চাউমিন খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে ‘কাকু’টা যৌনাঙ্গ পুরে দিয়েছিল অপুর মুখে

চাউমিন

চাউমিন খাওয়াবে বলেছিল। পাড়ার কাকুর কথাটা বিশ্বাসও করেছিল ছোট্ট অপু (নাম পরিবর্তিত)। কিন্তু সেই বিশ্বাস ভেঙে যায়। জোটে যন্ত্রণা। তার সাজা হয়তো পেয়েছিল পাড়ার কাকু। কিন্তু ছোট্ট অপুর মনের ক্ষত রয়ে গিয়েছে। যা সারা জীবনেও যাওয়ার নয়। চিরাচরিত ধারণা, মেয়েরাই শুধু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। ছেলেরা হয় না বুঝি! লিখলেন অমৃত হালদার


ছোট্ট ছেলেটার নাম অপু। বয়স ১৪। বাড়ি নারকেলডাঙায়। এমনিতেই নিম্নবিত্ত পরিবার। তার মধ্যে লকডাউনে বাবার অস্থায়ী কাজটাও গিয়েছে। ফলে সংসারে ঘোরতর আর্থিক টানাটানি। এটা সেটা করে কোনও রকমে টেনেটুনে চলে। আর গ্রাসাচ্ছাদন হয় রেশনের চাল-ডালে। কখনও সখনও একটু মাছ যে জোটে না তা নয়। তবে, সে সব মাসের মধ্যে ক’দিন হাতে গুনে বলা যায়। ভাল খাবার সত্যিই অপুদের কাছে বিলাসিতা। পাড়ার মোড়ের দোকানের ফাস্টফুডের দোকানের খাবারদাবার দেখে ওর জিভে যে জল আসে না, এটা বললে মিথ্যে বলা হবে। কিন্তু সে খাবার কিনে খাওয়ার ক্ষমতা নেই অপুদের।

তো সেই অপুকে প্রতিবেশী সুকুমার ঘোষ এগরোল আর চাউমিন খাওয়াবে বলেছিল। সুকুমার ওরফে বিশুর বয়স ৪১। পাড়ার বিশুকাকুর এই প্রস্তাবে খুশিতে ভরে গিয়েছিল কিশোর অপুর মুখখানা। কিন্তু সে খুশি বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয়নি। তা ভরে উঠেছিল আতঙ্ক ও বিষণ্ণতায়। তার আগে যদিও বিশু তাকে নিয়ে গিয়ে তুলেছিল তার দোতলার ঘরে। দরজার ছিটকিনি বন্ধ করে ছোট্ট অপুর উপর চালিয়েছিল যৌন নির্যাতন। বারংবার নিজের যৌনাঙ্গ পুরে দিয়েছিল অপুর মুখে ও গুহ্যদ্বারে। না, এক দিন নয়। এমনটা চলতে থাকে পর পর বেশ কয়েক দিন। অপুর চিৎকার ঢাকতে জোরসে চালিয়ে দেওয়া হত গান। এগরোল-চাউমিনের বিনিময়ে ‘কাকুর যৌনাঙ্গ’ খাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি ছোট্ট অপু।

শেষমেশ বাচ্চাটি আর সহ্য করতে পারেনি। কেঁদেকেটে মায়ের কাছে সবটা বলে ফেলে। তার পর গত ২ ডিসেম্বর পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন অপুর বাবা-মা। শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ (পকসো) আইনের ৬ এবং ১০ নম্বর ধারায় মামলা রুজু হয়। অভিযুক্ত বিশুকে সে দিনই গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে চার্জশিট গঠিত হয়। বিশুর বিরুদ্ধে আনা হয় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারাও। নাবালককে যৌন নির্যাতন করার দায়ে দোষীকে শিয়ালদহের পকসো আদালতের বিচারক গত ২৫ জানুয়ারি ২০ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানার সাজা শুনিয়েছেন।


