সব কিছু ‘খারিজ’ করে চলে গেলেন রমাপদ চৌধুরী

রমাপদ চৌধুরীরমাপদ চৌধুরী

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ঔপন্যাসিক ও গল্পকার রমাপদ চৌধুরী প্রয়াত হলেন। রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গিয়েছেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। ওই হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, বার্ধক্যজনীত কারণেই মৃত্যু হয়েছে রমাপদবাবুর।

রমাপদবাবুর জন্ম ১৯২২-এর ২৮ ডিসেম্বর। কৈশোর কেটেছে রেলশহর খড়্গপুরে। তাঁর বাবা রেলে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে ছোটবেলাতেই দেশের নানা জায়গা তাঁর ঘোরা হয়ে গিয়েছিল। খড়্গপুরে স্কুলের পাঠ চুকিয়ে চলে এসেছিলেন কলকাতা শহরে। ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে। থাকতেন হিন্দু হস্টেলে। নিজেকে আড়াল করে রাখতে ভালবাসতেন। ওতেই যেন তাঁর আনন্দ। কর্মসূত্রে যুক্ত ছিলেন আনন্দবাজার গোষ্ঠীতে। আনন্দবাজার পত্রিকায় একাধিক বিভাগের দায়িত্ব সামলেছেন। লেখালেখি আর সম্পাদনা— এই নিয়েই কাটিয়েছেন জীবন।

তবে একটা সময়ের পর থেকে তিনি লেখালেখি বন্ধ করে দেন। শেষ লেখা ‘হারানো খাতা’। আত্মজীবনীমূলক সেই লেখায় ছোটবেলা থেকে বড়বেলা— সব কথাই শুনিয়েছেন রমাপদবাবু। প্রায় দেড়শো ছোটগল্প আর পঞ্চাশের উপরে উপন্যাস লিখে লেখালেখির জগৎ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। তবে, বই পড়া কখনও থামাননি। সারা জীবন মধ্যবিত্ত জীবনের গল্পই লিখেছেন। নিজেও ভীষণ সাদামাটা জীবন কাটাতেন।

পশ্চিমের খোলস ছেড়ে রাজ্যের নাম এখন শুধুই বাংলা

জীবনের প্রথম গল্প লেখা ১৮ বছর বয়সে। সে ছোটগল্পের নাম ‘ট্রাজেডি’। এর চার বছর পর যুগান্তরে তাঁর লেখা গল্প প্রকাশিত হয় ‘উদয়াস্ত’। তার কিছু দিনের মধ্যেই আনন্দবাজারে প্রকাশ পেল ‘বারো ঘোড়ার আস্তাবল’। একের পর এক ছোটগল্প, সঙ্গে উপ‌ন্যাস। তাঁৱ উপন্যাস নিয়ে বাংলা এবং হিন্দিতে একাধিক বাণিজ্যসফল সিনেমাও তৈরি হয়েছে। ‘খারিজ’, ‘বনপলাশির পদাবলী’ তার অন্যতম উদাহরণ। তাঁর লেখা নিয়ে টিভি সিরিয়ালও হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর শোকবার্তা

বিশিষ্ট সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরীর প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ ৯৬ বছর বয়সে কলকাতায় প্রয়াত হন। বনপলাশীর পদাবলি, যে যেখানে দাঁড়িয়ে ইত্যাদি কালজয়ী উপন্যাসের স্রষ্টা রমাপদ চৌধুরী সাহিত্য অকাদেমি, রবীন্দ্র পুরস্কারসহ নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর কাহিনি অবলম্বনে বহু চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। আমি প্রয়াত শ্রীচৌধুরীর আত্মীয় পরিজনসহ তাঁর অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

১৯৬৩তে রমাপদ চৌধুরী পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। রবীন্দ্র পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৭১-এ। সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পয়েছেন ১৯৮৮তে। এ ছাড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিনী স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন তিনি।

রমাপদ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন শিল্প-সাহিত্য জগতের অনেক বিশিষ্ট জন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও শোক জ্ঞাপন করেছেন।