এয়ার ইন্ডিয়া বিমানের অবতরণ নিয়ে ৩৮ মিনিটের দমবন্ধ করা বাস্তব, যেন সিনেমা

কাবুল

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: এয়ার ইন্ডিয়া বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি, তবুও নামতে পারল না নিউ ইয়র্কে। বিকল যন্ত্র নিয়ে প্রাণ হাতে ৩৮ মিনিট আকাশে থাকতে হল ৩৭০ জন যাত্রীকে। বিমান চালকের তৎপড়তায় শেষ পর্যন্ত অন্য বিমান বন্দরে ল্যান্ড করল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি। এই ৩৮ মিনিট যা ঘটল তা শুনলে হার হিম হয়ে যাবে। যেন আধ ঘণ্টার একটা টান টান শর্ট ফিল্ম।

দিল্লি থেকে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল বোয়িং ৭৭৭-৩০০। বিশ্বের দীর্ঘতম যাত্রা পথের মধ্যে এটি একটি। এবং নন-স্টপ। ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমান বন্দরে নামার আগে দেখা যায় আবহাওয়া এতটাই খারাপ যে অবতরণ সম্ভব নয়। ততক্ষণে ১৫ ঘণ্টা না থেমে যাত্রা সম্পূর্ণ করে ফেলেছে বিমানটি।

এক জন পাইলটের বেঁচে থাকলে আগামী কয়েক দিন ঘুম কেড়ে নেওয়ার জন্য এই ঘটনা যথেষ্ট। নামতে না পারায় বিমান চালক নিউ ইয়র্ক এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলকে বার্তা পাঠায় এটা জানিয়ে যে বিমানের জ্বালানি শেষ হয়ে এসেছে। তখন তিনি এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলকে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে একটাই রেডিও সোর্স কাজ করছে, কিছুর সঙ্গে একটা ধাক্কা লেগেছে। অনেক সিস্টেম কাজ করছে না। অটো-ল্যান্ড, উইন্ডশেয়ার সিস্টেম, অটো স্পিড ব্রেক এবং অক্সিলিয়ারি পাওয়ার ইউনিট কোনও কাজ করছে না।’’

এটাই শেষ ছিল না। ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেমের তিনটি সঠিক কাজ কারছে না। এই আইএলএস এমন একটি সিস্টেম যেটা যে কোনও আবহাওয়ার মধ্যে বিমান চালককে সাহায্য করে বিমানের অবতরণে। বিমান চালক এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলকে জানান, ‘‘এই ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম সম্পর্কে কিছুই বলা যায় না। সব সময় আমরা যার উপর নির্ভর করে অবতরণ করি সেটাও কাজ করছে না।’’

১৭ বছর আগে ১১ সেপ্টেম্বর জঙ্গি হানায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ার

তখন এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল থেকে প্রশ্ন করা হয়, ‘‘তোমার ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম বিমানের দু’পাশেই কাজ করছে না। এটা ঠিক তো?’’ বিমান চালক জবাব দেন, ‘‘হ্যাঁ, একদম ঠিক।’’ এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল আবার প্রশ্ন করে, ‘‘তুমি বলছ তোমার বিমানের দু’পাশেরই রেডিও অল্টিমিটারও কাজ করছে না?’’ বিমান চালক আবার বলেন, ‘‘হ্যাঁ, একদম ঠিক। আমরা এখন একটি রেডিও অল্টিমিটারের উপর রয়েছি।’’

ততক্ষণে কেটে গিয়েছে অনেকটা সময়। নিউ ইয়র্কের আকাশে মেঘ আরও ঘন হয়েছে। রান ওয়ে দেখা যাচ্ছে না। এর পর এটিসি জানতে চায় কতজন যাত্রী এবং কতটা জ্বালানি রয়েছে তাঁর বিমানে। একজন চালক উত্তর দেন, ‘‘৩৭০জন যাত্রী ও ৭২০০ কেজি জ্বালানি।’’ এর পরও কোনও সুরাহা করতে পারেনি জেএফকে বিমান বন্দর এটিসি।

যখন এত কথার পরও কোনও সুরাহা হয় না তখন বিমান চালক নিজেই সিদ্ধান্ত নেন। সব থেকে কাছের নেওয়ার্ক বিমান বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বোস্টন বা ব্র্যাডলি বিমান বন্দর পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব ছিল না। এতটা জ্বালানি কম ছিল। তখন ক্যাপ্টেন সরাসরি নেওয়ার্ক বিমানন বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখানে আবহাওয়ার নিউ ইয়র্কের থেকে কিছুটা ভাল ছিল।

এই বিমান চালক যা যা করলেন ৩৭০ জন যাত্রীর প্রাণ বাঁচাতে সেটা এয়ার ইন্ডিয়া তাঁদের কোনও ট্রেনিংয়ে সেখায়নি। কিন্তু উপস্থিত বুদ্ধির জোড়ে বাজিমাত করলেন তিনি। তিনি যা যা ব্যবহার করে বিমানটির অবতরণ করলেন তা বিমান প্রস্তুতকারক সংস্থাও কখনও বলেনি সেটা সম্ভব। নেওয়ার্ক বিমান বন্দরে সঙ্গে সঙ্গেই জাড়ি করা হয় লাল সতর্কতা। সব ঝড় সামলে শেষ পর্যন্ত মাটি স্পর্শ করে বিমানটি। সংস্থার তরফ থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি এই নিয়ে।