একই পরিবারের ১১ জনের দেহ উদ্ধার দিল্লিতে, তদন্তে নেমে ধন্দে পুলিশ

একই পরিবারের ১১ জনের দেহ উদ্ধারএকই পরিবারের ১১ জনের দেহ উদ্ধার, তদন্তে নেমেছে পুলিশ।

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: একই পরিবারের ১১ জনের দেহ উদ্ধার দিল্লিতে। তার মধ্যে ১০ জনের দেহ সিলিঙের লোহার রড থেকে ঝুলছিল। অন্য এক জনের দেহ পড়েছিল ঘরের মধ্যে। মৃতদের মধ্যে ৭ জন মহিলা, দু’জন শিশু এবং দু’জন পুরুষ রয়েছেন। রবিবার সকালে উত্তর দিল্লির বুরারি কলোনির এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয়, ঠিক কী ভাবে একই পরিবারের এত জনের মৃত্যু হল।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুরারি কলোনিতে প্রায় ২০ বছরের বাস ভাটিয়া পরিবারের। পরিবারের মেজো ছে‌লে ভবনেশ ভাটিয়ার বাড়ির নীচেই মুদিখানার দোকান। ছোট ভাই ললিতের প্লাইউডের ব্যবসা। তাঁর দোকান বাড়ি থেকে একটু দূরে। প্রতি দিন সকাল ৬টার মধ্যেই দোকান খুলতেন ভবনেশ। কিন্তু, রবিবার ৭টা বেজে গেলেও তিনি দোকান না খোলায় এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। ইতিমধ্যেই দোকানে দুধের গাড়ি এবং কিছু ক্রেতা এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভাটিয়াদের এক প্রতিবেশী এর পর সদর দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে সোজা দোতলায় উঠে যান। সেখানে পর পর ভাটিয়া পরিবারের সকলের দেহ ঝুলতে দেখে তিনি ভয় পেয়ে নীচে এসে সকলকে খবর দেন। খবর যায় পুলিশে। তারা এসে একে একে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।

দিল্লি পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, ভাটিয়া পরিবারের বড়ছেলে দীনেশ থাকেন রাজস্থানের কোটায়। বাকি দুই ছেলে ভবনেশ এবং ললিত, তাঁদের স্ত্রী-সন্তান এবং নিজের বিধবা মেয়েকে নিয়ে বুরারি কলোনির ওই বাড়িতে থাকতেন বছর সাতাত্তরের নারায়ণী দেবী। এ দিন সকালে পুলিশ এসে দেখে, দোতলার বারান্দার সিলিং থেকে একে একে ঝুলছে সকলের দেহ। নারায়ণী দেবীর মেজো ছেলে ভবনেশ (৫০), তাঁর স্ত্রী সবিতা (৪৮), ভবনেশ-সবিতার তিন ছেলেমেয়ে মীনু (২৩), নিধি (২৫) এবং ধ্রুব (১৫), ছোট ছেলে ললিত (৪৫), তাঁর স্ত্রী টিনা (৪২), ললিত-টিনার একমাত্র ছেলে শিবম (১৫), বিধবা মেয়ে প্রতিভা (৫৭) এবং তাঁর মেয়ে প্রিয়াঙ্কা (৩৩)-র দেহ ঝুলছিল বারান্দার সিলিঙের লোহার রড থেকে। সকলেরই হাত-পা বাঁধা ছিল কাপড়ে। এমনকি, মুখ-চোখও বাঁধা ছিল। প্রিয়াঙ্কার আবার এ বছরের শেষে বিয়ে হওয়ার সব পাকা কথা হয়েছে গত মাসে। আর নারায়ণী দেবীর দেহ পড়েছিল দোতলারই একটি ঘরের মধ্যে।

নারায়ণী দেবী (৭৭)
ভবনেশ (৫০) সবিতা (৪৮) মীনু (২৩) নিধি (২৫) ধ্রুব (১৫)
ললিত (৪৫) টিনা (৪২) শিবম (১৫) প্রতিভা (৫৭) প্রিয়াঙ্কা (৩৩)

পুলিশ তদন্তে নেমে প্রাথমিক মনে করেছিল, এটি গণ আত্মহত্যার ঘটনা। পরে তদন্ত যত এগিয়েছে, তাদের ধারণা বদলেছে। একটা সময় তারা জানিয়ে দেয়, এটি মনে হচ্ছে খুনের ঘটনা। পরিবারের কোনও এক জন সকলকে খুন করে পরে নিজে আত্মঘাতী হয়েছে। তাদের আরও যুক্তি ছিল, নারায়ণী দেবী বয়স্ক বলে তাঁর দেহ আর ঝোলাতে পারেনি খুনি। তাই তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।

আবারও এক বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার পুরুলিয়ার, এ বার পুলিশ সুপার বদল

কিন্তু, এ দিন রাতে পুলিশ বেশ কিছু কাগজপত্র উদ্ধার করে ভাটিয়াদের বাড়ি থেকে। সেই সব কাগজে লেখা রয়েছে, কী ভাবে এই ‘নশ্বর দেহ’কে রূপান্তর করতে হয়। এমনকি, মৃত্যু যে আসলে শরীরে হয়, আত্মার কোনও পরিবর্তন হয় না, সে সবই নাকি লেখা রয়েছে ওই সব কাগজে। তার থেকেই পুলিশের ধারণা, ধর্মীয় কোনও কিছু দ্বারা প্রভাবিত হয়েই ভাটিয়া পরিবার নিজেদের শেষ করেছে।

তবে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ওই পরিবার নিজেদের বাড়ির গায়ে ধর্মীয় উক্তি, গীতার শ্লোক— ইত্যাদি লিখে রাখত। তবে, কোনও ধর্মীয় গুরু বা বাবাকে কোনও দিন ওই বাড়িতে ঢুকতে দেখেননি তাঁরা। পুলিশ যদিও গোটাটাই খতিয়ে দেখছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার অপেক্ষায় রয়েছে তারা।