জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: হারের পর ড্র—ডুরান্ড কাপের (Durand Cup 2022) নক আউট পর্ব থেকে আরও কিছুটা দূরে সরে গেল এটিকে মোহনবাগান। বুধবার মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে ৭৭ মিনিট পর্যন্ত লিস্টন কোলাসোর গোলে এগিয়ে থেকেও জিততে পারল না সবুজ-মেরুন শিবির। গত দুই মরশুমে এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে অপরাজিত থাকার ধারাবাহিকতা এই ম্যাচেও বজায় রাখল মুম্বই সিটি এফসি। তাদের আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড জর্জ পেরেইরা দিয়াজ সমতা আনায় তাদেরও ডুরান্ড-অভিযান কিছুটা হলেও থমকে গেল।
তবে এটিকে মোহনবাগানের চ্যালেঞ্জটা অনেক বেশি কঠিন। পরের দুই ম্যাচে তাদের জিততেই হবে। না হলে বিদায়। মুম্বইকে এখন অন্তত একটি ম্যাচ জিততেই হবে। দুই ম্যাচে মুম্বই সিটি এফসি চার পয়েন্ট পেয়ে আপাতত ‘বি’ গ্রুপে শীর্ষে। এটিকে মোহনবাগানের সংগ্রহ দুই ম্যাচে এক পয়েন্ট। বৃহস্পতিবার ইস্টবেঙ্গল ও রাজস্থান ইউনাইটেডের মধ্যে ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে দুই দলকেই।
এ দিন কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে শুরু থেকেই বিপক্ষকে চাপে রাখার চেষ্টা করে এটিকে মোহনবাগান। দ্বিতীয় মিনিটেই ডানদিক দিয়ে ওঠা লিস্টন কোলাসোর কোনাকুনি শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। কোলাসোকে এ দিন ডানদিক দিয়ে আক্রমণে উঠতে দেখা যায়। পিছন থেকে আশিস রাই তাঁকে সাহায্য করছিলেন। বাঁ দিক দিয়ে আশিক কুরুনিয়ান আক্রমণ তৈরির চেষ্টা করেন। তবে মুম্বই সিটি এফসি-র শক্তিশালী রক্ষণে বারবার আটকে যান তাঁরা।
বিপক্ষকে পরখ করে নিয়ে অবশ্য কিছুক্ষণ পর থেকে মুম্বইও পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। ১৫ মিনিটের মাথায় বিপিন সিং কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে বিপক্ষের বক্সের কাছে চলে গেলেও প্রীতম ও পোগবা তাঁকে থামান। এর পর থেকে লম্বা পাস ও এরিয়াল পাসে খেলা শুরু করে মুম্বই। যার জেরে এটিকে মোহনবাগান রক্ষণকেও তাদের রণনীতি বদলাতে হয়।
মুম্বইয়ের রক্ষণ সমস্যায় পড়ে ২৭ মিনিটের মাথায় রাহুল ভেকে চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ায়। মেহতাব সিং তাঁর জায়গায় নামেন। ৩০ মিনিটের মাথায় নগুয়েরার পাস থেকে বল পেয়ে বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে গোলে শট নেন বিপিন, যা দ্বিতীয় পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। বিপিনকে আটকানোর চেষ্টা করেনও পারেননি প্রীতম। ৩৪ মিনিটের মাথায় গ্রেগ স্টুয়ার্ট বক্সের মাঝখান থেকে গোলে শট নিলেও তিনি অফ সাইডে ছিলেন। ফিরতি বল পেয়ে বিপিন ফের বক্সে ঢুকে শট নিলে তা গোলকিপার বিশাল কয়েথের গ্লাভসে জমা হয়ে যায়।
তবে ৪০ মিনিটের মাথায় কাজের কাজটি করে ফেলে এটিকে মোহনবাগান। ডানদিকের উইংয়ে হুগো বুমৌসের পা থেকে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে ক্রস দেন আশিস, যা মুম্বইয়ের গোলকিপার ফুর্বা লাচেনপার হাতে লেগে ছিটকে সামনে লিস্টন কোলাসোর পায়ে এসে পড়ে এবং তিনি গোলে শট নিয়ে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি (১-০)।
