জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: বাজেট অধিবেশনে রাজ্যপাল এলেন। কিন্তু কোথাও নিয়মের বাইরে গেলেন না। পাঠ করলেন রাজ্য সরকারেরই লিখে দেওয়া ভাষণ। শুক্রবার অধিবেশনের সূচনা শেষে ফিরে যাওয়ার আগে গেলেন স্পিকারের ঘরে। করলেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক। তাঁকে গাড়িতে তুলেও দিতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী ও স্পিকারকে। অর্থাৎ সবটাই স্বাভাবিক। এবং নিয়ম মেনেই।
অথচ গতকালও রাজ্যপাল শান্তিনিকেতনে অন্য ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘‘সরকার রাজ্যপালের ভাষণের মাধ্যমে নিজের নীতি বলতে পারে। কিন্তু আমিও আমার প্রস্তাব দিতে পারি। আমি সরকারের ভাষণ পাঠ করব, কিন্তু নিজের প্রস্তাবও দেব। আমার ভাষণে সরকারের বক্তব্যের উপরে টিপ্পনী থাকবে। প্রয়োজনীয় অংশে নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও মতামতও জানাব।’’ ফলে শাসক দলের অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের মতো জগদীপ ধনকড়ও বুঝি বিধানসভায় দাঁড়িয়েই সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করবেন। কিন্তু সাংবিধানিক লক্ষ্ণণ রেখা অতিক্রম করলেন না রাজ্যপাল। সে কথাও তিনি গতকাল রাতেই টুইট করে জানিয়েছিলেন।
এ দিন বাজেট অধিবেশনে রাজ্যপাল বিধানসভায় পাঠ করলেন লিখিত ভাষণ। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন রাজ্যপাল। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, ঐক্যশ্রী-সহ সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের প্রশংসা করেন তিনি। জানান, বিগত কয়েক বছরে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা শান্তিপূর্ণ ছিল। রাজনৈতিক কারণে কিছু গোষ্ঠী নৈরাজ্য তৈরির চেষ্টা চালালেও, শান্তিপূর্ণ ভাবে তার মোকাবিলা করেছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সাহায্য ছাড়াই সরকার বুলবুলের মোকাবিলা করেছে।
একই সঙি্গে রাজ্যপালের ভাষণে শোনা যায়, রাজ্যে সব উৎসব একই রকম ভাবে পালিত হয়েছে। যে সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর নিয়ে বার বার বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে, এ দিন তা নিয়েও রাজ্যের সুরে কার্যত গলা মেলাতে দেখা যায় রাজ্যপালকে। নিজের ভাষণে তিনি বলেন, ‘‘ভিন্ন মতকে প্রত্যাখ্যান করাই নতুন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর-এর নামে বিভেদ সৃষ্টি করছে কেন্দ্রীয় সরকার।’’ সিএএ আইন প্রত্যাহার করতে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানানোর কথাও বলা হয় তাতে। সিএএ বিরোধী আন্দোলনে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের জন্য দুঃখ প্রকাশও করেন রাজ্যপাল।
বিধানসভায় নিয়ম মাফিক সব কিছু শেষ করলেও, ভাষণ শেষে বেরনোর সময় প্রথা ভেঙে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে যান রাজ্যপাল। কিছু ক্ষণ পর অধ্যক্ষের ঘরে গিয়ে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেখানে তিন জনের মধ্যে আধঘণ্টা বৈঠকও হয়। মুখ্যমন্ত্রী এবং অধ্যক্ষের সঙ্গে রাজ্যপাল চা পান করেন বলে জানা গিয়েছে। সেই বৈঠক শেষে বেরোতেই রাজ্যপালকে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)