ভারতীয়রা দেশ ছাড়তে চাইছেন, আমেরিকায় জমা পড়ল ৭ হাজার আবেদন!

ভারতীয়রা দেশ ছাড়তে চাইছেন

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ভারতীয়রা দেশ ছাড়তে চাইছেন, এটা শুধুমাত্র একটা বিবৃতি নয়। এটা একটা প্রশ্নও। ভারতীয়রা দেশ ছাড়তে চাইছেন? কিন্তু, কেন?

আসলে প্রশ্নটা উঠছে একটা রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর। ‘ইউনাইটেড নেশনস রিফিউজি এজেন্সি’ (ইউএনআরএ) সম্প্রতি একটি নথি প্রকাশ করেছে। সেই নথিতে দেখা গিয়েছে, ২০১৭ সালের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৭ হাজারের বেশি মানুষ আমেরিকার শরণাপন্ন হয়েছেন। তাঁরা আসলে সে দেশে শরণার্থী হিসাবে থাকতে চান। বা বলা ভাল রাজনৈতির আশ্রয় চেয়েছেন। তবে সংখ্যাটা দেখে চোখ কপালে ওঠার মতোই। এক বছরে ৭ হাজার!

এটা শুধু নতুন আবেদনপত্রের হিসেব। বছর বছর ধরে ঝুলে রয়ছে এ রকম আরও হাজার হাজার মানুষের আবেদনপত্র। বিভিন্ন দেশই রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে থাকে। ইউরোপ, আমেরিকা তার মধ্যে অন্যতম। তবে প্রকাশিত ওই তথ্য জানাচ্ছে, সারা বিশ্ব থেকে সব থেকে বেশি আবেদন পৌঁছেছে আমেরিকার কাছেই। ইউএনআরএ আরও জানাচ্ছে, প্রতি বছর গোটা বিশ্ব থেকে প্রায় ৬ কোটি ৮৫ লাখ মানুষ গৃহচ্যুত হচ্ছেন। তার মধ্যে ১ কোটি ৬২ লাখ মানুষ শুধু ২০১৭ সালেই! অর্থাৎ প্রতি দিন ৪৪ হাজার ৫০০ জন মানুষ গৃহচ্যুত হয়েছেন! আরও ভেঙে বললে, প্রতি দু’সেকেন্ডে এক জন করে মানুষ ঘর হারাচ্ছেন।

অবশেষে বৃষ্টি নামল শহরে

যুদ্ধ, হানাহানি এবং অত্যাচার বিশ্ব জুড়ে এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে মানুষ নিজেদের দেশে ছেড়ে পালাতে চাইছে। গত পাঁচ বছর ধরে এই ‘পালানো’ হার ক্রমশ বেড়েছে। গত বছর সেটা আকাশ ছুঁয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ সুদানের যুদ্ধ, মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে হাজির হওয়া হাজার হাজার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু। রয়েছেন মধ্য আমেরিকার মানুষও।

আবেদনের তালিকায় সবার উপরে রয়েছে সালভাদর। সেখান থেকে আবেদন জানিয়েছেন ৪৯ হাজার ৫০০ জন। ২০১৬-য় ওই দেশ থেকে আবেদন করেছিলেন ৩৩ হাজার ৬০০ জন। ভেনেজুয়েলা থেকে আবেদনের সংখ্যা ২৯ হাজার ৯০০ থেকে ৬৩ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া এই তালিকায় রয়েছে মেক্সিকো (২৬ হাজার ১০০), চিন (১৭ হাজার ৪০০), হাইতি (৮ হাজার ৬০০) এবং চমক দেওয়ার মতো তথ্য ভারত (৭ হাজার ৪০০)। মোট ১৬৮টি দেশের মধ্যে এ ক’টাই শীর্ষে।

এখানেই চমকের শেষ নয়। রিপোর্ট বলছে আমেরিকায় ২০১৭-র শেষে ১৯ লাখ ৭ হাজার ১৪৬ জন ভারতীয় উদ্বাস্তু রয়েছেন। তার মধ্যে আবেদন জানিয়েছেন ১০ হাজার ৫১৯ জন। তাঁদের ভাগ্য এখনও ঝুলে রয়েছে।  সেখানে অন্য চমক দেখিয়েছে সিরিয়া। ২০১৩ থেকে এই প্রথম পুনর্বাসনের তালিকায় উপরের দিকে নেই সিরিয়া। রাজনৈতিক আশ্রয়ের সব থেকে বেশি দাবিদার আফগানিস্তান। ৮০টি দেশ থেকে আফগানদের আবেদন জমা পড়েছে ১২ লাখ ৪ হাজার ৯০০।

২০১৬-য় এই আবেদনগুলো অনেক বেশি যেত অন্যান্য দেশেও। যেমন সেই তালিকায় ছিল তুরষ্ক (৬৭ হাজার ৪০০), জার্মানি (১৬ হাজার ৪০০), গ্রিস (৭ হাজার ৫০০), ফ্রান্স (৬ হাজার ৬০০)। এই তালিকায় রয়েছে ভারতও (৪ হাজার ৫০০)। বেশির ভাগ উদ্বাস্তুরা ছিলেন মায়ানমারের। ২০১৬-তে সেখানকার জনসংখ্যা ছিল ৫ লাখ। ২০১৭-তে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজারে।

মায়ানমার থেকে সব থেকে বেশি উদ্বাস্তু আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে (৯৩ লাখ ২ হাজার ২০০)। এর পর রয়েছে থাইল্যান্ড (১০ লাখ ), মালয়েশিয়া (৯৮ হাজার) ও ভারত (১৮ হাজার ১০০)। ২০১৬-র থেকে প্রায় ২৯ লাখ বেশি মানুষ ২০১৭-য় নিজের দেশ ছেড়েছেন। তবে আশার আলো দেখছেন ইউএন হাইকমিশনার ফর রিফিউজি ফিলিপো গ্রান্দি। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘এই চাপ সামলানোর পথে আমরা এগোচ্ছি। ১৪টি দেশ ইতিমধ্যেই উদ্বাস্তুদের আশ্রয়ের বিষয়ে নতুন আইনের নীল-নকশা তৈরি করে ফেলেছে। যা নিয়ে ইউনাইটেড নেশনস-এর সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’