সি লিঙ্কের সঙ্গে মনেরও লিঙ্ক হয়ে গেল অজান্তেই

সি লিঙ্কের সঙ্গে মনেরও লিঙ্কসি লিঙ্ক মুম্বই।

মেঘ বালিকা


সি লিঙ্কের সঙ্গে মনেরও লিঙ্ক হয়ে যাবে কে জানত!

মুম্বই পৌঁছেছিলাম বিশেষ কাজে। লম্বা দু’সপ্তাহের ট্রিপ। ঠাসা কর্মসূচি। ঘোরাঘুরি যে হবে না তা জানাই ছিল। হোটেল আর কর্মস্থল চলতে চলতেই হঠাৎ একটা সুযোগ সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দিল। আসলে সুযোগটা দিলেন আমার ‘ওলাওয়ালা’। তাঁর দয়াতেই সি লিঙ্কের সঙ্গে লিঙ্ক হয়ে গেল মনও। সকালটা ফাঁকাই ছিল। মনে হল, সিদ্ধি বিনায়কের নাম শুনেছি অনেক, কিন্তু আগে যাওয়া হয়নি। একটু ঘুরে এলে কেমন হয়!

যেমন ভাবা তেমনই কাজ। ওলা ডেকে বেরিয়ে পড়লাম সিদ্ধি বিনায়কের উদ্দেশে। আমার যে ভক্তি আছে এমনটা নয়। তবে স্থাপত্যটা দেখার খিদেটা ছিল। শেয়ার ওলা। মাঝে এক জনের জন্য অপেক্ষা করে না পেয়ে আবার রওনা দিল। আমার আবদার, ‘‘আর কাউকে তুলতে হবে না।’’ ওলাওয়ালার জবাব, ‘‘তা হলে তো আমার ফাইন হয়ে যাবে। তবে, একটা উপায় আছে। আমি যদি গাড়িটা হাইওয়ে দিয়ে নিয়ে যাই, তা হলে আর কোনও প্যাসেঞ্জার উঠবেন না।’’

আমি বললাম, ‘‘তাই হোক।’’ এর পরই ড্রাইভারের প্রশ্ন, ‘‘ম্যাডাম সি লিঙ্ক পাকড় লে? আর থোড়া টোল ভর দেনা।’’

কত?

‘‘৭০ রুপিয়া।’’

সি লিঙ্ক? সেই বিখ্যাত সি লিঙ্ক। তার কাছে আর ৭০ টাকা কী! আমার বন্ধু তার দু’দিন আগেই বলছিল ও গত বার এসে সি লিঙ্ক ব্রিজে যেতে পারেনি। এক মুহূর্ত সময় না নিয়ে আমিও রাজি।

মুম্বইয়ের গলি ছেড়ে গাড়ি ছুটল হাইওয়ে ধরে সি লিঙ্কের পথে। শহর ছেড়ে বেরোতেই বাইরের প্রকৃতিটা এক লহমায় বদলে গেল। বিরাট বিরাট চওড়া রাস্তা, তার মধ্যে দিয়ে গাড়ি ছুটল ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে। হাইওয়ে একটা বাঁক নিতেই চোখের সামনে যেন ঝাঁপিয়ে পড়ল বিশাল সমুদ্র। সমুদ্রকে বাঁ দিকে রেখে ছুটে চলল গাড়ি। এসি বন্ধ করে গাড়ির কাচ খুলে দেওয়ার পরামর্শ দিলেন স্বয়ং ওলাওয়ালা। জানলা খুলতেই সমুদ্রের হাওয়া সব এলোমেলো করে দিল। হোটেল থেকে বেরোনোর সময় যে প্রবল খিদে পেয়েছিল, সেটাও উধাও তত ক্ষণে। মন যে ভরে গিয়েছে!

দূরে তত ক্ষণে চোখের ফ্রেমে ধরা দিয়ে দিয়েছে সি লিঙ্ক ব্রিজ। লম্বা ব্রিজ পেরিয়ে চলেছি। বাঁ দিকের জানলায় তখন একটার পর একটা ঢেউয়ের হাতছানি। গাড়ি দাঁড় না করিয়ে কি পারা যায়! ব্রিজ থেকে নামতেই সমুদ্রের ধারে ব্রেক কষলেন চালক। আমিও এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে নেমে পড়লাম।

মোবাইল, ক্যামেরা সবই চলতে লাগল। মনে ছবি তো মনেই থাকল আর বাকিটা থাকল ক্যামেরায়। মাঝ সমুদ্রে তখন ঢেউয়ের ছন্দে পা মেলাচ্ছে ডিঙি নৌকো। মাছ ধরতে বেরিয়েছে। আগের দু’দিন বৃষ্টির জন্য সমুদ্রে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। তাই বৃষ্টি কমতেই নেমে তাঁর নেমে পড়েছেন। মন বলছিল, আরও অনেকটা সময় যদি এই সমুদ্রের পাড়ে নিভৃতে বসে থাকা যেত! কিন্তু ফিরতেই হত। তার পরও বেশ খানিকটা সময় গাড়ির জানলার বাইরে ধরা দিল সমুদ্র। মুম্বইয়ের  আরব সাগর।

চললাম সিদ্ধি বিনায়ক। সমুদ্র চোখের আড়াল হতেই পেটের খিদেটা আবার জাঁকিয়ে বসল। ড্রাইভার মন্দির চত্বরে নামিয়ে দিয়ে বিদায় নিলেন। ওঁকে ধন্যবাদ জানালাম, ব্যস্ত জীবনে ওইটুকু অক্সিজেন এনে দেওয়ার জন্য। সঙ্গে থাকল এই সি লিঙ্কেই ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি।