পাকিস্তানে ঢুকে হামলা, জইশের প্রশিক্ষণ ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিল ভারতীয় বায়ুসেনার বোমারু বিমান

পাকিস্তানে ঢুকে হামলাপাকিস্তানে ঢুকে হামলা

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: পাকিস্তানে ঢুকে হামলা চালাল ভারতীয় বায়ুসেনা। মঙ্গলবার ভোররাতে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে মূল পাক ভূখণ্ডে ঢুকে জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষণ ঘাঁটি ধ্বংস করে বায়ুসেনার বোমারু বিমান। এমনটাই দাবি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

পুলওয়ামা হামলার ঠিক ১২ দিনের মাথায় মূল পাক ভূখণ্ডে বিমানহানা চালানো হল। ভারতীয় সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ বায়ুসেনার ১২টি মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান হামলা চালায় পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোটে। মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যেই বোমা ফেলে নিরাপদে দেশে ফিরে আসে মিরাজ। এই হামলায় ৩০০ জন জঙ্গি মারা গিয়েছে বলে ভারতীয় বিদেশসচিব বিজয় গোখলে দাবি করেছেন।

বালাকোটে যে ৩০০ জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারের শ্যালক মৌলানা ইউসুফ। এই ইউসুফ প্রায় ২০ বছর আগে ভারতীয় বিমান ছিনতাই করে কন্দহরে নিয়ে যাওয়ার মূল চক্রি ছিল। মুক্তিপণ হিসাবে সে মাসুদ আজহারকে ভারতের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

কিন্তু কেন বালাকোট? তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিদেশ সচিব বিজয় গোখলে। মিরাজ হামলার পর তিনি সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা সূত্রে ভারতের কাছে খবর ছিল, বালাকোটের ওই জঙ্গি কেন্দ্রে জইশের জঙ্গি প্রশিক্ষকরা ভারতে ফের আত্মঘাতী হামলার জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সে কারণেই হামলা চালিয়ে তাদের নিকেশ করা হয়েছে বলে বিজয়ের দাবি।

বায়ুসেনা সূত্রে জানানো হয়েছে, আগরা, গোয়ালিয়র, অম্বালার মতো ঘাঁটি থেকে উড়েছিল যুদ্ধবিমানগুলি। জঙ্গি শিবির ধ্বংসে ব্যবহার করা হয়েছে কয়েক হাজার কিলোগ্রাম বোমা। তবে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছে, নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে শুধু জঙ্গি শিবিরেই আক্রমণ করা হয়েছে। কোনও সামরিক ঘাঁটিকে নিশানা করা হয়নি। এমনকি সাধারণ মানুষকেই লক্ষ্য করা হয়নি বলেই দাবি। বিপক্ষের সামরিক ঘাঁটিতে সেনা অভিযান হলে সেটা যুদ্ধ হিসেবে গণ্য হয়। তাই এটা যুদ্ধ নয়, বরং আত্মরক্ষা করতেই আক্রমণ বলেই দাবি বিদেশ মন্ত্রকের।

রাজৌরি-পুঞ্চ সীমান্ত থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বালাকোট নামে আরও একটি জায়গা রয়েছে। প্রথমে ভাবা হয়েছিল সেখানে হামলা চালিয়েছে বায়ুসেনা। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রক পরে জানিয়েছে, সীমান্ত থেকে ৮০ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে ওই হামলা চালানো হয়েছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, ভারতের যুদ্ধ বিমানগুলি নিয়ন্ত্রণরেখা পার হতেই পাল্টা আকাশে ওড়ে পাক বিমান। তাতে ভারতীয় বিমানগুলি ফিরে যায়। যাওয়ার পথে বোমা ফেলে যায়। তাতে কোনও জীবন বা সম্পত্তি হানি হয়নি বলেই তাদের দাবি।

জইশ-ই-মহম্মদের প্রশিক্ষণ ঘাঁটি ধ্বংস হওয়ার পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সবিস্তার রিপোর্ট দেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। ভোররাতের ওই হামলার পর সকালে নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠক বসে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। এর পর প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছন। সেখানে এ দিন গান্ধী শান্তি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান ছিল। মোদী একটু দেরিতেই পৌঁছন। অন্য কাজে ব্যস্ত থাকার কথা বলে তিনি দেরি হওয়ার জন্য ক্ষমাও চেয়ে নেন। কিন্তু, বিমানহানা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।

কাশ্মীরিদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী: লড়াই কাশ্মীরের জন্য, কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে নয়

এর পরেই তিনি রাজস্থানে পৌঁছন। সেখানকার চুরুতে একটি সভা ছিল। সেই সভা থেকেই এই বিষয়ে প্রথম মুখ খোলেন। দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তিনি বলেন, ‘‘দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি, দেশ নিরাপদ হাতে রয়েছে।’’ এর পরে যোগ করেন, ‘‘সৌগন্ধ মুঝে ইস মিট্টি কি, ম্যায় দেশ নহি মিটনে দুঙ্গা, ম্যায় দেশ নহি রুকনে দুঙ্গা, ম্যায় দেশ নহি ঝুকনে দুঙ্গা।’’

দেখুন মোদীর সেই ভাষণ…

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)