাজকীয় ব্যবস্থা। আমরা না থাকলেও রাজকীয় খাবার উপভোগ করেছিলাম।

Neemrana Fort

১০ জনের দল। ট্র্যাভেলার আগেই বুক করা ছিল। সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্ক থেকে রাজস্থানের নীমরানা ফোর্টের উদ্দেশে। দিল্লি, গুরগাঁও পেরিয়ে আমাদের গাড়ি রাজস্থানে ঢুকে পড়তেই বদলে গেল পরিবেশ। সেই রুক্ষ মাটি, কাটা গাছ, চওড়া চওড়া রাস্তা। পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে মাল বোঝাই উটের গাড়ি। দিল্লি-জয়পুর হাইওয়ে দিয়ে দ্রুতই পৌঁছে গেলাম নীমরানা ফোর্টে। রাজস্থানের ফোর্ট যেমন হয়, এটিও তার ব্যতিক্রম নয়। বিশাল দরজা পেরিয়ে ভিতরে ঢুকতেই সামনে রাখা রয়েছে ঘোরায় টানা গাড়ি। ঘোরা যদিও নেই। গাড়িটি রয়েছে। সেখান থেকেই রাস্তা প্রায় এক ধাক্কায় অনেকটা চড়াই উঠে গিয়েছে। ঢুকে পড়েছি আরাবল্লী পাহাড় কেটে বানানো রাজপ্রাসাদের ভিতর। যার প্রতিটি কোনায় শুধুই ইতিহাস কথা বলে।

সুন্দর করে সাজানো নীমরানা ফোর্টের একটি অংশ এখন ফাইভস্টার হোটেল। তবে ইতিহাসকে যত্নে রেখেই তৈরি হয়েছে হোটেল। জানা যায় ১৪৬৪ থেকে এই ফোর্ট বানানো শুরু হয়। সেখানে থাকতেন রাজা রাজিন্দর সিং। কিন্তু ১৯৪৭-এ ফোর্টের মূল ফটকের অনেকটা অংশ ভেঙে পড়ে। উন্মুক্ত হয়ে যায় ফোর্ট। কিন্তু তা সারানোর জন্য যে বিপুল পরিমাণ খরচ ছিল তা সে সময় রাজিন্দর সিংয়ের কাছে ছিল না। তিনি চেষ্টা করেন বিক্রি করে দেওয়ার। কিন্তু এই ফোর্ট কেনার জন্য কাউকে পাওয়া যায় না। তখন তিনি নীমরানা ছেড়ে চলে যান বিজয় বাগে। ৪০ বছর ধরে তিনি চেষ্টা চালান এই ফোর্টের দায়মুক্ত হওয়ার। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৬-তে এই ফোর্টের কাজ শুরু হয়।

Neemrana Fort

এর পরটা শুধুই উত্থান। ১৯৯১-এ প্যালেসের দরজা খুলে দেওয়া হয় পর্যটকদের জন্য। পাহাড়ের ১৪টি ধাপে তৈরি হয়েছিল এই প্যালেস আর এখন সেখানেই হোটেল। থাকার জন্য ৭৭টি ঘর রয়েছে। ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক পুরস্কার রয়েছে এই নীমরানার ঝুলিতে। দিল্লি ও আশপাশের লোকেদের পছন্দের উইকএন্ড ডেস্টিনেশন এই নীমরানা। এই ফোর্টের ভিতরে রয়েছে সুইমিংপুল, হেলথ স্পা, অ্যাম্পিথিয়েটার, হ্যাঙ্গিং গার্ডেন। এ ছাড়া রয়েছে রুফটপ গার্ডেন রেস্টুরেন্ট, কনফারেন্স হল। বিশেষ স্যুট থেকে পুরো ফোর্টের ভিউ পাওয়া যায়। অন্ধকার নামলে যখন ফোর্টের আলোগুলো জ্বলে ওঠে তখন তৈরি হয় এক মায়াবি পরিবেশ। আলো-আধারীতে এই ফোর্ট দেখার অনুভূতি নিশ্চই ভাষায় ব্যাখ্যা করা যাবে না। শুধু মুগ্ধ হতে হবে।

সারা ফোর্ট জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সিঁড়ি বেয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। উঠে পড়া যায় একদম মাথায়। যেখান থেকে এক ফ্রেমে ধরা দেয় নীমরানার বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্যালেস। দেওয়ালের গায়ে কান পাতলে মনে হয় এখনই শোনা যাবে ঘোরার পায়ের শব্দ। যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে ছুটে আসছে সৈন্যদল। কিন্তু না এখানে এখন শান্তি বিরাজ করে। ঘুরতে ঘুরতে খিদে পেয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। প্যালেসের ঝুল বারান্দা পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম ডাইনিং হলে। সেখানে আগে থেকেই প্রস্তুতি সারা। লাইন দিয়ে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন আইটেম। কী নেই তাতে, মাছ, মাংসের বিভিন্ন পদের পাশাপাশি নানারকমের নিরামিষ খাবার। ভাত, পুলাও, রোটি। আর শেষ পাতে বিভিন্ন রকমের মিষ্টি, আইসক্রিম। কী কী ছিল মনে করে নাম বলতে পারব না। সব চেখে দেখা সম্ভব হয়নি। তবে জয়সলমীরে যে ঐতিহ্যবাহী রাজস্থানী খাবার খেয়েছিলাম তার থেকে এ ঢের ভাল ছিল। এক কথায় সুস্বাদু।

Neemrana Fort

নীমরানার রাজপ্রাসাদে বসে এমন রাজকীয় লাঞ্চের অনুভূতি সারাজীবন মনে থাকবে। একটাই আফসোস, রাতের অন্ধকারে এই রাজপ্রাসাদ দেখা হল না। অনুভূতিতে থাকল না রাজপ্রাসাদের কোনও ঘরে একটা রাত কাটানো। হয়তো সে ঘরে কখনও থেকেছেন রাজপরিবারের কোনও সদস্য। তবে হ্যাঁ, এই রাজপ্রাসাদ ঘিরে তেমন কোনও ভৌতিক গল্প শুনলাম না যেমনটা সব জায়গায় থাকে। ফিরে যাওয়ার ইচ্ছেটা অবশ্য রয়েই গিয়েছে। শুধু ঘুরে আসার জন্য নয়, অন্তত একটা রাতা কাটানোর জন্য।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle

Neemrana Fort

ছবি:লেখক