মিমি, বলিউডের চেনা ছন্দের বাইরে বেরিয়ে এক অনবদ্য প্রচেষ্টা

মিমি

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: মিমি সিনেমাটি নিয়ে আগাম কোনও উত্তাপ ছিল না। না ছিল কোনও হাইপ। নেই কোনও বড় বলিউডি তারকার আকর্ষণ। তাও একঘেয়ে বলিউডি রোমান্স ড্রামা বা অ্যাকশন বা থ্রিলারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সহজেই মন জিতে নিতে পারে মিমি। বলিউড অতীতে এমন অনেক সিনেমা তৈরি করেছে, যার মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছে সামাজিক নানা দিক। ছড়িয়ে পড়েছে জীবন যুদ্ধের বার্তা। সেখানে মিমি আরও একটি প্রয়াস। আর সেই প্রয়াসকে কুর্নিশ। কারণ এই কোভিড অতিমারির মধ্যে বন্ধ সব সিনেমা হল। তাই হলে রিলিজ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা ছিল না। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স ও জিও সিনেমাই মিমিকে পৌঁছে দিয়েছে মানুষের কাছে। যা এক টানে পুরোটা দেখে ফেলা যায় সহজেই।

মিমি-র ভূমিকায় কীর্তি শ্যাননকে ১০০ শতাংশ নম্বর না দিয়ে উপায় নেই। বলিউডি গ্ল্যামারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই চরিত্রকে এভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য সাহস লাগে। যা কীর্তি শ্যানন করে দেখিয়েছেন পুরো সিনেমাটায়। আসলে তাঁকে ঘিরেই গল্প হেঁটেছে নিজের পথে। যেন বিদেশের কোনও হাইওয়ে দিয়ে ১৩৩ মিনিট ছুটে চলেছে একটা গাড়ি। যা থামল একদম গন্তব্যে গিয়েই। শেষবেলায় দর্শকরা আবেগান্বিত হবেই। মনে হবে একটা জার্নি তাঁরাও বাঁচলেন। তবে স্যারোগেসিকে যে ভাবে দেখানো হয়েছে সেটা ভুল, এমন অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

২০২১-তে এমন একটা সিনেমা উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ পরিচালক লক্ষ্মণ উতেকার ও প্রযোজক দীনেশ ভিজানকে। কমেডি-ড্রামা ছবির তালিকায় মিমি-কে রাখা হলেও এই সিনেমা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় এক উচ্চাকাঙ্খী মেয়ের মা হয়ে ওঠার আবেগকে। কীর্তি শ্যানন ছাড়াও এই সিনেমার মুখ্য ভূমিকায় (ট্যাক্সি ড্রাইভার) রয়েছেন পঙ্কজ ত্রিপাঠী। যার অভিনয় ক্ষমতা নিয়ে ভারতীয় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিও প্রশ্ন তোলে না। কীর্তির সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে মিমি-কে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন তিনিও।

গল্পটা অনেকটা এরকম। এক নিঃসন্তান বিদেশি দম্পতি রাজস্থানে পৌঁছন স্যারোগেট মায়ের খোঁজে। তখনই এক অনুষ্ঠানে মিমি-কে মানে কীর্তি শ্যাননকে নাচতে দেখে তাঁদের পছন্দ হয় স্যারোগেট মা হিসেবে। কীর্তির স্বপ্ন মুম্বই গিয়ে হিরোইন হওয়ার। আর তার জন্য প্রয়োজন অনেক টাকা। সেই টাকা পাওয়া যাচ্ছে। তাই স্যারোগেট মা হওয়ার অফার নিয়ে নেয় সে। এর পর শুরু হয় অন্য লড়াই। পরীক্ষার পর ডাক্তার জানতে পারে, মিমির ভিতরে যে বাচ্চা বড় হচ্ছে সে মানসিক ভারসাম্যহীন। সেই খবর যখন সেই বিদেশি দম্পতি জানতে পারে তাঁরা সেই বাচ্চাকে গ্রহন করতে অস্বীকার করে এবং আমেরিকা ফিরে যায়।

অবিবাহিত এক মা-কে তখন সমাজের সামনে আসতেই হয়। সন্তানের জন্ম হয় এবং সম্পূর্ণ সুস্থ সন্তান হয়, যার নাম রাজ। তবে তাঁকে পুরো বিদেশিদের মতই দেখতে। মা-সন্তানের পাশাপাশি এই বাচ্চাকে ঘিরে তিনটে পরিবার নতুন করে বাঁচার রসদ পায়। আর তখনই ফিরে আসে সেই বিদেশি দম্পতি এবং তাঁদের সন্তানের দাবি করে। শুরু হয় আরও এক লড়াই। শেষ পর্যন্ত কী হয় তার জন্য দেখতে হবে সিনেমা। তবে বলিউডের ভাল সিনেমার তালিকায় জায়গা পাবে মিমি। এর সঙ্গে বাড়তি পাওয়া এআর রহমানের মিউজিক।

সমরুদ্ধি পোরের মরাঠী সিনেমা ‘মালা আই ভাহাইছে’-র রিমেক এএই মিমি। যাঁকে নতুন করে রূপ দিয়েছেন লক্ষ্মণ উতেকার। আর পর্দায় সব চরিত্রগুলোকে জ্যান্ত করে তুলেছেন কীর্তি শ্যানন, পঙ্কজ ত্রিপাঠী, কীর্তির বন্ধুর ভূমিকায় সাই তামহানকার, বাবা-মা মনোজ পাহওয়া এবং সুপ্রিয়া পাঠক। বিদেশি স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকায় এভলিন এডওয়ার্ডস ও এইদান হোয়াইটক-ও নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন। যাঁকে নিয়ে এই টানা পড়েন সেই রাজের ভূমিকায় ছিল জ্যাকব স্মিথ। সকলেই যাঁর যাঁর জায়গায় সেরাটা তুলে এনেছেন। এখনও পর্যন্ত কীর্তির বলিউড কেরিয়ারের সেরা কাজ বলাই যেতে পারে মিমি-কে।

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)