করোনা জয় করে নিজের অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিলেন সোমা মুখোপাধ্যায়

করোনা জয়করোনা জয়

করোনা জয় সহজ ছিল না, কিন্তু তাও লড়াই করেছেন এই মানুষটি। যিনি কারও সন্তান, কারও স্ত্রী আবার কারও মা। শুরুতে তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল তাঁর আসপাশের মানুষরা, যেন তিনি বিরাট অন্যায় করে ফেলেছেন। তার সঙ্গেও লড়াই করতে হয়েছে তাঁকে তাঁর পরিবারকে। সুস্থ হয়ে ফিরে সেই লড়াইয়ের কথাই জানাচ্ছেন করোনা জয় করে ফেরা সোমা মুখোপাধ্যায়


বাকি আর ১০ জন মানুষের মতো লকডাউনে নিজেকে গৃহবন্দিই করে রেখেছিলাম। আমার ঘরে আমার একটা ছোট বাচ্চা রয়েছে, বয়স্ক শাশুরি রয়েছে, স্বামীরও শরীর ভালো নয়, তাই আমি কোনও ঝুঁকি নেওয়ার কথাই ভাবিনি। রাস্তারও মুখ দেখিনি সেই সময়। তার মধ্যেই আমার শরীরের কী ভাবে বাসা বাঁধল এই করোনাভাইরাস আমার জানা নেই। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম সবাই। কিন্তু আজ সুস্থ হয়ে ফিরে এটা জোর দিয়ে বলতে পারি ভরসা রাখুন, পাশে থাকুন, তাহলে জয় করা যেতেই পারে এই রোগকে।

হঠাৎই দেখলাম জ্বর হচ্ছে। তবে তাপমাত্রা খুব বেশি নয়। ৯৯-১০০-এর আসপাশে রয়েছে। ভেবেছিলাম ভাইরাস ফিভার। সেই মতো প্রথমে প্যারাসিটামল এবং পড়ে অ্যাজিট্রোমাইসিন খাই। কিন্তু তাতে জ্বর কমে না। সঙ্গে হালকা খুশখুশে কাশি, গাঁ হাত-পা ব্যথার মতো উপস্বর্গ হতে শুরু করে। ৭ মে আমার প্রথম জ্বর আসে। রক্তের চাপ একদম কমে যায় যেটা আমার বেশি থাকে। এর মধ্যেই একদিন মাথা ঘুরে বাথরুমে পড়ে যাই।

লকডাউনের জন্য কাছাকাছি কোনও ডাক্তার ছিল না। অনলাইনে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি বেশ কিছু টেস্ট দেন। তবে তাতে করোনার টেস্ট ছিল না। বাকি পরীক্ষায় কোনও কিছু খারাপ আসেনি। তখন আমার পরিবারেরই একজন ডাক্তার বললেন করোনা টেস্ট করিয়ে নিতে। আমি সেটাও করাই। এরপরই তার ফল পজিটিভ আসে।

প্রশাসন থেকে এসে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সরকারি হাসপাতালে কিছুদিন থাকার পর অনেক কষ্ট করে আমাকে প্রাইভেট হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসা শুরু হয়ে গিয়েছিল আগেই। চিকিৎসা চলতে থাকে। সেখানে অনেক আক্রান্তের সঙ্গেও আলাপ হয়। এরকম অনেকেই ছিলেন যাঁদের ঘরে বসেই এই রোগ হয়েছে। তাই কখন, কার, কী থেকে হবে কেউ বলতে পারে না।

আমি মনে প্রশ্নটা ছিলই। আমি ডাক্তারকে জিজ্ঞেসও করি, না বেরিয়েও আমার কী করে হল। তখন ডাক্তারবাবু আমাকে বলেন, কোনও অবজেক্ট থেকে হয়েছে। যে অবজেক্ট হয়তো আমিও ধরেছি তার আগে হয়তো কোনও আক্রান্ত ধরেছিলেন। যেমন বিস্কুটের প্যাকেট, দুধ বা দইয়ের প্যাকেট। এগুলো তো বাড়িতে নিয়মিত আসত। আর একখন সব থেকে বড় সমস্যা এই রোগের উপসর্গ অনেকের শরীরে দেখা যাচ্ছে না।

হাসপাতালে আমাকে প্রতিদিন ওষুধের সঙ্গে ভালো খাবারও দিচ্ছিল। প্রতিদিন পেটে একটা ইনজেকশন দিত যাতে শরীরে কোথাও রক্ত না জমে যায়। আসল বিষয়টা বুঝতে পারি, বাড়াতে হবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার অভ্যন্তরিন শক্তি। সঙ্গে দরকার সবার সহানুভূতি। একটু পাশে থাকা। আক্রান্তকে গিয়ে ছুঁয়ে সহানুভূতি দেখানো নয়, পাশে আছি এই বার্তাটাই যথেষ্ট হতে পারে আক্রান্তের জন্য।

এর মধ্যেই আরও একটা খারাপ অভিজ্ঞতার কথা বলতে চাই। আমার যখন করোনা ধরা পড়ে তখন আমাদের আসপাশের লোকেরা আমাদের সঙ্গে চূড়ান্ত খারাপ ব্যবহার করেন। খারাপ ভাষা ব্যবহার থেকে শুরু করে আমার রোগের জন্য আমাকেই দায়ী করা হয়। সবার কাছে অনুরোধ এমনটা করবেন না। কাল তো আপনারও কারও হতে পারে। পাশে থাকুন।

আজ আমি পুরোপুরি সুস্থ। পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে এসেছি। তবে নিজেকে আইসোলেশনেই রেখেছি পরিবারের লোকজনরে কথা ভেবে। আমার পরিবারেরও সবার পরীক্ষা হয়েছে, তাঁরা সবাই নেগেটিভ।

প্রার্থণা করব রোগ যেন কারও না হয়। আর যদি হয় তাহলে মনে রাখবেন খুব খারাপ অবস্থা না হলে এই রোগ সারিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠাটা খুব কঠিন কাজ নয়। শুধু একটু সময় দিতে হবে, ধৈর্য্য রাখতে হবে। এই মুহূর্তে সব থেকে বেশি নজর দিতে হবে লাইফস্টাইলের দিকে।

(এই বিষয়ে আরও তথ্য পেতে নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগে www.justduniya.com/স্বাস্থ্য)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)