যুজবেন্দ্র চাহাল বাবার পরামর্শেই জোরে বোলিং ছেড়ে লেগ স্পিনার

কোভিড আক্রান্ত চাহাল-গৌথমযুজবেন্দ্র চাহাল

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: যুজবেন্দ্র চাহাল হতে পারতেন গ্র‌্যান্ডমাস্টার। হয়ে গেছেন ক্রিকেটার। যুজবেন্দ্র চাহালের বাবাও কখনও ভাবেননি, তাঁর ছেলে একদিন বল হাতে বাইশ গজ দাপাবে। সেই ছোট্ট ‌‘‌যুজি’‌ এখন ব্যাটসম্যানদের কাছে ত্রাস। বাবার পরামর্শেই জোরে বোলিং ছেড়ে লেগ স্পিন শুরু করেছিলেন যুজবেন্দ্র চাহাল।

আর পাঁচটা ছেলের মতো ছোটবেলায় বেশ দুরন্ত ছিলেন যুজবেন্দ্র। অন্যদের সঙ্গে সবসময় দস্যিপনা করে বেড়াতেন। কীভাবে ছেলেকে শান্ত করা যায়, তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত ছিলেন তাঁর বাবা। যুজবেন্দ্র যাতে অন্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে না পারে, তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে দাবার বোর্ড এনে দিয়েছিলেন বাবা। কীভাবে দাবা খেলতে হয়, শিখিয়েও দিয়েছিলেন। বাবার কাছেই দাবায় হাতখড়ি যুজবেন্দ্রর। অফিস থেকে ফিরে যুজবেন্দ্রকে নিয়ে দাবার বোর্ডে বসে পড়তেন যুজবেন্দ্রর বাবা কে কে চাহাল। আস্তে আস্তে দাবার প্রতি আগ্রহ বাড়ে যুজবেন্দ্রর। আর মাত্র ৬ বছর বয়সেই বয়সভিত্তিক দাবায় জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন।

কীভাবে যুজবেন্দ্রর দাবার প্রতি আগ্রহ বাড়ে, সে কথাও তুলে ধরেছেন তাঁর বাবা। কে কে চাহালের কথায়, ‘‌আমি ওর সঙ্গে খেলতাম। ওর যাতে দাবার প্রতি আগ্রহ বাড়ে, তার জন্য ইচ্ছে করে হারতাম। খুব তাড়াতাড়িই ও দাবাকে ভালবেসে ফেলেছিল। ১৫–২০ দিনের মধ্যেই আমাকে সত্যি সত্যিই হারাতে শুরু করেছিল। মাত্র ৩ মাসের মধ্যে রোহতকে অনুষ্ঠিত রাজ্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। যেদিন ও চ্যাম্পিয়ন হয়, আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল আমার পরিশ্রম সার্থক।’

প্রথমবার জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অস্টম স্থান পেয়েছিলেন চাহাল। ২০০২–তে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বয়সভিতিক জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন। পরের বছর গ্রিসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব দাবায় দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন চাহাল।

দাবায় জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হলেও যুজবেন্দ্রর প্রথম প্রেম ছিল ক্রিকেট। কে কে চাহাল ছেলের ক্রিকেটপ্রেমের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চাননি। বলেন, ‘‌কোনও কিছুর শীর্ষে পৌঁছতে যুজি খুব মরিয়া থাকত। ওর ওই ব্যাপারটা আমার খুব ভাল লাগত। ওর ওই খিদে আজ যুজিকে এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। ছোটবেলায় দেখেছি, ছয় মারলে কিংবা উইকেট পেলেও ও শান্ত থাকত। দাবা ওকে ধৈর্যশীল করে তুলেছে।’‌

ছেলের নাম কেন যুজবেন্দ্র রেখেছেন, তার কারণও জানিয়েছেন কে কে চাহাল। তাঁর কথায়, ‘‌১৯৭৭ সালে বেঙ্গালুরুতে ভারত–ইংল্যান্ড টেস্ট ম্যাচ দেখছিলাম। ওই ম্যাচে যজুর্বেন্দ্র সিং ৭টি ক্যাচ ধরেছিলেন। যজুর্বেন্দ্রকে দেখেই আমার ছেলের নাম রেখেছিলাম যুজবেন্দ্র। একদিনের ক্রিকেটে একটা ম্যাচে যেদিন আমার ছেলে ৬ উইকেট পেয়েছিল, যজুর্বেন্দ্র ফোন করে ওকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।’

প্রথম দিকে যুজবেন্দ্র জোরে বোলিং করতেন। বাবার কথাতেই লেগ স্পিন শুরু করেন। কেন ছেলেকে লেগ স্পিন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন কে কে চাহাল। তিনি বলেন, ‘‌ওর শরীরের গঠন জোরে বোলারদের মতো নয়। তাই লেগ স্পিন করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কারণ এই বিভাগে প্রতিযোগিতা কম। যদিও‌ লেগ স্পিন করাটা যথেষ্ট কঠিন।’