তবে এই গোলের তিন মিনিট পরেই তা শোধের অনবদ্য সুযোগ পেয়ে যান বিপিন। ডানদিক থেকে স্টুয়ার্টের এরিয়াল ক্রস পেয়ে তা গোলে শট নেন তিনি। তবে দলকে দারুন সেভ করে বাঁচান বিশাল। প্রথমার্ধে বল দখলের লড়াইয়ে কলকাতার দল এগিয়ে (৫৮-৪২) থাকলেও দুই দলই গোলে পাঁচটি করে শট নেয়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বিক্রম প্রতাপ সিংয়ের জায়গায় আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড জর্জ পেরেইরা দিয়াজকে নামান মুম্বইয়ের কোচ ডেস বাকিংহাম। উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট, আক্রমণের ধার বাড়ানো। তবে দ্বিতীয়ার্ধে সবুজ-মেরুন রক্ষণ আরও সতর্ক ছিল। রাহুল ভেকের পরে ডিফেন্ডার অময় রানাওয়াডেও চোট পেয়ে বেরিয়ে যান দ্বিতীয়ার্ধে। তাঁর জায়গায় নামেন সঞ্জীব স্টালিন।
তবে ব্যবধান বাড়ানোর লক্ষ্যে এটিকে মোহনবাগান কোচ হুয়ান ফেরান্দোও জোড়া পরিবর্তন করেন ৬১ মিনিটের মাথায়। কাউকোর জায়গায় নামেন কিয়ান নাসিরি ও আশিকের জায়গায় নামেন মনবীর সিং। কাউকো এ দিন তেমন চেনা ছন্দে ছিলেন না। এই পরিবর্তনের জের মিনিট চারেক পরেই দেখা যায়।
ডানদিক দিয়ে ওঠা কিয়ান ক্রস দেন বক্সের মাঝবরাবর ওঠা কোলাসোকে। তিনি তা ছেড়ে দেন আশিসের জন্য। আশিস বাঁ দিক দিয়ে ওঠা মনবীরকে দেন। কিন্তু তিনি বাঁ দিক থেকে সোজা গোলকিপারের হাতে শট নেন। ফুর্বার হাত থেকে বল বেরিয়ে এলেও এ বার আর তা গোলে রাখতে পারেননি কোলাসো।
তবে মুম্বই সিটি এফসি ক্রমশ নিজেদের মধ্যে পাসের সংখ্যা বাড়িয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিতে শুরু করে এবং তার জেরেই ৭৭ মিনিটে সমতা এনে ফেলে তারা। ৬৮ মিনিটের মাথায় যিনি পরিবর্ত হিসেবে নেমেছিলেন, সেই পেরেইরা দিয়াজই গোল করে দলকে ফের লড়াইয়ের জায়গায় এনে দেন। ডান দিকের উইং দিয়ে ওঠা আর এক পরিবর্ত সঞ্জীব স্টালিনের সেন্টার পেয়ে গোলের বাঁ দিক থেকে কোণাকুনি হেডে গোলটি করেন দিয়াজ (১-১)।
গোল খাওয়ার পরেই বুমৌসের জায়গায় লেনি রড্রিগেজ ও দীপক টাঙরির জায়গায় প্রণয় হালদারকে নামান ফেরান্দো। পরে আশিসের জায়গায় লালরিয়ানা হ্নামতেও নামেন। আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে এ বার রক্ষণে পাহাড়া বাড়ানোর প্রবণতাও দেখা যায় তাঁর দলে। শেষ মিনিটে বাঁ দিক থেকে ওঠা মনবীর বিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে বক্সের মাথায় থাকা প্রণয়কে দিলে তিনি এক ডিফেন্ডারের গায়ে মারেন। চার মিনিট অতিরিক্ত সময় পেয়েও কোনও দল আর ব্যবধান তৈরি করতে পারেনি।
এটিকে মোহনবাগান দল: বিশাল কয়েথ (গোল), আশিস রাই (লালরিয়ানা হ্নামতে), প্রীতম কোটাল, ফ্লোরেন্তিন পোগবা, শুভাশিস বোস, দীপক টাঙরি (প্রণয় হালদার), কার্ল ম্যাকহিউ, জনি কাউকো (কিয়ান নাসিরি), হুগো বুমৌস (লেনি রড্রিগেজ), আশিক কুরুনিয়ান (মনবীর সিং), লিস্টন কোলাসো।
(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট)
প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে
জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: Facebook, Twitter, Google