৬০ বছর আগের হারিয়ে যাওয়া Nuclear Device নিয়ে বিপাকে ভারত

Nuclear Device

ভারতীয় হিমালয়ে দীর্ঘকাল ধরে চাপা পড়া একটি স্নায়ুযুদ্ধের গোপন রহস্য আবার আলোচনায় উঠে এসেছে। প্রায় ৬০ বছর আগের কথা, নন্দা দেবীর কাছে পরিত্যক্ত একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত যন্ত্র (Nuclear Device) সম্ভবত এখনও গঙ্গার উৎসস্থলের উপরের বরফের নিচে চাপা পড়ে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ১৯৬৫ সালে, চিনের উদীয়মান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ যখন তুঙ্গে তখন সিআইএ এবং ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নন্দা দেবীর চূড়ায় একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত শ্রবণযন্ত্র স্থাপন করার জন্য গোপন অভিযান শুরু করে।

এই ব্যবস্থাটি কয়েক কিলোগ্রাম প্লুটোনিয়াম দ্বারা চালিত একটি রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর (আরটিজি)-এর উপর নির্ভরশীল ছিল, যা এমন সেন্সরকে শক্তি জোগানোর জন্য তৈরি করা হয়েছিল যা সীমান্তের ওপার থেকে চিনা ক্ষেপণাস্ত্র এবং পারমাণবিক পরীক্ষার উপর নজরদারি করবে। সেই সময় ঘটে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা।


এক ভয়াবহ তুষারঝড়ে আটকে পড়ে সেই দল। সেই সময় পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে নিজের প্রান বাঁচানোও কঠিন হয়ে পড়েছিল। তখন সেই দলটি সিদ্ধান্ত নেয় যন্ত্রটিকে পাহাড়ে লুকিয়ে রেখেই ফিরে আসার। পরের মরসুমে যখন পর্বতারোহীরা সেই জায়গায় ফিরে যান, তখন আরটিজি এবং তার প্লুটোনিয়াম কোরটি সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল, সম্ভবত তুষারধসে ভেসে গিয়েছিল বা হিমবাহের গভীরে চাপা পড়ে গিয়েছিল। অনেক খুঁজেও তার হদিশ পাননি কেউ। তার পর দেখতে দেখথে কেটে গিয়েছে ৬০ বছর। এখন আবার নতুন করে ভাবাচ্ছে সেই যন্ত্র।

তার আগে জানতে হবে কী এই আরটিজি?

আরটিজি, বা রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর, হলো এমন একটি যন্ত্র যা তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে উৎপন্ন তাপ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ তৈরি করে। পদার্থটি প্রাকৃতিকভাবে ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে তাপ নির্গত করে। আরটিজি কোনো চলমান অংশ ছাড়াই এই তাপকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে।

আরটিজি প্রায়শই মহাকাশ অভিযানে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যবহৃত হয় যেখানে সৌরশক্তি ভালোভাবে কাজ করে না। এগুলো অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য এবং কয়েক দশক ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। একটি আরটিজি পারমাণবিক বোমা নয় এবং এটিতে বিস্ফোরণ হয় না। এর প্রধান উদ্বেগ হলো যদি পদার্থটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা উন্মুক্ত হয়ে পড়ে তবে বিকিরণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

হারিয়ে যাওয়া যন্ত্রটি এখন কোথায়?

পরবর্তী কয়েক দশকে ভারতীয় ও আমেরিকানদের চালানো অনুসন্ধান অভিযানগুলো জেনারেটরটির অবস্থান খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং কোনও সরকারই এর পরিণতি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু বলছে না। কিছু কর্মকর্তা ও লেখক অনুমান করেছেন যে একটি ভারতীয় দল হয়তো গোপনে যন্ত্রটি উদ্ধার করেছে, আবার অন্যরা বিশ্বাস করেন যে যন্ত্রটি এখনও নন্দাদেবী পর্বতশ্রেণীর বরফ ও পাথরের কোথাও আটকে আছে।

১৯৭৮ সালে ভারতের পারমাণবিক শক্তি কমিশনের একটি সমীক্ষায় স্থানীয় নদীগুলোতে শনাক্তযোগ্য কোনও প্লুটোনিয়াম দূষণ পাওয়া যায়নি, কিন্তু এটি যন্ত্রটির অবস্থানও নির্দিষ্ট করতে পারেনি, ফলে এর ভাগ্য অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছে। আর ক্রমশ বাড়ছে আতঙ্ক। বাড়ছে গঙ্গা নদীর উপর তেজস্ক্রিয়তার ঝুঁকি।

এই ঝুঁকির মাত্রা অনেক বেশি, কারণ নন্দাদেবীর হিমবাহগুলো ঋষি গঙ্গা এবং ধৌলিগঙ্গার উৎস, যা অলকানন্দা এবং অবশেষে ভাগীরথীর সঙ্গে মিলিত হয়ে গঙ্গা নদী হিসেবে সমতলে নেমে এসেছে, যা ভাটির শত শত মিলিয়ন মানুষের জীবনরেখার নির্ধারকও বটে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরফের গভীরে চাপা পড়া একটি অক্ষত, ভালোভাবে সুরক্ষিত আরটিজি তাৎক্ষণিক সীমিত ঝুঁকি তৈরি করে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর সুরক্ষা ব্যবস্থায় কোনও ফাটল দেখা দিলে তেজস্ক্রিয় পদার্থ গলিত জল এবং পলিমাটির সঙ্গে মিশে জনবহুল সমতলভূমির দিকে প্রবাহিত হতে পারে।

এই ‘কম সম্ভাবনার কিন্তু উচ্চ প্রভাবের’ পরিস্থিতিটি পরিবেশবিদ এবং স্থানীয় সম্প্রদায়কে আতঙ্কিত করে তুলেছে, যখনই উত্তরাখণ্ডের ভঙ্গুর উপত্যকাগুলিতে বন্যা, তুষারধস বা শিলা-বরফ ধসের মতো কোনও দুর্যোগ আঘাত হেনেছে।

হিমালয়ের হিমবাহ গলে যাওয়ার হার বৃদ্ধি, ২০২১ সালের চামোলি বন্যার মতো দুর্যোগের পুনরাবৃত্তি এবং পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল অঞ্চলে ঐতিহাসিক পারমাণবিক ও সামরিক কার্যকলাপের পদচিহ্ন নিয়ে ক্রমবর্ধমান তদন্তের মধ্যেই নন্দাদেবীতে ফেলে আসা ডিভাইসটি নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে।

যদিও এখনও  পর্যন্ত কোনও তেজস্ক্রিয় বিকিরণ নিঃসরণের ঘটনা নিশ্চিত হয়নি, বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে ক্রমাগত উষ্ণায়ন এবং হিমবাহের পশ্চাদপসরণের ফলে অবশেষে আরটিজি-র অবশিষ্ট অংশ উন্মুক্ত বা বিঘ্নিত হতে পারে।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবর

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle