Sandakphu Trekking 2: স্মৃতির পাতা থেকে, টুমলিং টু কালিপোখড়ি

Sandakphu Trekking 2

কতটা পথ পেড়লে তবে পথিক বলা যায়? এই প্রশ্নটা সারাক্ষণই ঘোরে মনে, মাথায়। আদৌ কি আমি পথিক? নাকি শুধুই সুখি ভ্রমণার্থী (Sandakphu Trekking 2)। তবে যাই হই না কেন সব চিন্তাকে পিছনে ফেলে প্রকৃতির টানে বেরিয়ে পড়তে কার না ভাল লাগে। যেন সেই স্বপ্নই বুনতে থাকে মানুষ দিনের পর দিন। তার পর একদিন হঠাৎ করে সুযোগটা চলে আসে। আসলে মন থেকে চাইলে একদিন স্বপ্নটা সত্যি হয়। গত দু’বছর গৃহবন্দি থাকা মানুষ আবার নতুন করে ডানা মেলতে শুরু করেছে। ঘর ছেড়ে কেউ পরিবার, কেউ বন্ধু আবার কেউ একাই বেরিয়ে পড়েছে চেনা গণ্ডির বাইরে। তার আগে একটু স্মৃতির পাতা উল্টে দেখলেন সুচরিতা সেন চৌধুরী


দ্বিতীয় দিনের ট্রেকিংয়ের জন্য মানসিক প্রস্তুতি প্রথম দিন কাটতেই হয়ে গিয়েছিল। যদিও জানা গেল টুমলিং থেকে কালিপোখড়ির রাস্তায় চড়াইয়ের অংশ খুব বেশি না। তার মানে আছে। নীলাদির ডাকে ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি আমাদের গাইড তৈরি। আমাদের অপেক্ষায়। আমরাও দ্রুত তৈরি হয়ে নিয়ে চা পান করেই বেরিয়ে পড়লাম। সোজা রাস্তা কিছুটা গ্রামের মধ্যে দিয়ে। বুঝতে পারলাম আমাদের অবস্থান থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই ছিল গ্রামটি। পাহাড়ি মানুষদের বাড়ির উঠোন পেড়িয়ে ঢুকে পড়লাম সিঙ্গালীলা ন্যাশনাল পার্কের চৌহদ্দিতে। সেখানেই কিছুক্ষণের বিরতি। পারমিট করিয়ে আবার চলা। গাইড বললেন, ‘‘এখন আমরা নেপালের মধ্যে দিয়েই হাঁটছি।’’ চারদিকে ঘন জঙ্গল। কোথাও কোথাও এই অসময়েও দেখা গেল রডোডেনড্রন। বিখ্যাত সিঙ্গালীলা ন্যাশনাল পার্কের এটা একটা সামান্য অংশ। যার ভিতর দিয়ে চলে গিয়েছে রাস্তা।

এই পথেই একটু বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা গৈরিবাস। সেখানে তখন একটাই ছোট্ট ঝুপড়ি দোকান ছিল। দোকানের সামনে রাখা বেঞ্চে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে চা-কফি-বিস্কুট খেয়ে আবার হাঁটার শুরু। এখান থেকে যে রাস্তাটা আমাদের গাইড দেখাল তা দেখেই রীতিমতো টেনশন শুরু হল। সোজা ৯০ ডিগ্রি উঠে গিয়েছে দেখে মনে হল। খাড়া চড়াই। যেতে তো হবেই। মাঝ পথে লড়াই ছাড়া যাবে না। তাই রওনা দিলাম। গাইড বলে দিলেন, তাড়াহুড়ো না করতে। তা হলেই হাফ ধরে যাবে। গাইডের উপদেশ মেনেই হাঁটা শুরু করলাম। কিন্তু শুরুতেই সবার হাফ ধরে গেল। সত্যিই চড়াইটা ছিল ভয়ঙ্কর। মেঘমার সেই রাস্তার ধাক্কা ভুলিয়ে দিল। কালিপোখড়ি পৌঁছতে দুপুর হয়ে গেল। যেখানে লাগার কথা ছিল দু’আড়াই ঘণ্টা। তবে সেখানে একটা মজা হল। যা প্রথম দেখলাম।

