জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাহাড় সফর ঘিরে অনেক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। তার হয়তো অনেকটাই পূরণ করতে পেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অসুস্থ শরীরে যেভাবে শিলিগুড়ি থেকে কার্শিয়াং ছুটে বেড়ালেন তাতে তাঁর প্রচেষ্টায় যে কোনও খামতি ছিল না তা পরিষ্কার। শিলিগুড়িতে যেদিন প্রথম পৌঁছলেন সেদিন কথাই বলতে পারছিলেন না। বেশি কথা বললেই কাশি হচ্ছিল। জানিয়েছিলেন, পুজোর মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজে উদ্বোধন করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এখনও তিনি পুরো সুস্থ নন কিন্তু উত্তরবঙ্গ পরিদর্শনের পরিকল্পনা তিনি আর বন্ধ করতে চাননি। তাই সেই অবস্থাতেই পৌঁছে গিয়েছিলেন শিলিগুড়িতে। সেখানে ক প্রস্থ প্রশাসনিক বৈঠকের পর চলে গিয়েছিলেন কার্শিয়াংয়ে।
সেখানে যেন পাওয়া গেল সত্যিই ঘরের মেয়েকে। এই বিধানসভাব নির্বাচনের স্লোগানই ছিল বাংলা ঘরের মেয়েকেই চায়। এ যেন সত্যিই ঘরের মেয়ে নির্বাচিত হয়ে ফিরেছেন বাংলায়। প্রশাসনিক বৈঠক। স্থানীয় প্রশাসনকে বিভিন্ন নির্দেশ, বিভিন্ন প্রকল্পের পরিকল্পনাসহ একগুচ্ছ সিরিয়াস বিষয় তো ছিলই। একটা পুরো দিনই কার্শিয়াংয়ে তাঁর কেটেছিল এই মিটিংয়েই। আর সেখান থেকেই তিনি দার্জিলিং জেলাকে পাকাপাকিভাবে শান্ত করার বার্তাও দিলেন। জানিয়ে দিলেন এই জেলায় রয়েছে রোজগারের খনি। শুধু খুঁজে বের করতে হবে। কী কী হতে পারে তারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু প্রশাসনের নিত্য নৈমিত্তিক কাজের বাইরেও তিনি একজন মানুষ তাই পাহাড়ের শোভায়, পাহাড়ের মানুষের ভালবাসায় ভেসে যেতেও দ্বিধা করেননি। তখন কে বলবে তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কে বলবে তাঁর বিরুদ্ধে সারাক্ষণ চলে কত শত পরিকল্পনা। ওই সব ভুলে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও ইন্দ্রনীল সেন আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছিলেন কার্শিয়াংয়ের রাস্তায় হাঁটতে। ১০ কিলোমিটার হাঁটেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে জুতোও কেনেন স্থানীয় দোকান থেকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন হাঁটেন তখন এমনিতেই তাঁর সঙ্গে কেউ তাল মেলাতে পারেন না। এতো আবার পাহাড়ি রাস্তা। অনেক পথ হেঁটে ঘোরেন। তার পর যখন ক্লান্ত লাগে তখন রাস্তারই এক ঝুপড়ি চায়ের দোকানে বসে পড়েন সবাইকে নিয়ে। চা পানের সঙ্গে জুড়ে দেন দোকানির সঙ্গে গল্প। শোনেন তাঁদের সুবিধে, অসুবিধের কথা।
এই ৫ দিনের উত্তরবঙ্গ সফরে তিনি মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। বৃষ্টিতে সম্প্রতি পাহাড়ের অনেক জায়গা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সেই সব ঘুরে দেখেছেন। পাহাড়ি মানুষরা যাতে দ্রুত স্বাভাকি জীবনে ফিরতে পারেন সেদিকে নজর দেওয়ার কথাও বলেছেন। পাহাড়কে আবার শান্তির আবহ ফিরিয়ে দিতে চেয়েছেন। এটা ঠিক তিনি রাজ্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পাহাড়ে আগুনজ্বলা বন্ধ হয়েছে। মানুষ নিশ্চিন্তে সেখানে যেতে পারেন, থাকতে পারেন, ঘুরতে পারেন। খুশি পাহাড়ের মানুষরাও। কারণ পাহাড়ের আসল জীবিকাই তো ট্যুরিজম। তাই ট্যুরিজমকে আরও উন্নত করার বার্তাও দিয়েছেন তিনি।
আর শেষ বেলা যখন পাহাড় থেকে নেমে সোজা পৌঁছে যাবেন সমুদ্রের পাড়ে তার আগে জমিয়ে সময় কাটিয়েছেন পাহাড়ি স্কুলের শিশুদের সঙ্গে। রাস্তার উপরই বসে পড়েছেন চেয়ার টেবল সাজিয়ে। বাচ্চাদের থেকে শুনেছেন, তারা সব কিছু পাচ্ছে কিনা, তারা কোন ক্লাসে পড়ে, কোন বোর্ডে পড়ে ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের হাতে তুলে দিয়েছে উপহারও। তাঁর জন্য প্লেটে সাজিয়ে আনা হয় মোমো, যা দেখে হেসে ফেলেন। এর পরও কি রাজ্য ভাগের কথা উঠবে? এর পরও কি পাহাড়ের মানুষ চাইবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আলাদা হয়ে যাক দার্জিলিং? পাহাড় বাঁচবে তার নিজের ছন্দে সবাইকে ভালবাসা বিলিয়ে দিতে দিতেই জেগে উঠবে দার্জিলিং। থাকবে খাদের ধারের রেলিংটা, থাকবে ভালবাসার দার্জিলিংটা।
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)