সোমনাথ মন্দির পর্যটকদের জন্য খুলে যাচ্ছে, খুলছে সমুদ্র দর্শনপথ

সোমনাথ মন্দির পর্যটকদের জন্য খুলে যাচ্ছে

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: সোমনাথ মন্দির পর্যটকদের জন্য খুলে যাচ্ছে । বিপুল ইতিহাসের নথি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই মন্দির। বার বার ভেঙে আবার তৈরি হয়েছে কখনও মুঘল তো কখনও ব্রিটিশ। কিন্তু সারাজীবনের জন্য হারিয়ে যায়নি সোমনাথ মন্দির। এবার সেই মন্দিরকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলেছে বর্তমান কেন্দ্র সরকার। এদিন সেই মন্দিরেরই একগুচ্ছ প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গর্ভ গৃহ ও মন্দিরের মাথায় যে কলসি রয়েছে তা সোনায় মুড়ে দেন নরেন্দ্র মোদী। তৈরি হয়েছে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড। যার মাধ্যমে মন্দিরের ইতিহাস উঠে আসবে পর্যটকদের সামনে। দেশীয় পর্যটকদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যটকরাও এই মন্দিরে আকৃষ্ট হবেন বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্দিরের পিছনেই রয়েছে সমুদ্র। তার পাড় দিয়ে তৈরি হয়েছে দীর্ঘ রাস্তা। সমুদ্র দেখতে দেখতেই সেই পথে হাঁটা যাবে।  তৈরি হয়েছে মন্দিরের মিউজিয়াম। যাতে থাকবে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন। একটু ফিরে দেখা যাক মন্দিরের ইতিহাস।

সোমনাথ মন্দিরটি ত্রিবেণী সঙ্গমে (কপিলা, হিরণ এবং পৌরাণিক সরস্বতীর সঙ্গম) হওয়ার কারণে প্রাচীনকাল থেকেই এটি তীর্থস্থান হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। কথিত আছে চন্দ্র দেবতা সোমা  অভিশাপের কারণে তার দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেন বলে মনে করা হয়, এবং তিনি তা ফিরে পাওয়ার জন্য এখানেই সরস্বতী নদীতে স্নান করেছিলেন। শহরের নাম প্রভাস, যার অর্থ দীপ্তি, পাশাপাশি বিকল্প নাম সোমেশ্বর এবং সোমনাথ (“চাঁদের প্রভু” বা “চাঁদের দেবতা”) এই ঐতিহ্য থেকে উদ্ভূত।

জে গর্ডন মেল্টনের তথ্য অনুসারে, সোমনাথের প্রথম শিব মন্দিরটি অতীতে কোন এক অজানা সময়ে নির্মিত হয়েছিল বলে জানা যায়। কথিত আছে যে, দ্বিতীয় মন্দিরটি “যাদব রাজারা” একই স্থানে নির্মাণ করেছিলেন। ৭২৫ খ্রিস্টাব্দে, সিন্ধুর আরব গভর্নর আল-জুনায়েদ গুজরাট এবং রাজস্থান আক্রমণের সময় দ্বিতীয় মন্দিরটি ধ্বংস করেছিলেন বলে জানা যায়। এর পর গুর্জারা-প্রতিহার রাজা নাগভট্ট দ্বিতীয় ৮১৫ খ্রিস্টাব্দে লাল পাথরের একটি বড় কাঠামোতে তৃতীয় মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।

নাগভট্ট দ্বিতীয় সোমেশ্বরসহ সৌরাষ্ট্রের তীর্থস্থানগুলি পরিদর্শন করেছেন বলে জানা যায়। চৌলুক্য (সোলাঙ্কি) রাজা মুলারাজ সম্ভবত ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের কিছু আগে এই স্থানে প্রথম মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন, যদিও কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন যে তিনি হয়তো আগের একটি ছোট মন্দিরকেই সংস্কার করেছিলেন। ১০২৪ সালে, প্রথম ভীমের শাসনকালে, গজনীর বিশিষ্ট তুর্কী মুসলিম শাসক মাহমুদ গুজরাট আক্রমণ করে, সোমনাথ মন্দির লুঠপাঠ করে এবং এর জ্যোতির্লিঙ্গ ভেঙ্গে ফেলে। তিনি ২০ মিলিয়ন ডিনার লুঠ করে নিয়ে যান। ঐতিহাসিকরা মনে করেন মাহমুদের দ্বারা মন্দিরের ক্ষয়ক্ষতি কম ছিল কারণ ১০৩৮ সালে মন্দিরে তীর্থযাত্রার রেকর্ড রয়েছে, যা মন্দিরের কোনও ক্ষতির উল্লেখ করে না। মাহমুদের অভিযান সম্পর্কে তুর্কো-ফার্সি সাহিত্যে বিশদ ব্যাখ্যা রয়েছে।

১১৪৩-৭২ সময়ে কাঠের ভেঙে যাওয়া মন্দিরটিকে কুমারপাল পাথরে পুনর্নির্মাণ করেছিলেন এবং রত্ন দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলে‌ ১১৬৯-এর শিলালিপি এমনটাই বলছে। ১২৯৯ সালে গুজরাট আক্রমণের সময়, উলুঘ খানের নেতৃত্বে আলাউদ্দিন খলজির সেনাবাহিনী, বাঘেলা রাজা কর্ণকে পরাজিত করে, এবং সোমনাথ মন্দির ভাঙচুর করে। এর পর  জালর শাসক কানহাদাদেবা পরে সোমনাথের মূর্তি উদ্ধার করেন এবং জালোরের কাছে দিল্লির সেনাবাহিনীর উপর আক্রমণের পর হিন্দু বন্দীদের মুক্তি দেন। অন্যান্য সূত্র জানায় যে মূর্তিটি দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমির খুসরু এই মন্দিরে গিয়েছিলেন।

১৩৯৫-এ এই মন্দির আবার ধ্বংস করে জাফর খান। এই নিয়ে তৃতীয়বার। ১৬৬৫-তে ঔরঙ্গজেব মন্দির ধ্বংস করার নির্দেশ দেন।  ১৭০২-এ তিনি বলেনি যদি হিন্দুরা সেখানে পুজো করে তাহলে পুরো ধ্বংস করে দেওয়া হবে। এর পর ইন্দোরের অহল্যাবাঈ হোলকার সোমনাথ মন্দিরটি আবার বানান। রুপোর দরজা গজনী থেকে নিয়ে যান মহাদাজি শিন্দে। যা উজ্জয়নীর গোপাল মন্দিরে বসানো হয়। এর পর ব্রিটিশ শাসনকালে এই গেট নিয়ে চলে নান টানাপড়েন। পরবর্তী সময়ে এই মন্দির নতুন করে তৈরি করে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল। এই মন্দিরের সঙ্গে মুঘল থেকে ব্রিটিশ আমলের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। বাকিটা না হয় মন্দির চত্তরে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড দেখতে দেখতে বা মিউজিয়ামে ঘুরতে ঘুরতেই জানলেন।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)