‘যীশুদার প্রতি আমার একটা ক্রাশ আছে’

দেবচন্দ্রিমা সিংহ রায়

নবনীতা দাশগুপ্ত


দেবচন্দ্রিমা সিংহ রায় । ছোট পর্দায় আজ পরিচিত মুখ। প্রচুর কাজ করেছেন তেমনটা নয়। তবে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে কাজ করা হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। দু’টিতেই একেবারে আলাদা রকমের চরিত্র। ‘কাজললতা’ ধারাবাহিকের লতার সঙ্গে ‘টেক্কা রাজা বাদশা’ ধারাবাহিকের আরাধ্যার কোনও মিলই নেই।

লতা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের গান জানা, শান্ত স্বভাবের, সংসারী মেয়ে। তার জীবনে কোনও উচ্চাকাঙ্খা ছিল না। বড় হয়ে ওঠা বাবা আর ঠাকুমার ঘেরাটোপে। বিশেষ করে ঠাকুমার কথাতেই চলত  লতার জীবন। কোনও বন্ধু ছিল না তার। জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল একজন ভাল স্বামী আর একটা ভাল সংসার। আর আরাধ্যা সম্পূর্ণ এক বিপরীত মনের, বিপরীত ভাবনার মেয়ে। বন্ধু-বান্ধব, নাইট পার্টি, ডিস্ক, ফ্যাশন এই সব নিয়েই উদ্দাম জীবন তার। বিয়ের চিন্তা-ভাবনা মোটেও নেই।

বড়লোক বাড়ির বখে যাওয়া মেয়ে আরাধ্যা। কিন্তু মা তার বড় ভাল। মায়ের আদর্শে মানুষ হয়নি সে। তা সে যাই হোক, এ তো গেল লতা আর আরাধ্যার কথা। কিন্তু যীশু সেনগুপ্তর ভক্ত দেবচন্দ্রিমা ঠিক কেমন? তার আগে বলে নেওয়া ভাল, দেবচন্দ্রিমা শুধু  যীশুর ভক্ত নন। তা হলে কী। সেই হাঁড়ি নিজেই হাটে ভাঙলেন অভিনেত্রী। বললেন, ‘‘যীশুদার প্রতি আমার একটা ক্রাশ আছে। ভীষণ ভাললাগে আমার। আমার বিপরিতে কখনও পেলে তো আমি লাফিয়ে উঠব।’’

কে এই ইরাবতী, জানতে পড়তে হবে

এ বার আসা যাক সেই প্রশ্নে। ব্যক্তি জীবনে দেবচন্দ্রিমা লতার মতো নাকি আরাধ্যার মতো?

অন্য লুকে দেবচন্দ্রিমা

দেবচন্দ্রিমা নিজেই শোনালেন সে কথা। বলেন, ” আমি আসলে আমার মতো। না আমি লতার মতো লাজুক, মুখচোরা, ভীতু না আমি আরাধ্যার মতো উদ্ধত। কোনওটাই নই আমি। আমি সোজাসাপ্টা একটা মানুষ। বড়দের সম্মান দিতে জানি। নিজের মতামত নিজের মতো করে জানাতে পারি। আমার মনে হয় আজকালকার যে কোনও মেয়ের মধ্যে এটা থাকা ভীষণভাবে জরুরি। না হলে টিকে থাকা যাবে না।”

বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী দেবচন্দ্রিমার বাড়ি সিঙুড়ে। অভিনয় করার ইচ্ছে ছিল মনে মনে। কিন্তু শিঁকেটা ছিঁড়ছিল না। হঠাৎই নিজের উদ্যোগে অডিশনে যাওয়া। বাবা মা সেদিন বলেছিলেন, “লেখাপড়াটা জলাঞ্জলি দিতে চললি?” মেয়ে বলেছিল, “একবার চেষ্টা করে দেখিই না কী হয়।” কিন্তু মেয়েকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখে সব ভুলেছেন তাঁরা। বলেন, ‘‘খুব খুশি ওরা। মা-বাবার সাপোর্ট না থাকলে পারতাম না। আমি খুব আনন্দ পাই যখন মা বাবা বলেন, আজ তোর ওই সিন টা দারুণ লাগল।’’সেই চেষ্টার জোরেই এক বারে জিশু সেনগুপ্ত প্রযোজিত ‘ঝুমুর’ ধারাবাহিকে সুযোগ পাওয়া। কিন্তু সেই ধারাবাহিকটি করা হয়নি তাঁর। চ্যানেল তাঁকে ‘কাজললতা’ ধারাবাহিকের লতা হিসেবে বেছে নেয়।

আত্মহত্যা টালিগঞ্জ অভিনেত্রী পায়েল চক্রবর্তীর

প্রেমিক সায়ন্তন মোদকের সঙ্গে।

সেই শুরু। এরপর স্নেহাশিস চক্রবর্তীর ‘টেক্কা রাজা বাদশা’ ধারাবাহিকে তিনি আরাধ্যা। কোনও অডিশন দিতে হয়নি তাঁকে। স্নেহাশিস চক্রবর্তী কোনওদিনই কারও অডিশন নেন না। তাই এক লহমায় আরাধ্যার চরিত্রটা তাঁকেই দেন তিনি। দেমাকি, রূঢ় প্রকৃতির আরাধ্যা হিসেবে ভাল মানিয়েছে দেবচন্দ্রিমাকে। সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেন তিনি। এর মধ্যেই অভিনয়টাই চালিয়ে যেতে চান তিনি। পাশে রয়েছে পড়াশুনো। দুটো সমান তালে চালাচ্ছেন কী ভাবে? উত্তরে দেবচন্দ্রিমা বলেন, “ঠিক হয়ে যাচ্ছে।  এখন শুটিংয়ের চাপ অনেকটা কম। সবকিছু বেশ নিয়মমাফিক হয়। তাই সময় পাই।’’

শুরুতে সবাই বেশ ভ্রু কুচকে তাকাতেন। সেখানেও একটা লড়াই ছিল। বলছিলেন দেবচন্দ্রিমা, ‘‘আগে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়রা ভাবতেন আমি সকালে বেরিয়ে যাই আর রাতে ফিরি। কোথায় যাই, কী করি। কিন্তু আমাকে টিভিতে দেখার পর সবাই বুঝতে পেড়েছে।’’ আর প্রেম? ‘‘করছি তো। কাজললতার নায়কের সঙ্গেই প্রেম করছি। সায়ন্তন মোদক। কাজললতা করতে করতেই প্রেমের শুরু। শুটিংয়ের সময় ওর পিছনে লাগতাম। আর এখন প্রেম।’’