মুসৌরি আর মেঘ, গারোয়াল টেরাসের স্বপ্নের লনের দিনগুলো, প্রথম পর্ব

মুসৌরিগারোয়াল টেরাসের ব্যালকনি থেকে

মুসৌরি শুনলেই অনেকে নাক সিঁটকে বলেন, ‘‘ধুর ধুর বড্ড ঘিঞ্জি’’। কিন্তু সেই মুসৌরিই খুলে দেয় মনের জানলা। যে জানলা দিয়ে ঢুকে আসে মেঘের দল। যে মুসৌরির রাস্তায় প্রচুর মানুষের ভিড়েও একা হওয়া যায় বার বার। গম গমে বাজারে একলা হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে যাওয়া যায় দূরের পাহাড়ের বাঁকে। কী ভাবে? সেই কথাই লিখলেন সুচরিতা সেন চৌধুরীআজ প্রথম পর্ব।


মুসৌরিকে প্রথম দেখেছিলাম প্রায় ২০ বছর আগে। দিল্লি থেকে ট্রেনে দেরাদুন। সেখান থেকে সরক পথে মুসৌরি। ট্রেন থেকে নেমেই দেরাদুন স্টেশনের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। ছোট্ট ছিমছাম একটা স্টেশন। পাহাড়মুখি স্টেশনগুলো আমার সব সময়ই খুব প্রিয়। এক একটা স্টেশন এক একরকমের কাহিনী লিখে চলে। দেরাদুন তার মধ্যে একটি। তার পর সম্প্রতি আরও দু’বার মুসৌরি গিয়েছি কিন্তু দেরাদুন স্টেশন ২০ বছরে একটুও বদলায়নি। স্টেশন থেকে বেরিয়ে গাড়ি করে সোজা মুসৌরি পাহাড়।

সেবার আমাদের দলটা ছিল ৬ জনের। আমি, বাবা, মা , বোন আর আমার দুই বন্ধু রবি আর সৌরভ। দেরাদুন স্টেশন থেকেই বাবা বুক করে নিয়েছিলেন রেলের হলিডেহোম। কুমায়ুন বিকাশ ট্যুরিজমের হোটেল গারোয়াল টেরাসে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে রিসেপশন। সেখান থেকেই নিচে নেমে গিয়েছে সিঁড়ি। বেশ কয়েকধাপ নামার পর জুটল ঘর। মনটা বেশ খারাপ। রীতিমতো আন্ডারগ্রাউন্ড। ভিউয়ের নামে দেওয়ালই জুটবে। তখনও মুসৌরির হোটেল সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না। বেশ মন খারাপ। একটা ঘরে চারটি বেড।

মুসৌরির রোপওয়ে

যে ছেলেটি আমাদের ঘরে পৌঁছে দিয়ে গিয়েছিল সে বলেছিল পিছনে একটা দরজা আছে। তার পর বারান্দা। ধারণাই ছিল না আন্ডারগ্রাউন্ড ঘরের বারান্দা থেকে কী দেখা যেতে পারে। ব্যাগ-পত্তর রেখে সেই দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম। ঘরটা বেশ বড়। দরজা খুলতেই চোখের সামনে যেন হাজির স্বর্গরাজ্য। হ্যাঁ, একদম ঠিক শুনেছেন। সামনে বিশাল লন। আর লনের রেলিং পেরিয়ে যতদূর দৃষ্টি যায় শুধুই ধাপে ধাপে উঠে যাওয়া পাহাড়। দূরে রাস্তা দিয়ে সর্পিল গতিতে গাড়ির আনাগোনা।

এপ্রিলের শেষের দিকে ততক্ষণে পাহাড়ে বর্ষা পৌঁছে গিয়েছে। তাই কখন যে ঝুপুৎ করে মেঘ নেমে এসে বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দিয়ে চলে যাবে কেউ বলতে পারে না। আমাদের সঙ্গেও হল একই ঘটনা। হুড়মুড়িয়ে কোথা থেকে একঝাঁক মেঘ নেমে এসে সটান ঢুকে পড়ল ঘরের মধ্যে। বাবা পড়িমড়ি করে দৌঁড়ে এলেন মেঘের দাপটেই সব ভিজে যাচ্ছে দেখে। সত্যি বলছি তার পর থেকে যে ক’টা দিন ছিলাম বেশিরভাগ সময় কেটেছে ওই লনে। ঘরের লাগোয়া সিমেন্টের একটা উঁচু জায়গায় মাঝ রাত পর্যন্ত চাদর-কম্বল চাপিয়ে বসে গল্প চলত আমাদের। আর রাতের মুসৌরি? সে ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। নিজের চোখে না দেখলে সেই রূপ বোঝা যাবে না। পাহাড়ের উপর থেকে নিচে আলোর মালায় সেজে ওঠা দেরাদুন শহরের দৃশ্য সারাজীবন থেকে যাবে সুখস্মৃতি হয়ে।

রাতের মুসৌরি

প্রথম দিনই মন জিতে নিয়েছে মুসৌরি। শহরে ঘুম ভাঙতে দুপুর হয়ে গেলে কী হবে পাহাড়ে আমার সকাল সাধারণত খুব তাড়াতাড়ি হয়। আর ওই বারান্দার আকর্ষণ তো রয়েছেই। সকালের পাহাড় দেখার লোভ ওই বারান্দা থেকে। সকালটা বেশ মেঘলাই ছিল। তবুও মেঘের ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝেই উঁকি দিয়ে যাচ্ছিল সবুজ পাহাড়। আসলে রাতে বেশ ভালই বৃষ্টি হয়েছে। আর বৃষ্টিতে ভিজে পাহাড়ি সবুজ আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে।  সিমেন্টের লনও ভিজে। হালকা হাওয়া বইছে। সেই হাওয়ায় মাঝে মাঝে কেটে যাচ্ছে মেঘ। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেঘ কেটে রোদ উঠল।

আজ আমাদের রোপওয়ে চাপার দিন। পাহাড়ের গা বেয়ে রোপওয়ে নিয়ে যায় অন্য একটি পাহাড়ে। গতকাল যখন পৌঁছেছিলাম তখন দেখেছি মাথার উপর দিয়ে রোপওয়ে চলে যেতে। আর বিকেলে ঝাঁচকচকে মল রোডে জমিয়ে খাওয়া, ঘোরা, শপিং সব।

ছবি—লেখক

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)