ইন্দ্রনীল সিন্হা, স্টকহোম: সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমেই ‘রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি’, Rabindranath সেখানে নোবেল পুরস্কার নিতে এসেছিলেন। সেটা ১৯২১ সাল। পুরস্কার নিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘অবশেষে আপনাদের দেশে আসতে পেরে আমি খুশি। আর এই অবকাশে আমার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ আমাকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে সম্মানিত করার জন্য কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করতে চাইছি।’’ যে দেশে এসে তিনি খুশি হয়েছিলেন, সেই সুইডেনেই এ বার রবীন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তী পালিত হল। আয়োজক, টেগোর ড্যান্স অ্যান্ড মিউজিক গ্রুপ, স্টকহোম।
নোবেল কমিটির কাছে রবীন্দ্রনাথের ঠিকানা ছিল না। শেষে সুইডিশ অ্যাকাডেমি রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি’র প্রকাশক ম্যাকমিলান কোম্পানির কাছ থেকে ঠিকানা পায়। তার পর লন্ডন থেকে কেবলগ্রাম পাঠানো হয় কলকাতার ৬ নম্বর দ্বারকানাথ ঠাকুর লেনের ঠিকানায়। সেখানে লেখা ছিল ‘SWEDISH ACADEMY AWARDED YOU NOBEL PRIZE LITERATURE PLEASE WIRE ACCEPTATION SWEDISH MINISTER.’
কবি তখন শান্তিনিকেতনে। নোবেল বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন সে কথা— সেই মুহূর্তে আমি একটি দলের সঙ্গে কাছাকাছির এক জঙ্গলে বেড়াতে যাচ্ছি। ডাক ও তার অফিসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে এক জন দৌড়তে দৌড়তে এসে আমার হাতে সেই তারবার্তাটি দিয়ে যায়। আমার সঙ্গে গাড়িতে সেই সময়ে এক জন ইংরেজ পর্যটকও ছিলেন। তারবার্তাটি যে খুব গুরুত্বপূর্ণ, এমনটা সেই মুহূর্তে মনে হয়নি। আমি সেটিকে পকেটে পুরে রাখি। গন্তব্যে পৌঁছে সেটি পড়ব, এমনটাই ভেবেছিলাম। কিন্তু আমার অতিথি সম্ভবত বিষয়টি জানতেন এবং তিনি আমাকে অনুরোধ করেন সেটি পড়ে ফেলতে, বলেন— এতে গুরুত্বপূর্ণ কোনও বার্তা রয়েছে। আমি তাঁর অনুরোধেই খাম খুলে বার্তাটি পড়ি।’
কাজেই সুইডেনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যে আবেগের যোগাযোগ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সেই আবেগকেই মর্যাদা দিয়ে সোমবার ২৫ বৈশাখের দিন এখানে পালিত হল কবির জন্মজয়ন্তী। কবির সেই স্টকহোমে সুইডেনে বর্তমানে নিয়োজিত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত শ্রী তন্ময় লাল প্রদীপ জ্বালিয়ে কবির জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে তিনি কিছু কথা পরিবেশন করেন। টেগোর ড্যান্স অ্যান্ড মিউজিক গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক সঙ্গীতা পালও বক্তব্য রাখেন।
রবীন্দ্র অনুরাগীরা সকলে একসঙ্গে এই গ্রুপের হাত ধরেই রবীন্দ্রচর্চা করেন। ভারত, বাংলাদেশ এবং সুইডেনের বহু রবীন্দ্র অনুরাগীই এই গ্রুপের সদস্য। এ দিন নাচ, গান, কবিতা, আবৃত্তি— সব মিলিয়ে এক মনোরম রবীন্দ্রসন্ধ্যার আয়োজন হয়েছিল। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তাদের মায়েদের সঙ্গে বেশ কিছু কবিতা ও নাচ পরিবেশন করে। নটরাজের প্রলয় নাচনের উপর একটি ছোট্ট নিবেদন পরিবেশিত হয়। বিষয়— পৃথিবীতে পুনরায় শান্তি ফিরুক। রবীন্দ্রনাথের লেখা দু’টি শান্তিসঙ্গীত পরিবেশিত হয়। ‘মধুর তোমার শেষ যে না পাই’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন সুইডিস এক সদস্য। এখানেই সমাপ্তি। রবীন্দ্রসন্ধ্যার সঙ্গে একটি ছোট্ট মেলারও আয়োজন করা হয়। সেখানে বেশ কিছু ফুড স্টলের সঙ্গে ভারতীয় গয়না এবং শাড়ির স্টলও ছিল।
রবীন্দ্রনাথ এ দেশে আসতে পেরে খুশি হয়েছিলেন। তাঁর স্মৃতি বিজড়িত সেই স্টকহোমে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালন করতে পেরে আয়োজকরা তো বটেই অংশগ্রহণকারী এবং দর্শকেরাও অত্যন্ত খুশি।
ছবি—তুহিন শুভ্র মল্লিক
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক)