শেরশাহ, দেশপ্রেমকে বাস্তবের মাটিতে রেখেই রুপোলি পর্দায় বিক্রম বাত্রা

শেরশাহ

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: শেরশাহ নিয়ে খুব উত্তেজনা তৈরি হওয়ার আগেই মুক্তি পেয়ে গিয়েছিল সিনেমাটি। ওটিটি প্ল্যাটফর্মেই রিলিজ করেছে সিদ্ধার্থ মালহোত্রা ও কিয়ারা আদবানি অভিনীত শেরশাহ যা দেশাত্মবোধের সব অনুভূতিকে ছুয়ে গিয়েছে। মনের কোণায় ক্রমশ হারিয়ে যাওয়া বিক্রম বাত্রার লড়াইয়ের ছবিটাকে আরও একবার তাজা করে দিয়েছে তো বটেই সঙ্গে থেকে গিয়েছে রেশ। দেখতে দেখতে অনেকদিন কেটে গিয়েছে। যুদ্ধের ময়দানে বিক্রম বাত্রার লড়াই নিয়ে দীর্ঘ সময় উত্তাল হয়েছে মানুষের মন। তার পর আরও মায়ের কোল খালি হয়েছে, স্ত্রীদের সিঁথির সিঁদুর হারিয়ে গিয়েছে। রিয়েল লাইফ চরিত্র নিয়ে সিনেমা করা খুব সহজ নয় আজকের সময়ে। কারণ, সংবাদ মাধ্যমের দৌলতে সবার জীবন সাধারণ মানুষের জানা। সিনেমা দিয়ে তাঁর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করাটা বেশ কঠিন কাজ। আর তাতে সফল পরিচালক বিষ্ণু বর্ধন।

বলিউডে বিষ্ণু বর্ধনের অভিষেকটা এক কথায় ভালই হল। ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার প্রথম পোস্টিং হল কার্গিলেই। সিদ্ধার্থ মালহোত্রা বাত্রার চরিত্রের সঙ্গে এক কথায় ন্যায় করেছেন দারুণভাবে। ন‌িজের সেরাটা দিয়েই বিক্রম বাত্রাকে পর্দায় তুলে এনেছেন তিনি। তাঁর প্রেমিকা ডিম্পল চিমার ভূমিকায় কিয়ারা আদবানিও নিজের সেরাটাই দিয়েছেন। বিক্রম বাত্রা যতটা দেশের ছিলেন ততটাই ছিলেন পরিবারের এবং প্রেমিকার। যা সিনেমাতেও ফুটে উঠেছে। দেশ-যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সিনেমাগুলোতে খুব একটা ব্যক্তি জীবনকে তুলে ধরা হয় না। কিন্তু বিষ্ণু সেটাকেও গুরুত্ব দিয়েছে‌ন। সন্দীপ শ্রীবাস্তবের গল্পে জীবনের বাস্তবটাই উঠে এসেছে।

বাস্তবের চরিত্রকে চোখের সামনে দেখার পর মনের মধ্যে দাগ কাটতে শুরু করে দেশাত্মবোধ। এই মানুষগুলো বর্ডারে আছে বলেই না আমরা নিজেদের ঘরে সুরক্ষিত। ওঁরা শুধু জীবনের বলিদান দেন না ওদের সঙ্গে সঙ্গে ওদের কাছের মানুষগুলোও বাকি জীবনটা বলিদান দিয়ে দেন বেঁচে থেকেও। সে যন্ত্রণা ফুটে উঠেছে এই ছবিতে। যখন আতঙ্কে কাটাতে কাটাতে একদিন সব শেষ হয় যায়। ছাই হয়ে যায় কাছের মানুষটা আর তাঁকে শেষ দেখাটাও দেখতে পাওয়া যায় না। সিনেমার শেষ দৃশ্যটা মর্মান্তিক। যখন গাড়ি থেকে নেমে ছুটতে ছুটতে পৌঁছন ডিম্পল। ততক্ষণে জ্বলতে শুরু করেছে চিতার আগুন। দেখতে দেখতে চোখের কোণাটা নিশ্চই ভিজে উঠেছিল সবার। জানা যায় বাস্তব জীবনের ডিম্পল আজও বিয়ে করেননি। নিজেকে ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার বিধবা হিসেবেই পরিচয় দেন আজও।

ছবির কাহিনি অনেকটা এরকম, কলেজ জীবনে প্রেম। প্রেমিকার বাড়িতে তা নিয়ে অশান্তি। কিন্তু প্রেমিক ঠিক করতে পারেন না কী করবেন। আর্মিতে যাওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে চাকরীতে যোগ দেন বিক্রম বাত্রা। কিন্তু কিছুদিন পরই তা ছেড়ে দেন। শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী। ২৩ বছর বয়সে ডেল্টা কম্পানীর ১৩তম ব্যাটেলিয়নে যোগ দেন তিনি। পোস্টিং হয় জম্মু-কাশ্মীরের সোপোরে লেফটেনেন্ট হিসেবে। মুহূর্তেই স্থানীয় মানুষদের কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন তিনি। সঙ্গে সতীর্থদেরও। ফ্ল্যশব্যাকে তাঁর কলেজ ও প্রেম কাহিনি চলতে থাকে মাঝে মাঝে যা কোনওভাবেই অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়নি।

এর মধ্যেই এক আতঙ্কবাদী লিডার হায়দারকে ধরতে শুরু হয় অপারেশন। তাকে মেরে সাফল্য পায় বাত্রার টিম। ১৯৯৯-এ  যখন কাশ্মীর দখল করার পরিকল্পনা করে পাকিস্তান। যার জন্য কার্গিলে সেনা পাঠায় তারা। যা জেনিভা কনভেনশন ও শিমলা চুক্তি ভঙ্গ করে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই বাত্রা ছুটি বাতিল করে ফিরে যান কাশ্মীরে। যুদ্ধে যাওয়ার আগে তিনি তাঁর বন্ধু সানিকে কথা দিয়ে যান, ‘‘হয় আমি ভারতের পতাকা উড়িয়ে আসব অথবা ভারতের পতাকায় জড়িয়ে আসব। কিন্তু আসব তো বটেই।’’ শুরু হয় কার্গিলকে মুক্ত করার লড়াই। ১৭ হাজার ফিট উচ্চতায় ৫১৪০ পয়েন্ট দখল করে ভারতীয় সেনা কোনও জীবনহানি ছাড়াই। এখানে বলে রাখা ভাল, সিনেমার নাম কেন শেরশাহ? যে মিশনে গিয়ে বিক্রম বাত্রা শহীদ হলেন তার কোড নেম ছিল শেরশাহ।

পরদিন ছিল ৪৮৭৫ পয়েন্ট দখলের লড়াই। সেদিন অনেকে বোমা, গুলির আঘাতে আক্রান্ত হন। তবে শেষ পর্যন্ত লড়াই দেন বাত্রা সঙ্গে কয়েকজনকে নিয়ে। শেষবেলায় প্রতিপক্ষের একে-৪৭-এর গুলি এসে লাগে তাঁর বুকে। লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। যুদ্ধ ছাড়েনি তাঁর দল। লুটিয়ে পড়া অবস্থাতেই তিনি দেখেন শেষ লক্ষ্যে উড়ছে ভারতের পতাকা। কার্গিল আবার ভারতের দখলে চলে আসে। সেই কার্গিলে আর হানা দিতে পারেনি পাকিস্তান এখনও। জানা যায় বাত্রা পরিবারের তরফেই এই চরিত্রের জন্য সিদ্ধার্থ মালহোত্রাকে চাওয়া হয়েছিল। ২০১৯ থেকে মিলিটারি ট্রেনিং নিতে শুরু করেন সিদ্ধার্থ। যা পুরো সিনেমায় চোখে পড়েছে। শুটিং হয়েছে চণ্ডিগড়, পালামপুর, কার্গিল, লাদাখ ও কাশ্মীরে। দেশের আবেগকে বাস্তবের মাটিতে রেখেই তৈরি হয়েছে শেরশাহ, যার রেশ মনের মধ্যে থেকে যাবে বেশ কিছুদিন।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)