জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে অনেকগুলো মাস। জ্বলছে ইউক্রেন। একের পর এক রাশিয়ার হামলায় ক্ষত-বিক্ষত ইউক্রেনের শরীর। তার মধ্যেই করে চলেছে প্রতিরোধ। লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে এক মুহূর্তের জন্যও সরে যায়নি ইউক্রেনের মতো ছোট্ট দেশ। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল খুব সহজেই ইউক্রেন দখল করে নেবে রাশিয়া। রাশিয়াও হয়তো তেমনটাই ভেবেছিল। কিন্তু সে গুড়ে বালি। সাময়িক ক্লান্তি যেমন এসেছে রাশিয়ার তেমনই সংবাদ মাধ্যমেরও। এখন আর টিভি, খবরের কাগজ, ওয়েবসাইট খুললেই প্রথমে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের খবর আসে না। সয়ে গেছে অনেকটাই। তাই হয়তো ফুটবলকে (Ukraine Football) সামনে রেখেই একটু ভাল থাকার চেষ্টা।
মঙ্গলবার দেশের নতুন ফুটবল মরসুম শুরু কথা ঘোষণা করে দেওয়া হল। মনে করা হচ্ছে মানসিকভাবে ফুটবল কিছুটা চাঙ্গা করে তুলবে দেশের মানুষকে। ইউক্রেন প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যাচে মঙ্গলবার শাখতার ডনেস্ক ও মেটালিস্ট ১৯২৫-এর ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়। কিয়েভের অলিম্পিস্কি স্টেডিয়ামে খেলা শুরুর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ভেসে যায় আবেগে।
দুই দলের প্লেয়ার থেকে রেফারি ম্যাচ শুরুর আগে মাঠে ঢোকেন ইউক্রেনের পতাকা গায়ে জড়িয়ে। হাতে তখন ব্যানারে লেখা ‘‘আমাদের সাহস একই আছে।’’ সত্যিই একটা দীর্ঘ লড়াই। কেউ জানে না এই লড়াইয়ের শেষ কোথায়। তবুও বাঁচার স্বপ্ন দেখে ওঁড়া, দেখায় ভাল থাকার স্বপ্ন। ফুটবল কী না পারে।
শাখতার প্লেয়ারদের টি-শার্টে জ্বল জ্বল করছিল ‘‘ইউক্রেন জিতবেই’’। সেই জার্সিতেই ৯০ মিনিট দৌঁড়ালেন ফুটবলাররা। অন্যদিকে খারকিভের ক্লাবের প্লেয়ারদের জার্সিতে লেখা ছিল ‘‘খারকিভ। ইউক্রেন জিতবেই।’’ রাশিয়ার আক্রমণে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ এই খারকিভ। সেখানেই গোলা, বারুদ, বোমা, বন্দুকের আওয়াজের মধ্যেই নিজেকে বাঁচিয়ে পরিবার, পরিজনকে বাঁচিয়ে চলেছে ফুটবলের জন্য তৈরি হওয়া। যখন দেশের সৈনিকরা রাশিয়ার আক্রমণে পাল্টা আক্রমণ করতে ব্যস্ত তখন নিভৃতে তৈরি হচ্ছিলেন ওঁরা।
খারকিভের দল মেটালিস্ট ১৯২৫ নিজেদের চেনা জার্সিতে স্পনসরের লোগোর বদলে ছিল দেশের সেনাবাহিনীর লোগো। ইউক্রেনের লড়াইটা যে শুধু সেনাবাহিনীতে আটকে নেই তা প্রথম দিন থেকেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন দেশের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি। যিনি প্রথম দিন থেকে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। একবারের জন্যও ময়দান ছেড়ে নড়তে দেখা যায়নি তাঁকে। তাঁর এই অদম্য লড়াই গোটা দেশকে অনুপ্রাণিত করেছে, করে চলেছে।
ম্যাচ শুরুর আগে এক মিনিটের নীরবতা পালন করে দেশের মৃতদের স্মৃতির উদ্দেশে। ম্যাচের প্রথম বল কিক করেন দেশের এক সেনা। তবে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে মাঠে দর্শক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাই খালি গ্যালারিতই খেলা হয়। কিন্তু স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে যাতায়াতের সময় সাধারণ মানুষ গলা ফাটিয়েছেন ইউক্রেন ফুটবলের জন্য। তাঁরাও মনে করছেন দেশে ফুটবল শুরু হওয়াটা খুবই দরকার ছিল।
এই ফুটবলের ফিরে আসা প্রমান করছে হেরে যায়নি ইউক্রেন। এক ফুটবল ফ্যানের দাবি, ‘‘আমরা এর মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছি যুদ্ধ আমাদের থামাতে পারবে না।’’আর এক ফ্যানের বক্তব্য, ‘‘আমাদের দেশের ফুটবলের খুব দরকার ছিল। এটিই মানুষকে একত্রিত করে রাখতে পারে।’’ যুদ্ধ দেশের ফুটবলের পরিকাঠামাটাকেই ভেঙে দিয়েছে। বিশেষ করে ছোট বা মাঝারি ক্লাবগুলো হারিয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
দেশের নাম করা ক্লাব এফসি মারিওপোল ও দেসনা চার্নিজিভের মতো ক্লাব এই মরসুমে নিজেদের লিগ থেকে সরিয়ে নিয়েছে। রাশিয়ার আক্রমণে চূড়ান্ত পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মারিওপোলও। নিয়মিত শেলিংয়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের এই জায়গাটি। দেসনা স্টেডিয়াম রাশিয়ার রকেট আক্রমণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এত অসহায়তার মধ্যেও প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি দেশকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করতে ফুটবল মরসুম শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন।
বেশিরভাগ ক্লাবই যার যার নিজের শহরে হোম ম্যাচ খেলতে পারছে না। কারণ খেলার পরিস্থিতি নেই। স্টেডিয়ামগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দেশের যে প্রান্ত একটু ঠিক রয়েছে সেখানেই হচ্ছে খেলা। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া প্রথম আক্রমণ করে ইউক্রেনের উপর। তার আগে থেকেই প্রস্তুতি চলছি। সেই সময় ফুটবল মরসুম চলছিল। তার মধ্যেই কিছুদিন খেলা চালানোর চেষ্টা করা হয়। শেষ পর্যন্ত এপ্রিলে দ্রুত মরসুম শেষ করা সিদ্ধান্ত নেয় ইউক্রেন সরকার। এবার আবার ফুটবলের হাত ধরেই নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা দেখছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত এই দেশ।
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google