চোখ দিয়ে ‘ধর্ষণ’ প্রতিবাদে কলকাতা থেকে দিল্লি, পাশে প্রশাসন

সুচরিতা সেন চৌধুরী: শুক্রবার সকালে ফেসবুক খুলতেই দেখলাম গায়িকা ইমন চক্রবর্তীর লাইভ। সময় দেখলাম বৃহস্পতিবার গভীর রাতের। প্লে করার কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারলাম বিষয়টা অতটা সহজ নয়। খুব সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে এ আর এমন কী? একজন মানুষ আপনার দিকে তাকিয়েছে, কয়েকটা মন্তব্য ছুঁড়ে দিয়েছে তাতে কীই বা এসে গেল। আমরা বলে থাকি, ‘‘ইগনোর কর’’। কিন্তু না, সব কিছু যে ইগনোর করা যায় না তা যেভাবে এদিন ইমন বোঝালেন তেমনই বোঝালেন দিল্লির এক সাংবাদিক। দু’জনের সঙ্গেই দেশের দু’প্রান্তে প্রায় একই ঘটনা ঘটল।

ঠিক কী ঘটেছিল?

ইমনের ফেসবুক লাইভ শুনে যতটা বুঝতে পারলাম— রাতে নিজেরই পাড়ার পাশের মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলেন ইমনসহ তাঁর সঙ্গীসাথীরা। সঙ্গে ইমনের স্বামী নিলাঞ্জনও থাকেন। থাকেন ইমনের বোন, বন্ধু-সহ অনেকে। প্রায় প্রতিদিনই তাঁরা খেলার পর পাশেই একটি দোকানে চা খান আর তার পাশে আরও একটি দোকান থেকে ফল কেনেন। এটা প্রায় প্রতিদিনের রুটিন। সেদিনও খেলার শেষে ফল কিনতে সেই দোকানে গিয়েছিলেন ওঁরা। সেখানেই ঘটল আসল বিপত্তি।

ইমনের কথা অনুযায়ী, সেই ফলের দোকানে এক ব্যক্তি বসে ছিল। প্রাথমিকভাবে সে ইমনকে খুবই খারাপভাবে দেখছিল। স্বাভাবিকভাবেই সেটাকে গায়িকা পাত্তা দেননি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সেই লোকটি তার দেখার সীমাটা ছাড়িয়ে ফেলল। বিভিন্ন ফলের নাম করে কটুক্তি করতে শুরু করে সে। তার কথা শুনে বোঝাই যাচ্ছিল খারাপ ইঙ্গিত করছিল সে। তাও কিছু না বলে গাড়িতে উঠে পড়েন ইমনরা। কিন্তু তার পর সব ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে যায়। তখনও সেই ব্যক্তির চোখ আটকে ইমনের শরীরে। ইমনের কথায়, ‘‘এবার আর মানতে পারিনি। তখন গাড়ি থেকে নেমে সোজা সেই লোকটির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি কেন সে এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে, তার কি কিছু বলার আছে? তখন সে পুরো ব্যাপারটা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য উল্টোপাল্টা বলতে শুরু করে।’’

তার পরই পুলিশের দ্বারস্থ হন ইমন। পুলিশের তরফে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করা হয় তাঁকে। গ্রেফতার করা হয় রঞ্জন মজুমদার নামে সেই ব্যক্তিকে। এটা ছিল কলকাতার ঘটনা। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে দিল্লিতে। প্রায় একই সময়ে দুই শহরে। তাঁর সঙ্গে একইভাবে দুর্ব্যবহার করে এক উবর চালক। তিনি ১ ফেব্রুয়ারি এনএফসি থেকে মালভিয়া নগর যাওয়ার জন্য বিকেল ৪.৪০ নাগাদ উবর অটো বুক করেন। তিনি এএনআইকে বলেন, ‘‘আমি মালভিয়া নগরে আমার বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছিলাম। এনএফসি থেকে অটো বুক করেছিলাম উবরের মাধ্যমে। অটোতে একাই ছিলাম। গান শুনছিলাম। প্রথমে বুঝতে পারিনি কী ঘটছে। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারি অটোচালক বাঁদিকের আয়না দিয়ে টানা আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে যেখানে আমার ব্রেস্ট দেখা যাচ্ছে। এর পর আমি ডানদিকে সরে বসি। তখন সেও ডানদিকের আয়নায় দেখতে শুরু করে। এর পর একদম বাঁদিক ঘেঁষে বসি যেখান থেকে আয়নায় আমাকে দেখা যাবে না। তখন সে পিছন ফিরে দেখতে শুরু করে।’’

এই অবস্থায় অ্যাপ ক্যাবের নম্বরেও ফোন করার চেষ্টা করেন সেই সাংবাদিক। কিন্তু নেটওয়ার্কের কারণে সেটা করা সম্ভব হয়নি। এর পর রাতে পুরো ঘটনাটি টুইট করে সেই মহিলা সাংবাদিক। সঙ্গে সঙ্গেই সেটা দিল্লি মহিলা কমিশনের নজরে আসে। ভাইরালও হয়ে যায় সেই টুইট। এর পর থানায় এফআইআর করেন তিনি। দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল বলেন, ‘‘উবর ইন্ডিয়া ও দিল্লি পুলিশকে নোটিস পাঠানো হয়েছে অটোতে মহিলা সাংবাদিকের শ্লীলতাহানির ঘটনায়। ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

দুটো ঘটনা এত বিস্তারিত বলার কারণ? আসলে গায়ে হাত দিলেই সেটা শ্লীলতাহানি হয় না। সামনের মানুষের ব্যবহার যদি সেটা এরকম অস্বস্তিদায়ক হয় তাহলে প্রতিবাদ করুন। সেটাও শ্লীলতাহানি, সেটাও অসম্মানের যা করার অধিকার কারও নেই। ইমন তাঁর ভিডিওতে বার বার সেই কথা বলার চেষ্টা করেছে। আমরা প্রতিবাদ করলে প্রশাসন আমাদের সঙ্গে থাকবে। সেই প্রমান দুই প্রান্তের দুই শহর দিয়ে দিয়েছে ইতিমধ্যে। নারীদের সম্মান তাঁদের নিজেদের হাতেই। শুধু রুখে দাঁড়াতে হবে। তবেই আর একজন মেয়ে এমন মানুষের হাত থেকে বেঁচে যেতে পারে। ধন্যবাদ ইমনকে, ধন্যবাদ দিল্লির সেই সাংবাদিককে এভাবে প্রতিবাদ করার জন্য আর সেটা সর্বসমক্ষে নিয়ে আসার জন্য।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle