মায়ের সঙ্গে প্রথম দেখা মেয়ের, ভাষা সমস্যায় হল না কোনও কথা!

মায়ের সঙ্গে প্রথম দেখা মেয়ের

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: মায়ের সঙ্গে প্রথম দেখা মেয়ের । মেয়েকে জড়িয়ে ধরে মা কাঁদছেন হাউ হাউ করে। মেয়ের চোখও ভেসে যাচ্ছে জলে। কিন্তু, কেউ কারও সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না।

কারণ, মেয়ে জীনাত শুধুমাত্র স্প্যানিস ভাষা বলতে পারে। আর জানে ভাঙা ভাঙা ইংরেজি। কিন্তু, মা আলিফিয়া (নাম পরিবর্তিত) হিন্দি ছাড়া আর কিছুই জানেন না। কার্যত প্রথম বার দেখা হলেও তাই কেউ কারও সঙ্গে কোনও কথাই বলতে পারলেন না। শুধুই কান্না এবং জড়িয়ে ধরা।

মা যদিও ছোট্ট একটা কানের দুল উপহার দিয়েছেন মেয়েকে। সেটাকে নিজের হাতে পরিয়েও দিয়েছেন। আর তাতেই প্রবল খুশি জীনাত। জীবনের সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত। মা তখন তাঁকে বলছেন, ‘‘ক্ষমা করে দিও। আমি তোমার জীবনকে গুরুত্ব দিতে পারিনি।’’

জীনাতের এখনকার নাম মিরেইয়া। ২৩ বছরের ওই তরুণীকে ২২ বছর আগে স্পেনীয় এক দম্পতি দত্তক নিয়েছিলেন। নতুন বাবা অ্যান্টিক মার্টি রমন পেশায় শব্দ কৌশলী। নতুন মা পেশায় লাইব্রেরিয়ান। তাঁর নাম গার্সিয়া বাটাসিয়া ফোরস। জীনাতের যখন ১৪ মাস বয়স, তখন ওই দম্পতি তাকে ‘সোসাইটি অব ফ্রেন্ডস অব দ্য সাসুন হাসপাতাল’ থেকে দত্তক নিয়েছিলেন। বছর চারেক পরে তাঁরা ওই একই জায়গা থেকে এক বছরের আকাশকেও দত্তক নেন।

জলাধার ভেঙে ভেসে গেল গ্রাম 

জীনাতের বয়স যখন ১০ বছর, তখন তার আসল মায়ের খোঁজে স্পেনীয় ওই দম্পতি তাকে নিয়ে ভারতে আসেন। কিন্তু, কোনও ভাবেই আলিফিয়াকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১২ ক্লাস পর্যন্ত পড়াশোনা করে জীনাত। মনোস্তত্ত্ব নিয়ে ভবিষ্যতে পড়তে চেয়েছিল সে। তার পরের তিন বছর একটি রেস্তরাঁয় কাজ করেন জীনাত। কাজ করে টাকা জমাতেন, আবার ভারতে এসে মায়ের খোঁজ করবেন বলে। সেই ছোটবেলাতেই জীনাত কোনও ভাবে জানতে পেরেছিলেন, তাঁর মায়ের বিবাহ পূর্ববর্তী সন্তান সে।

গত শনিবার মহারাষ্ট্রের পুণেতে মা-মেয়ের দেখা হয়। পরে আলফিয়া বলেন, ‘‘আমি তখন ২১ বছরের তরুণী। আমার এক আত্মীয় জোর করে আমার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেন। তার প্রেক্ষিতেই আমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ি। অন্তঃসত্ত্বা জেনে আমার পরিবার এবং সেই আত্মীয় আমাকে দূরে সরিয়ে দেয়। কিন্তু আমি জীনাতকে জন্ম দিতে চেয়েছিলাম। দিয়েওছিলাম। কিন্তু, ওকে এই জীবনের সঙ্গে আর জড়াতে চাইনি। আমি বিয়েও করিনি। লোকের বাড়ি কাজ করে বেঁচে আছি।’’ তবে সর্বদা জীনাতের জন্য প্রার্থনা করে গিয়েছেন ঈশ্বরের কাছে।

মেয়ে জীনাতও শনিবার মা-কে দেখে আবেগআপ্লুত। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মা-কে কতটা কষ্ট পেতে হয়েছে আমি সেটা কখনও ভুলব না। ওই হাসপাতাল আমাকে যে ভাবে সাহায্য করেছে মনে রাখব সেটাও। পরের বছর ফের ভারতে আসছি। আসার আগে হিন্দিটা ভাল করে শিখে আসব।’’