Sandakphu Trekking 1: স্মৃতির পাতা থেকে, মানেভঞ্জন টু টুমলিং

Sandakphu Trekking 2

পৌঁছে গেলাম ১০৪০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত কালিপোখড়িতে। কালো জলের ছোট্ট পুকুরকে পিছনে রেখে ছোট্ট একটা চড়াই পেড়িয়েই বিশাল মাঠ। সবুজ ঘাসে ঢাকা। মাঠ পেড়িয়ে আমাদের থাকার জায়গা। ছোট্ট ছোট্ট কয়েকটি ঘর। সামনেই কিচেন। তখন কোথাও অ্যাটাচ টয়লেট ছিল না। তাই তার ব্যবস্থা বাইরে। মজার ঘটনা সেদিন যেটা ঘটল সেটা হল, আমরা পৌঁছনোর সময়ই দেখেছিলাম মাঠে প্রচুর মুরগি ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাড়ির মালকিন জিজ্ঞেস করলেন রাতে কী খাওয়া হবে। আমরা একবাক্যে বললাম চিকেন-রোটি। তখন তিনি বললেন, মাঠে চলে যেতে। আমরা তো অবাক। একটি ছোট্ট ছেলেও আমাদের সঙ্গে সঙ্গে মাঠে এল। ঘুরে-বেড়ানো মুরগিগুলোকে দেখিয়ে বলল, ‘‘কোনটা খাবেন রাতে?’’ আরও একবার অবাক হওয়ার পালা। ছেলেটি বলল, ‘‘আপনাদের যেটা পছন্দ সেটাই রান্না হবে।’’ আমরা সেই মতো দুটো মুরগি বেছে দিলাম। আর সঙ্গে সঙ্গেই তাদের পিছনে দৌঁড় শুরু করল সেই ছেলেটি। একটা সময় ধরেও ফেলল।

কিন্তু তার মধ্যেই ব্যাঘাত ঘটালাম আমি। সন্ধ্যে থেকে শুরু হল ধুম জ্বর। প্যারাসিটামল খেয়েও কমল না। হোমস্টে-র মালকিন নানারকম উপদেশ দিলেন। কিন্তু জ্বর কমার নাম নেই। পর দিন সকালেই সব থেকে দীর্ঘ ট্রেক। পৌঁছতে হবে সান্দাকফু। সবার মাথায় হাত। কী করে অতটা রাস্তা হাঁটব আমি। ঠিক হল ল্যান্ডরোভারে করে আমি সান্দাকফু পৌঁছবো বাকিরা হেঁটে আসবে। কিন্তু আমি তাতে নারাজ। হেঁটেই যাব। সকালে কেমন থাকি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বাকি সময়টা আমার শুয়েই কাটল। খুব বেশি ঘরের বাইরে বেরতে পারিনি। এক তো হাঁটার ক্লান্তি সঙ্গে অসুস্থতা। বাকিরা ঘুরে-ফিরে সময় কাটাল। আর আমি ঘুমিয়ে।

Sandakphu Trekking 2

এক বন্ধু এসে বলল, ‘‘তোর জ্বর সেরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে এলাম।’’ সেটা কেমন?বলল, ‘‘ঝাল ঝাল করে পর্ক রান্না হচ্ছে। সঙ্গে ঝাল চিকেন। দুটো খেয়ে নিবি, তোর জ্বর পালিয়ে যাবে।’’ পর্কটা আমাদের আবদারে ডিনারে জোড়া হয়েছিল। সেই আমার প্রথম পর্ক খাওয়া। রাতে আমার ডিনার ঘরেই এল আর বাকিরা ডাইনিংয়ে খেতে গেল। সত্যি বলছি, সেই চিকেন আর পর্কের টেস্ট আজও জিভে লেগে আছে। অপূর্ব। জ্বরের জন্য খুব আয়েশ করে খেতে না পারলেও সত্যিই যেন অসুধের মতো কাজ করল। রাতে এটাই প্রার্থণা করতে করতে ঘুমোলাম যাতে সকালে উঠে দেখি জ্বর সেরে গিয়েচে আর আমি পুরো ফিট। সকালটা হল জ্বর ছাড়াই।

(তৃতীয় পর্ব আগামীকাল)

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)