জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: নোটবন্দি , শব্দটির দু’বছর পূর্তি হল। ৮ নভেম্বর, ২০১৬, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সন্ধ্যাবেলায় তাঁর মন্ত্রিসভার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডেকেছিলেন। সে দিন ছিল মঙ্গলবার। সেখানে মোদী একটি সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই অর্থাৎ মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই বাতিল হয়ে যাবে ৫০০ এবং ১ হাজার টাকার নোট। সহকর্মীদের কাছে এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করার কয়েক মুহূর্ত পরেই মোদী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। গোটা দেশ জানতে পারে, নোটবন্দির কথা।
তার পরের কয়েক মাস ধরে দেশ জুড়ে অনন্ত ভোগান্তির শিকার হন নাগরিকরা। ওই দিন রাত থেকেই রাস্তায় রাস্তায় এটিএমের ধারে লাইন পড়ে যায়, ছোট অর্থাৎ ১০০ টাকার নোট তোলার জন্য। ব্যাঙ্কে ৫০০-১০০০-এর নোট জমা দিতে গিয়েও ভোগান্তি। পর্যাপ্ত নোটের সংস্থান না করেই আচমকা ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে মাসের পর মাস বহু মানুষ হেনস্থার শিকার হন।
সরকারের ওই পদক্ষেপের ফলে সেই বছরের ১০ নভেম্বর থেকে যাঁর কাছে যত ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট ছিল, সেগুলি সব ব্যাঙ্কে-ডাকঘরে নিজের অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে দেন সকলে। ব্যাঙ্ক, এটিএম এবং ডাকঘর থেকে টাকা তোলার ঊর্ধসীমাও বেঁধে দেওয়া হয়। পরে বাজারে আর ১০০০-এর নোট আসেনি। বদলে এসেছে ২০০০-এর নোট। পরে ৫০০ এবং ২০০ আসে। কিন্তু, তত দিনে দুর্ভোগ যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।
অযোধ্যা হচ্ছে ফৈজাবাদ জেলার নাম বদলে
মোদী সে দিন দেশবাসীকে আস্বস্ত করেছিলেন, নাগরিকদের অসুবিধা হবে না। নাম না করে তিনি পাকিস্তানকে আক্রমণ করে জানিয়েছিলেন, সীমান্তপারে জাল নোট ছড়াচ্ছে শত্রুরা। পাশাপাশি দুর্নীতির কারণে দেশ জুড়ে কালো টাকার রমরমা চলছে। কিছুতেই তা নির্মূল করা যাচ্ছে না বলেই সরকার ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মোদী ঘোষণা করেছিলেন। পরে দেখা যায় ৫০০ এবং ১০০০ হাজার টাকার যে পরিমাণ নোট বাজারে ছাড়া ছিল, তার প্রায় ৯৯ শতাংশই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘরে ফেরত চলে আসে।
শুরু থেকেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে নোটবন্দি নিয়ে সরব ছিল বিরোধীরা। মোদীর চমক ছাড়া এই মোটবন্দি যে আর কিছুই নয়, সে কথা তাঁরা গোড়া থেকেই বলছিলেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসাব সামনে আসার পর তাদের আক্রমণ আরও তীক্ষ্ণ হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেত্রীরা সে দিন বলেছিলেন, নোটবন্দি আসলে অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা। কিন্তু, কোনও কিছুকেই গুরুত্ব দেয়নি মোদী সরকার।
গত দু’বছরে নোটবন্দি নিয়ে বিরোধীরা এক দিনের জন্যেও মোদী সরকারের সমালোচনা করতে ছাড়েননি। এ দিন দু’বছর পূর্তির দিনেও তার কোনও ব্যত্যয় হল না। কংগ্রেস এ দিন ঘোরতর সমালোচনা করেছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা মনমোহন সিংহ জানিয়েছেন, নোটবন্দির ক্ষত গোটা দেশ আজও বহন করে চলেছে। কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমও জানিয়েছেন, নোটবন্দি আসলে সুপরিকল্পিত একটি আর্থিক নয়-ছয়ের ঘটনা। এ দিন সমালোচনা করেছেন মমতাও। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কে এর ফলে লাভবান হল? সব টাকা তো ঘরে ফেরত এল।