সব খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন

আমাদের সমাজে একটা প্রচলিত ধারণা রয়েছে— যৌন নির্যাতন কেবল মহিলাদেরই হয়। পুরুষরাও যে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে পারে, তা কেউ ভাবতে পারে না। শিশুকন্যার মতো শিশুপুত্রও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। হ্যাঁ, হয়। আলবাৎ হয়। এবং প্রায়শই হয়। সে কারণেই উপরের ঘটনার কথাটা লিখলাম। যেটা এই শহরেই ঘটেছে। এবং গত মাসেই ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে বাবা-মা তাঁদের ছেলেকে নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। কিন্তু নাবালকদের উপরে যৌন নির্যাতন চলে। চলতেই থাকে। আর আপনি-আমি চোখ বুজে থাকি। ভাবি, ছেলেদের আবার যৌন নির্যাতন হয় নাকি! ভরা রাস্তায় একটা বাচ্চা ছেলের প্যান্ট খুলে দিয়ে মজা নেয় যে অসভ্য লোকটা, তাঁকে কোনও দিন আটকেছেন? একটা বাচ্চা ছেলের যৌনাঙ্গে টোকা দেওয়া কিংবা হাত বুলিয়ে মজা নেয় যে লোকটা, তাঁকে কখনও ধমকেছেন?

নাহ্, এ সব কিছুই করি না আমরা। আমরা ওটাকে মজা ভাবি। কিন্তু ওই বাচ্চাটার কথা ভাবুন তো! ও কি আদৌ এতে মজা পাচ্ছে? না কি লজ্জায়, সঙ্কোচে গুটিয়ে যাচ্ছে? আমরা জানি না। জানতে চাইয়ো না। আসলে আমরা বুঝতে চাই না, একটা ছেলেরও যৌন নির্যাতন হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে কথা তার বাবা-মায়ের কান অবধি পৌঁছয় না। থানা অবধি পৌঁছনো তো দূর্‌অস্ত! নাবালকদের উপর যৌন নির্যাতনটাকে এখনও সিরিয়াস ভাবে দেখেই না সমাজের একটা বড় অংশ। আর সেই ‘ট্রমা’টা সারা জীবন বয়ে নিয়ে যেতে হয় ওই শিশুটাকে। তা সে ছেলেই হোক বা মেয়ে অথবা উভলিঙ্গের।


(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

বম্বে হাইকোর্ট (নাগপুর বেঞ্চ) আগেই রায় দিয়েছিল, ত্বক স্পর্শ না হলে তা যৌন হেনস্থা বলে গণ্য হবে না! বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি পুষ্পা গানেদিওয়ালা ফের রায় দিয়েছেন, মেয়েদের হাত ধরে টানা এবং প্যান্টের জিপ খুলে পুরুষাঙ্গ দেখানোটাও যৌন হেনস্থা নয়। এমন রায় শুনে মেয়েদের বাবা-মায়েরা ইতিমধ্যেই বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত হতে শুরু করেছেন।

এই রায় অপরাধ প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে বলেও সমাজকর্মীদের একাংশের মত। কিন্তু যাঁরা ছেলের বাবা-মা, তাঁদেরও আশঙ্কার যথেষ্ট কারণ কি নেই? এমনিতেই নাবালকদের যৌন হেনস্থাকে অত গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তার উপর এমন পরিস্থিতি দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে বই কি!

নিজের সন্তানদের নিরাপদে রাখুন। কন্যার পাশাপাশি পুত্রসন্তানকেও ‘গুড টাচ’, ‘ব্যাড টাচ’ শেখান। আদালত অবমাননার প্রশ্ন এটা নয়। বলতে চাইছি, প্রার্থনা নয়, প্রতিবাদ হোক। মনে রাখতে চাইছি, অপুরাও আসলে এই সমাজেরই সম্পদ। ওরা কুঁকড়ে গেলে সমাজটা প্রস্ফুটিত হতে লজ্জা পাবে যে!

(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)