সুচরিতা সেন চৌধুরী: এক ঢিলে দুই পাখি মারতে কে না ভালবাসে। আর সেটা যদি হয় বেড়ানো আর শপিং তা হলে তো কথাই নেই। এমনিতে বাঙালি যেমন ভ্রমণপ্রিয় তেমনই শপিংপ্রেমী। সঙ্গে দরদামেও দারুণ অভিজ্ঞ বাঙালি। তাই হাতের কাছে যদি দুটোই এক সঙ্গে পাওয়া যায় তাহলে উইকএন্ডে বেরিয়ে পড়াই যেতে পারে (Sonajhuri Haat)। পুজোর আগে হাতে এখনও রয়েছে দুটো উইকএন্ড। তাই শুক্রবার অফিস করে রাতেই বেরিয়ে পড়া যেতে পারে বোলপুরের উদ্দেশে। যাদের শনিবারও অফিস তাঁরা শনিবার রাতেও যেতে পারেন। রবিবার থেকে সোমবার ভোরে বেরিয়ে সরাসরি অফিস পৌঁছে যাওয়া যায়। সব মিলে ব্যাপারটা দারুণ জমে যাবে।
উইকএন্ডে দিঘা ছাড়া বাঙালির অত্যন্ত প্রিয় ডেস্টিনেশন অবশ্যই শান্তিনিকেতন। আর সেখানে গিয়ে বিশ্বভারতীর পাশাপাশি পর্যটকের আকর্ষনের কেন্দ্র বিন্দু যেমন কোপাইয়ের পাড় তেমনই সোনাঝুরি, খোয়াই। আর এই সোনাঝুরির জঙ্গলেই বসে স্থানীয়দের হাতে তৈরি জিনিসের হাঁট। তবে সেখানে যাবতীয় জিনিসই মহিলাদের পছন্দের। শাড়ি, ব্যাগ, গয়নার পাশাপাশি ঘর সাজানোর যাবতীয় জিনিসের পসরা নিয়ে বসেন স্থানীয়রা। আর দাম? না গেলে বিশ্বাস হবে না।
এতবছর ধরে নিয়মিত শান্তিনিকেতন যাওয়া হয়, সোনাঝুরির হাঁটেও বাজার করা হয় কিন্তু পুজোর আগে এভাবে কখনও যাওয়া হয়নি। এবার অগস্টে পৌঁছে মনে হল পুজোর বাজার যতটা সম্ভব এখান থেকেই সেরে নেওয়া যাক। পুরো শনি ও রবিবার সোনাঝুরির হাঁটে কাটিয়েও শেষ পর্যন্ত সাধ মিটল না। শ্রীনিকেতন বা শান্তিনিকেতন যেখানেই থাকুন না কেন, সেখান থেকে টোটো নিয়ে পৌঁছে যান সোনাঝুরি। পড়ন্ত বিকেলে সোনাঝুরি গাছের ফাঁক দিয়ে সূর্য দিনের শেষ আলো ছড়িয়ে বিদায় নেয়। যাঁরা ফাঁকা ফাঁকা জায়গা পছন্দ করেন তাঁরা বাজার চত্তর ছাড়িয়ে একটু ভিতরে ঢুকে গেলেই সেই ফ্লেভার পাবেন। গাছে হেলান দিয়েই কেটে যাবে বিকেল।
ঝুপুৎ করে যখন সন্ধে নামবে তখন ফেরার পথে বাজার ঘুরতে ঘুরতে ফেরা যায়। তবে যতক্ষণ সূর্যের আলো থাকে ততক্ষণই এই হাট চলে। কারণ এখানে বিদ্যুৎ নেই। তাই অন্ধকার হয়ে গেলে আর হাট চালানো সম্ভব হয় না। তবে শেষ বেলায় জিনিসের মূল্য আরও সস্তা হয়ে যায়। সেটা প্রমান পেলাম হাতে নাতে। প্রথম দিন বেলায় বেলায় গিয়েছিলাম। মূল শপিং সেদিনই করা হয়েছিল। পর দিন পৌঁছতে দেড়ি হয়ে গিয়েছিল। তখন সন্ধে নামছে। কারও কারও কাছে হ্যাজাক জ্বলছে। দেখলাম যা গত দিন ২০০ টাকায় পেয়েছিলাম তা এদিন পেলাম ১০০-১৫০-এ।
