ঘোড়ার জুড়ি গাড়ি, পর্যটক না থাকায় কলকাতার ঐতিহ্য অবলুপ্তির পথে

ঘোড়ার জুড়ি গাড়িস্কেচ—অর্ণবী ঘোষ

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ঘোড়ার জুড়ি গাড়ি এই শহরের ইতিহাসের কথা বলে। বিকেল হলেই ভিক্টোরিয়ার পাশ থেকে সবুজ ময়দান দিয়ে ঘুরে বেড়াত ঘোড়ার গাড়ি। সুসজ্জিত সেইসব ঘোড়ার গাড়ি ছিল পর্যটকদের কাছে বড় আকর্ষণের। বিশেষ করে বিদেশিরা কলকাতায় এলে একবার এই ঘোড়ার গাড়ি সফর করেনই। শহরের রাস্তা জুড়ে সেই অদ্ভুত এক ঘণ্টার শব্দ তুলে ঘোড়ার ছুটে চলা। পিছনে সুসজ্জিত সিংহাসন। ওই গাড়িতে চড়ার সময় নিজেদের অনুভূতিতেই ফিরে আসে রাজা-রানির গল্প। বা সেই বইয়ে পড়া, সিনেমায় দেখা ব্রিটিশ আমলের কলকাতায় ঘোড়ার গাড়ি। যা ছিল সেই সময়ের মূল যান। তবে সে সব অতীত হয়েছে। অবলুপ্তির পথে কলকাতার ঘোড়ার গাড়ি। তাও কলকাতার কিছু জায়গায় বেঁচে ছিল সেই ঐতিহ্য। লকডাউন যার উপর ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলেছে।

মানুষ গৃহবন্দি। কাজ নেই। মানুষ খেতে পাচ্ছে না। তাহলে কি ভেবেছেন পশু, পাখিদের কী হচ্ছে। বিশেষ করে এই পালিত পশুদের। ওদের উপর নির্ভর করেই তো চলত মালিকের সংসার। আজ যে সব অচল। সেই মারণ থাবার হাত থেকে রক্ষা পায়নি এই ঘোড়ার দল। কাজ তো ওদেরও নেই। তাই নেই খাবার। সংবাদপ্রতিদিন ডট কমের তথ্য অনুযায়ী, নিয়মিত খাবার না পেয়ে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে ঘোড়াগুলি। তার মধ্যে মারা গিয়েছে ৫টি ঘোড়া। হয়তো তার পিঠে সাজানো সিংহাসনে চড়ে কলকাতা শহরের সৌন্দর্য দেখেছেন আপনিও। ভিক্টোরিয়া গেটের সামনে আজও সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ঘোড়ার গাড়ি। কিন্তু চড়ার জন্য কেউ নেই।

বন্ধ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। ১৬ এপ্রিল থেকেই বন্ধ কলকাতা শহরের এই স্মৃতিসৌধ। ১৬ মে থেকে কলকাতায় শুরু হয় লকডাউন। তার পর থেকে সবটা বন্ধ। কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময়ও দীর্ঘদিন এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। সেই সময় তাও বন দফতর ঘোড়ার খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। কলকাতা মাউন্টেড পুলিশও পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার নেই কোনও সাহায্য। কোথা থেকে আসবে খাবার? একের পর এক ঘোড়া না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে। মালিকদের ঘরেও তাই স্বজন হারানোর শোক।

জুলাইয়ে খুলেছে ভিক্টোরিয়া। কিন্তু মানুষ কোথায়? সকাল ৬-৯ পর্যন্ত কে বেড়াতে যাবে সেখানে। ওটা শুধু খোলা প্রাতভ্রমণকারীদের জন‌্য। তাঁরা হাঁটতে আসেন। তাঁরা তো আর ঘোড়ার জুড়ি গাড়ি চড়বেন না। তাই ভিক্টোরিয়া সাময়িক খুললেও লাভ হয়নি ঘোড়ার গাড়ি ব্যবসার। কখনও কখনও বিয়ে বাড়িতেও ভাড়া খেটে টাকা রোজগার হত। এখন বিয়েও হচ্ছে খুব অল্প পরিসরে তাই সেখানেও নেই চাহিদা। সব দিক থেকে কোনঠাসা কলকাতার এই ঐতিহ্য। কবে ফিরবে স্বাভাবিক পরিস্থিতি? সেই অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হচ্ছে ক্রমশ। হারিয়ে যাবে না তো আরও একটা ঐতিহ্য?

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)