পালাজো, র্যাপার, কুর্তি পাওয়া যায় ১৫০ থেকে ২৫০-র মধ্যে। বিভিন্ন ডিজাইনের কাপড়ের ব্যাগ ছোট থেকে বড় হিসেবে বিভিন্ন দামে পাওয়া যায়। ২০ থেকে ৫০-৬০ টাকার পার্স। ব্যাগ পাওয়া যাবে ১০০ থেকে ৫০০ পর্যন্ত। ঘর সাজানোর নানা জিনিস, পেন্টিং, ছবি, ওয়াল হ্যাঙ্গিং ১০০ থেকে ৩০০-র মধ্যে পছন্দসই পাওয়া যাবেই। এ ছাড়া গয়নার দাম সে ভাবে আলাদা করে বলাটা মুশকিল। বিভিন্ন গাছের ছাল, গাছের রস, শিকর, মাটি দিয়ে তৈরি কানের দুল, মালা, ব্যাঙ্গেলের অসাধারণসব কালেকশন রয়েছে স্থানীয়দের কাছে। সেই মূল্য ৫০ থেকে ২০০ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।
আমাকে সব থেকে বেশি অবাক করেছে শাড়ি। ঘুরতে ঘুরতে শেষ বেলায় ডাই করে রাখা এক শাড়ি বিক্রেতার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় চোখ আটকে গেল। না দাঁড়িয়ে পারলাম না। একের পর এক অসাধারণ সব শাড়ি দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল পুরো দোকানটাই তুলে নিয়ে যেতে পারলে ভাল হত। ততক্ষণে সকলের কাছেই ক্যাশ টাকা ফুরিয়েছে প্রায়। ভাগ্যিস অনলাইন পেমেন্ট এখন ভীষনভাবে সক্রিয়, তাতেই স্বস্তি। শাড়ির দামও ২০০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত এমনকী তারও বেশিতে রয়েছে। তবে দরদাম করলে অনেকটাই কমে যায়। এবং সে ২০০ হোক বা ২০০০—সব শাড়িই পছন্দসই। ছেলেদের জন্য কালেকশন মেয়েদের তুলনায় অনেক কম। তবে রয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের পাঞ্জাবী আর মজার মজার বাংলা লাইন লেখা টি-শার্ট। যা নিজের মুডের সঙ্গে মিলিয়ে কেনা যেতেই পারে।
তাহলে, কী ভাবছেন? এই উইকএন্ডে বেরিয়ে পড়বেন নাকি শান্তিনিকেতনের উদ্দেশে? শান্তি আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতির সঙ্গে জমিয়ে হতে পারে শপিং। সঙ্গে শহুরে ভিড় থেকে এক বা দু’দিনের জন্য স্বস্তি। ভিড় যে সেখানে নেই তা নয়, কিন্তু তার সঙ্গে রয়েছে অদম্য ভাললাগা, স্বাদ পরিবর্তন, আবহাওয়ার বদল— সব মিলে কিছুটা অক্সিজেন নিয়ে ফেরা। ও এখানে বলে রাখা ভাল পর্যটকদের চাহিদা দেখে হাটের দিন বাড়ানো হবে বলে শুনে এসেছিলাম। শনিবার ও রবিবার থেকে বাড়িয়ে চারদিন করা হবে। হাট চলে ভোর থেকে অন্ধকার নামার আগে পর্যন্ত।
কীভাবে যাবেন— শিয়ালদহ থেকে উত্তরবঙ্গগামী যে কোনও ট্রেন বোলপুরের ওপর দিয়ে যায়। টিকিট কেটে উঠে পড়লেই হল। অথবা ধর্মতলা থেকে বাস ছাড়ে। এ ছাড়া নিজের গাড়ি থাকলে তো কথাই নেই। নিজের মতো করে যে কোনও সময় বেরিয়ে পড়া যায়। থাকার জন্য হোটেলেরও অভাব নেই। বিভিন্ন দামের হোটেল রয়েছে। তেমনই রয়েছে বিভিন্ন স্বাদের রেস্টুরেন্ট। দুটো দিন দারুণ কাটবে আমি নিশ্চিত।
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google